• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বাংলাদেশ রেলওয়ে

স্বাধীন দেশের রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের দুরবস্থা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না

মতামত

ভিন্নমত

বাংলাদেশ রেলওয়ে

  • মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২৬ আগস্ট ২০১৮

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আরামদায়ক ও তুলনামূলক নিরাপদ হওয়ায় রেলভ্রমণে যাত্রীদের আগ্রহ শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর সব দেশেই বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে ১০ কোটির অধিক যাত্রী পরিবহন করেছে। সড়কপথে যানজট ও পথে পথে বিড়ম্বনার কারণে ইদানীং মানুষ রেলপথে যাতায়াত পছন্দ করে। যাত্রীদের আগ্রহ থাকার কারণে রেলওয়ের যে সেবাটুকু দেওয়ার কথা, তা এখনো দিতে পারছে না। তারপরও রেলওয়ে লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের দাবি করে থাকে। রেলওয়ের নিজস্ব অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং প্রতারণার মাধ্যমে তাদের সম্পদ আজো হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। অথচ এখনো রেলওয়ে এককভাবে বেশি সম্পত্তির মালিক। বিশ্বের সব দেশে এমনকি প্রতিবেশী ভারতেও রেলওয়ে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য। বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের সব দেশে রেলওয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ রেলওয়ের সর্বক্ষেত্রে, যেমন— টিকেট বিক্রির ক্ষেত্রে কালোবাজারি, আবার রেলভ্রমণে দেখা যায় টিকেটবিহীন অসংখ্য যাত্রী। যেন দেখার কেউ নেই। এই প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি দখল ও বেহাত হওয়ার পেছনে সংস্থাটির দায়িত্বশীল মহলের জড়িত থাকাটাই স্বাভাবিক। নিয়োগ থেকে শুরু করে রেলওয়ের নির্মাণ ও মেরামতসহ নানা কাজে জেঁকে বসেছে ভয়াবহ দুর্নীতি। রেলওয়ের লোকসানের অন্যতম কারণ হচ্ছে রেললাইন নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি গড়ে ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়, যা বিশ্বে সর্বোচ। প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানে এ কাজে গড়ে যথাক্রমে ১২ ও ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে রেলওয়ের উচিত তাদের সম্পদ ও সম্পত্তি কঠোরভাবে রক্ষা করা, দুর্নীতি-অনিয়ম প্রতিরোধ এবং তেলের পরিবর্তে ইলেকট্রিক ট্রেন চালু করা। তাহলে রেলওয়েকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।

একটি স্বাধীন দেশের রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের দুরবস্থা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। বর্তমানে যাত্রীসংখ্যার প্রেক্ষিতে কমলাপুর রেলস্টেশন বড় থেকে ছোট হয়ে আসছে। সকাল ও রাতে যাত্রীদের পক্ষে স্টেশনের ভেতরে ঢুকে ট্রেন ধরা বড়ই কষ্টকর। কারণ গোটা কমলাপুরজুড়ে ছিন্নমূল লোকজন ও হেরোইন সেবকদের যত্রতত্র ঘুমিয়ে থাকতে দেখা যায়। টিকেটের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পরও রেলওয়েতে সেবার মান সামান্যটুকু বাড়েনি। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনটির চারদিক সংরক্ষিত না থাকায় হকার, ভিক্ষুক, ফেরিওয়ালা, ছিঁচকে চোর ও হেরোইনসেবীদের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই কমেনি। নিরাপত্তার দিক থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের সামগ্রিক চিত্র শূন্য। স্টেশনে রেলওয়ে পুলিশের ভূমিকা নীরব ও নির্বিকার। একটি সংঘবদ্ধ দল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের টিকেট বিক্রি জিম্মি করে রেখেছে। লম্বা লাইন ধরে টিকেট কিনতে গেলে ঠিক কাউন্টারের সামনে  যাওয়া মাত্র বলা হয়ে থাকে টিকেট নেই। এ দুর্ভোগ কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। অথচ দালালদের কাছে সব ট্রেনের টিকেট অতিরিক্ত টাকায় সহসাই পাওয়া যায়। স্টেশন মাস্টার কাউন্টারের লোকদের কষ্ট কখনো দেখতে আসেন না। আবার পরিবেশগতভাবে নোংরা, অপরিচ্ছন্ন এবং দুর্গন্ধে ভরপুর গোটা কমলাপুর স্টেশন। যাত্রীদের সুবিধার্থে এর পরিধি আরো বাড়ানো দরকার।

অন্যদিকে টিকেট কাউন্টারের স্বল্পতায় যাত্রীদের দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা বেড়েই চলেছে। টিকেট বিক্রির স্থানে যাত্রীদের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত ফ্যান এবং বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত চেয়ার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা দরকার। টিকেট ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ কেন্দ্র না থাকায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। ট্রেনে বিনা টিকেটের যাত্রীসংখ্যা যথেষ্ট। তবে এক্ষেত্রে ট্রেনের অ্যাটেনডেন্ট দ্বারা আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে বিনা টিকেটের যাত্রী ওঠানো নিয়ে অহরহ যাত্রীদের সঙ্গে ঝগড়া করতে দেখা যায়। টিকেট চেকার বা টিটিরা বিনা টিকেটের যাত্রীদের প্রশ্রয় দিয়ে আসছেন। ট্রেনে ওঠানামা করতে বয়স্ক বা অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য কোনো কার বা ছোট গাড়ি নেই। এ ছাড়া কলকাতা-ঢাকা ফিরতি টিকেট বিক্রির ব্যাপারে যথেষ্ট অভিযোগ রয়েছে। কমলাপুর ছাড়াও বনানী, গেণ্ডারিয়া, নারায়ণগঞ্জ ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকার টিকেট কেনার সুযোগ প্রবর্তন করলে শুধু দুর্ভোগ নয়, সময় বাঁচবে এবং বিড়ম্বনাও কমবে। উপরন্তু একত্রে চারটি পাসপোর্টের অধিক টিকেট বিক্রির ব্যাপারে বিধিনিষেধ একেবারে অযৌক্তিক। এই আন্তর্জাতিক টিকেট কাউন্টারের কী দুরবস্থা! ফ্যান নেই, চেয়ার নেই, পর্যাপ্ত আলো নেই। তারপরও এ কাউন্টারে প্রচুর ভিড় দেখা যায়।

মূলত কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কোনো শৃঙ্খলা নেই। নেই কোনো ন্যূনতম নিরাপত্তার চিহ্ন। এক্ষেত্রে রেলওয়ে পুলিশের অবহেলা-উদাসীনতা লক্ষণীয়। এ অবস্থায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনটি আধুনিকীকরণ, দুর্ভোগ লাঘবের জন্য কাউন্টার বাড়ানো, অপরিচ্ছন্নতা দূর করা, হেরোইনসেবী, বহিরাগত, হকার ও টিকেট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। মহিলা-পুরুষ টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি কলকাতাগামী ট্রেনের টিকেট কাউন্টার আরো বাড়ানো দরকার। টিকেট কাউন্টার ও টিকেট ব্লাকারদের মধ্যকার সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। পর্যাপ্ত ট্রেন ও ট্রেনের টিকেট চাই। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ রেলওয়ের সেবার মান বাড়ানো খুবই জরুরি। তাই রেলপথ মন্ত্রণালয়কে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনটিকে যাত্রীসেবার মানের দিক দিয়ে বিশ্বের আধুনিকতম স্টেশনে রূপান্তরিত করতে আহ্বান জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ আমাদের সবাইকে রেলওয়ের সব ধরনের দুর্নীতি প্রতিরোধে একযোগে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। এখন সেদিকেই আমাদের দ্রুত মনোনিবেশ দরকার।

 

লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads