• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ছোট ছোট মহৎ চেষ্টায় বড় অর্জন সম্ভব

অনেক গুণীজন শিশুদের নিয়ে লিখেছেন বিভিন্ন উক্তি

মতামত

ছোট ছোট মহৎ চেষ্টায় বড় অর্জন সম্ভব

  • প্রকাশিত ১০ আগস্ট ২০১৮

শিশুদের হাসি আমাদের আনন্দ দেয়। তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি সমাজ, রাষ্ট্র ও সুন্দর পৃথিবীর। একটি শিশু, একটি সমাজের রঙিন ঘুড়ি। মানুষের জন্য সে হবে ভবিষ্যতের আলোর দিশারি।

শিশুরা পবিত্র, নিষ্পাপ। অনেকে শিশুদের ফেরেশতার সঙ্গে তুলনা করেন। অনেক গুণীজন শিশুদের নিয়ে লিখেছেন বিভিন্ন উক্তি। যেমন- শিশুদের মন ফুলের মতোই সুন্দর; শিশুরা নরম মাটির মতো, এদের যেভাবে গড়া হবে তারা তেমন রূপই ধারণ করবে। আজ সেই শিশুদের একটি অংশকে আমরা অবহেলা করছি। এমন অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে অনেক শিশুর জীবন। অনেক শিশুর জীবন ধাবিত হচ্ছে অনিশ্চিত গন্তব্যে। এদেশে দরিদ্র পরিবারের শিশু আর পিতৃ-মাতৃহীন এতিম শিশুরাই অধিকারবঞ্চিত। অথচ সব শিশুর স্বাভাবিক ও সুন্দর শৈশবের নিশ্চয়তা তার জন্মগত অধিকার।

দেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা এখন কম নয়। অনেক অধিকারবঞ্চিত শিশুকে একটি মহল ব্যবহার করছে সমাজবিরোধী নানান কাজে। দু’মুঠো ভাত খাওয়ার আশায় এতিম শিশুদের অনেককেই নিদারুণ কষ্ট করতে দেখা যায়। শিশুদের দুঃখ-কষ্টের কথা ভেবে অনেক বছর আগে ব্যথাতুর হূদয়ে কবি সুকান্তকে বলতে হয়েছিল, ‘সব চেয়ে খেতে ভালো লাগে মানুষের রক্ত।’ মানুষ আজ লোভী পশুর মতোই মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। মানুষের অর্থলালসার রাজ্যে ফুলের মতো পবিত্র শিশুদেরও মুক্তি নেই। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারগুলো তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে সন্তানদের আগলে রাখতে বা অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে। কিন্তু দরিদ্র ও এতিম শিশুদের বেলায় সেটা উল্টো। বেঁচে থাকার জন্য অনেক শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম দিতেও দেখা যায়।

একশ্রেণির স্বার্থান্ধ মানুষ শিশুদের কলকারখানায় নিয়োগ করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করে চলছে। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মহাজনরা তাদের কাজ হাসিল করে থাকে। তাকে থামানোর মতো যেন কেউ নেই। তবে এটুকু সহজে বলা যায়, আজ যারা পথশিশু বা শিশুশ্রমিক তাদের যেন প্রকৃতি নেই, পরিবেশ নেই, অবুঝ শৈশবও নেই। পরিবারের অর্থ জোগান দেওয়া এবং নিজেদের ক্ষুধা নিবারণ করতেই অনেক দরিদ্র বাবা-মা শিশুদের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করছে। সারাদিন চৌদ্দ থেকে ষোলো ঘণ্টা কাজ করে অনেক শিশুশ্রমিক যা আয় করে, তাতে তার নিজের আহারের সংস্থানও হয় না। অদক্ষ শ্রমিক বলে নেই তাদের নির্দিষ্ট মজুরি। সামান্যতম অমনোযোগের অভিযোগে লাথি ও বেত্রাঘাত সহ্য করতে হয় তাদের। কর্মস্থলে অনেক শিশুশ্রমিকের চোখের জল গড়ায়। সেখানে মমতা আর সান্ত্বনা দেওয়ারও কেউ নেই। এভাবেই নিষ্ঠুর আচরণে বেড়ে উঠছে হাজার হাজার শিশু। এর প্রধান কারণ দরিদ্রতা আর শিশুদের প্রতি অবহেলা। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে শিশুদের এক বিরাট সংখ্যা, যা আমাদের জন্য লজ্জার। শিশুশ্রম নিরসন ও শিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে শিশু বাজেট প্রণয়নের দাবির মুখে গত দুই অর্থবছরে পৃথক বরাদ্দ রাখা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো শিশুদের জন্য পৃথক বরাদ্দ রাখা হয় ৫০ কোটি টাকা। এরপর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয় ১০০ কোটি টাকা।

শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা এনজিও ও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শিশুদের জন্য পৃথক এই বরাদ্দ দেন। বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হলেও সঠিক কর্মপরিকল্পা না থাকায় সেই টাকা খরচ করতে পারেনি কোনো মন্ত্রণালয়। এমন দাবি করেন সংসদ সদস্যদের অনেকে। এখন প্রশ্ন জাগে, শিশুদের নিয়ে পরিকল্পনার অভাবেই কী লাখ লাখ শিশুর ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে? আমি ব্যক্তিগত জীবনে একজন শিশুশ্রমিক, আমি আমার জীবনের বাস্তবতা থেকে বলি— আমরা শিশুশ্রমিকরা একদম ভালো নেই। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে বিত্তবানদের গৃহে শিশু নির্যাতন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব গৃহে কাজের ছেলে বা মেয়ে হিসেবে যারা কাজ করে তারা সামান্য অপরাধের জন্য অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়। এসব মানুষরূপী পশুদের কাছ থেকে শিশুদের রক্ষা করা জরুরি।

শিশুশ্রম কারো কাম্য নয়। তবে কেন এমন হয়, এমন প্রশ্নে গুণীজনরা বলেন, সমাজে বিচারহীনতা, বিভিন্ন স্তরে শক্তি ও ক্ষমতার অপব্যবহার, মানুষের মধ্যে মমত্ববোধের অভাবের কারণে এমন নিষ্ঠুর ঘটনাগুলো ঘটছে।

শিশুশ্রম রোধে সরকার আন্তরিক থাকা সত্ত্বেও শিশুশ্রম বন্ধ হচ্ছে না। আমরা সচেতন মানুষগুলো কেনইবা শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকব, শিশুশ্রম রোধে আমাদের কি কোনো দায়িত্ব কর্তব্য নেই! কথায় বলে ছোট ছোট মহৎ চেষ্টা যদি একটু সুনজরে দেখা হয়, তাহলে অনেক বড় অর্জনও সহজ হয়ে যায়।

মো. শামীম মিয়া

শিশু শ্রমিক

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads