• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সতর্কতা গ্রহণ করুন

সারা দেশে এক কোটির বেশি পশু জবাই হয়

সংরক্ষিত ছবি

মতামত

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সতর্কতা গ্রহণ করুন

  • প্রকাশিত ১৯ আগস্ট ২০১৮

সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটলান্টিস দ্যা পাল্ম জুমেরাহ নামক বিশ্বের বিখ্যাত একটি প্রতিষ্ঠানে রিক্রিয়েশন ডিপার্টমেন্টে টিম লিডার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতায় সে দেশের পরিবেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা হয়। ওইসব দেশে গাছগাছালি না থাকায় এবং তাপমাত্রা বেশি থাকায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন অসহনীয়। অনেক প্রতিকূলতা ও কঠিন নিয়মকানুনের মাঝে চলাফেরা করতে হয়। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রায় সবসময় রাষ্ট্র ও জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার হয়। সবার চেষ্টায় সুসজ্জিত দেশটিতে বেশ জাঁকজমকভাবে দুটি ঈদই উদযাপন হয়। ঈদুল আজহার সময় পশু জবাইয়ের পর দেশটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দারুণ। কোথাও বর্জ্যের লেশমাত্র নেই। দুর্গন্ধ নেই, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রয়েছে। সুরক্ষিত পরিবেশ ও ঈদ আনন্দে উল্লাসে মেতে ওঠে মানুষ। ছোট-বড় হোটেলের ইনডোর সুইমিং পুলগুলোতে যুব নারী-পুরুষের খোলামেলা চালচলন ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপকে হার মানায়। আর আমাদের বাংলাদেশে ঈদের পর অন্তত সপ্তাহ খানেক নাকে তুলা দিয়ে হাঁটতে হয় দেশের সর্বত্র। কোরবানির মাঠগুলোতে বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা যায়। রাষ্ট্রযন্ত্রকে এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে দেখা যায় না। সে কারণেই হয়তো বাংলাদেশে শোচনীয় বায়ুদূষণ রয়েছে।

এখানে স্মরণযোগ্য যে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরিবেশবিষয়ক সংস্থা ইপি’র প্রতিবেদনে বাতাস দূষিত দেশের মধ্যে নেপালের পরই বাংলাদেশের অবস্থান উল্লেখ করা হয়েছে। আবার বোস্টনভিত্তিক হেল্থ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি ২০১৭ প্রতিবেদনে বায়ুদূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়।

বাংলাদেশে প্রতিবছর দুটি ঈদে, বিশেষ করে ঈদুল আজহায় পাক-পবিত্র হয়ে নামাজের পর কোরবানির মাঠে পশু জবাই দিতে যায় মুসল্লিরা। সারা দেশে এক কোটির বেশি পশু জবাই হয়। কোটি কোটি মুসল্লি ও চামড়া ব্যবসায়ীরা সম্মিলিতভাবে কোরবানির মাঠে পশু জবাই কাজে অংশগ্রহণ করে। মাঠে আলেম ওলামায়ে কেরাম ছাড়াও অনভিজ্ঞ মানুষকে পশুর গলায় ছুরি ধরতে দেখা যায়। বেশিরভাগ কোরবানির মাঠে শিশু, যুবক ও বয়ঃবৃদ্ধরা অংশগ্রহণ করেন। নারীরা বাড়ির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মাঠের বৈচিত্র্যময় কর্মকাণ্ডে অনেকেই নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হন। সারা দেশে অপরিকল্পিতভাবে পশু জবাইয়ের সময় পশু ছুটে গিয়ে চড়াও হয় গ্রামবাসীর ওপর- এমনও খবর পাওয়া যায়। এতে চলে যায় অনেকের তাজা প্রাণ। বিশেষ করে মহিষের আক্রমণে এসব মৃত্যুর ঘটনা বেশি শোনা যায়। গাজীপুর ও তার আশপাশে পরপর কয়েক বছর কোরবানির পশুর আক্রমণে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এছাড়া কোরবানির পর পশুর অবশিষ্ট চামড়া, পাকস্থলীর গোবর, পায়ের শেষাংশ, মাথা ও দাঁতের ধারালো অংশ যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যায়। বাতাসে ভেসে আসা দূষিত বর্জ্যের গন্ধে অনেককে অসুস্থ হতে দেখা যায়।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এক কোটি পাঁচ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। এ বছর এক কোটি ষোলো লাখের হিসাব ধরা হয়েছে। কোরবানি মাঠের এই দুরবস্থা নিরসনে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন আপামর জনগণ। প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সারা দেশে স্থায়ী ও অস্থায়ী কোরবানির মাঠগুলোর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সরকারের দিকনির্দেশনায় উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও গ্রামভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো কোরবানির মাঠের সুব্যবস্থাপনায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। ঈদুল আজহায় ইতোমধ্যে সরকার কিছু ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এবার ঈদুল আজহায় সড়ক-মহাসড়কে যাত্রীসাধারণের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ। যাত্রী চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদর দফতর থেকে হাইওয়ে ও ৬৪ জেলার পুলিশকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। তাছাড়া এবার সড়কে বড় ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবেলা এবং দুর্ঘটনার পর উদ্ধারে বিমান, সেনাবাহিনী, র্যাবসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা আশা করি, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় পরিবেশ সুস্থ রাখতে পশু কোরবানির মাঠকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হবে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নেওয়া হবে সতর্কতা।

মন্জুরুল হক

শিক্ষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads