• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ

বাংলা, বাঙালি, বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু যেন একই সূত্রে গাঁথা

সংরক্ষিত ছবি

মতামত

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ

  • প্রকাশিত ১২ আগস্ট ২০১৮

অমিত বণিক

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধু বললেই একটি দেশ, আর বাংলাদেশ বললেই একটি ছবি ভেসে ওঠে সবার সামনে। ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি।’ কথাটা এখন কিংবদন্তি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এমন একজন মানুষ, যিনি নিজের জীবনকে নানাভাবে সাজিয়েছিলেন এবং হাসিমুখে জীবনটা বাঙালি জাতিকে দানও করে গেছেন। আমাদের চারপাশে তাকালে দেখব কেউ অর্থের পেছনে ছুটে হয়রান, কেউ বা সাফল্যের পেছনে ছুটে, কেউ বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ির পেছনে কিংবা শ্রেষ্ঠত্বের পেছনে দৌড়াচ্ছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এসবের কোনোটার পেছনে কোনোদিন ছোটেননি। তিনি ছুটেছেন বাঙালির অধিকার আদায়ের পেছনে, বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের পেছনে। তার সব চিন্তা ও কর্মের মূলে ছিল বাংলার মানুষের মুক্তি। তাই তো তিনি বাঙালি জাতির পিতা, বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা, বাঙালি জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন।

টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া শেখ মুজিব স্কুলজীবন থেকেই ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। তিনি যখন গোপালগঞ্জ স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়েন, তখন গোপালগঞ্জে এক জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সভায় বক্তা ছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। কিন্তু গোপালগঞ্জের এসডিও কোনোভাবেই সভা করতে দেবেন না। প্রতিবাদ জানালেন কিশোর মুজিব। অতঃপর যা হওয়ার তা-ই হলো। কিশোর মুজিবের সাত দিনের জেল হলো। সেই থেকেই তার পরিচিতি বেড়ে গেল। সারা গোপালগঞ্জে তখন একটাই নাম লোকমুখে মুজিব আর মুজিব। এই ব্যাপক পরিচিতির সুবাদেই তার রাজনীতির পথ প্রশস্ত হতে থাকে। তিনি ১৯৪০ সালে ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম স্টুডেন্টস ফেডারেশন’ এবং ‘অল বেঙ্গল মুসলিম স্টুডেন্টস লীগে’র কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। একই সময়ে তিনি গোপালগঞ্জ মুসলিম লীগের মহকুমা শাখার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪২ সালে এনট্রান্স পাস করার পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে আইন পড়ার জন্য ভর্তি হন। এই কলেজে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো ব্যাপকতা লাভ করে।

১৯৪৭ সালে তিনি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন এবং এ বছরই মুসলিম লীগ ত্যাগ করেন। এ সময় তিনি বার্নার্ড শ, কার্ল মার্কস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের লেখার সঙ্গে পরিচিত হন। তাদের লেখা পড়ে তিনি নিজেকে আরো শাণিত করতে সক্ষম হলেন। বুঝতে পারলেন নিজ জাতির অধিকার আদায়ের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে। দেশভাগের কারণে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। এখানে এসে তিনি আবিষ্কার করেন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক আধিপত্যের বেড়াজাল। এই আধিপত্যের বেড়াজাল ছিন্ন করতে তিনি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেই সংগ্রামের প্রথম ধাপ ভাষা আন্দোলন। এই ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই বাঙালি তার মুক্তির স্বাদ প্রথম খুঁজে পেল। তাই শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি সবকিছুর অধিকার আদায়ে সোচ্চার হলো পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটি মানুষ। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে লাহোরে ঘোষণা করলেন বাঙালির মুক্তির রূপরেখা ছয় দফা দাবি। এই দাবিতেই ছিল বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্রসমূহ। এই ছয় দফা দাবি ১৯৬৯ সালে ১১ দফা দাবির আকারে পেশ করা হয়। এ বছরেরই ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রায় দশ লাখ জনতার সামনে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। আর একাত্তরের ৭ মার্চের ভাষণ তো বাঙালির মুক্তির সনদ। বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে। যার ফল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে একটি ‘প্রিয় বাংলাদেশ’ অর্জন।

বাংলা, বাঙালি, বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু যেন একই সূত্রে গাঁথা। তিনি বাঙালিকে, বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। কিন্তু সেই ভালোবাসাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে গড়ে তোলার কাজে ব্যস্ত, ঠিক তখনই একদল বিশ্বাসঘাতক নরপশু হত্যা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সবাইকে। বাংলার আকাশে যেন নেমে এসেছিল কালো আঁধার। সেই কালো আঁধার এখনো কাটেনি। বঙ্গবন্ধু নিজের জীবন দিয়ে তার প্রমাণ দিয়ে গেলেন। তিনি দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। আমরা বিশ্বাস করি, জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বৃথা যেতে পারে না। তার এই অসম্পন্ন কাজটি তারই উত্তরসূরিরা সুচারুভাবে করে যাবে, এটাই প্রত্যাশা। যেভাবে বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাংলার মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেভাবে সবাই মিলে এগিয়ে এলেই সব বাধা পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা নির্মাণ সম্ভব বলে মনে করি। অন্নদা শঙ্কর রায়ের কবিতার কয়েকটি লাইন দিয়ে শেষ করব— ‘যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরি মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’

লেখক : নিবন্ধকার      

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads