• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ভিন্ন সত্তার সাংবাদিক সাইফুল আলম মুকুল

সাংবাদিক, কবি ও সমাজসংস্কারক সেই মুকুল

সংগৃহীত ছবি

মতামত

ভিন্নমত

ভিন্ন সত্তার সাংবাদিক সাইফুল আলম মুকুল

  • প্রকাশিত ৩০ আগস্ট ২০১৮

সাইফুর রহমান সাইফ

জীবিত অবস্থায় তিনি ছিলেন যশোরের মানুষ। তার পরিচিতি ছিল যশোরে। অবশ্য দেশের নানা জায়গার সংবাদপত্রের মানুষ তাকে চিনতেন তার বলিষ্ঠ লেখনীর কারণে। এ মানুষটিকে মৃত্যুর পর চিনলেন পুরো দেশবাসী। এমনকি দেশের বাইরের মানুষও।

আলোচিত এ মানুষটির নাম আরএম সাইফুল আলম মুকুল। যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক রানারের নিহত সম্পাদক। তার বাবা গোলাম মাজেদও নিহত হন। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময় তার ওপর নির্যাতন হয়। এ নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয় বলে মনে করা হয়। মুকুলের ছেলে তানভীর হাসান অঞ্জনেরও অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ২০০৭ সালের ৯ জুলাইয়ের। তাকে হত্যা করা হয় বলে স্বজনরা মনে করেন। সে হিসেবে পরিবারটির তিন প্রজন্ম হত্যার শিকার। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা।

১৯৯৮-এর ৩০ আগস্ট রাত ১০টার পর নিজ বাড়ি যশোর শহরের বেজপাড়া চিরুনিকলের পাশে রানার সম্পাদক আরএম সাইফুল আলম মুকুলকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদ হয়। প্রতিবাদ হয় দেশের বাইরেও। কিন্তু সে হত্যার এখনো বিচার হয়নি।

দেশে যশোরের সাংবাদিকতার সুনাম আছে। সে সুনাম এখানকার সাংবাদিকদের তেজের কারণে। এখানকার কোনো সাংবাদিকের মধ্যেই দুর্নীতি নেই এ কথা বলা না গেলেও এটুকু সত্যি যে, যশোরের সাংবাদিকরা নীতি-নৈতিকতা খুইয়ে সাংবাদিকতা করেন না। তারা কালোকে কালো বলতে পারেন। বলতে পারেন সাদাকে সাদাও।

মুকুলের পরিবারে কালোকে কালো বলার ছিল দুর্দান্ত সাহস। তারা যে জিনিসটিকে খারাপ বলে মনে করেছেন, তার বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। এ খারাপ মনে করার বিষয়টি অবশ্য ছিল তাদের ব্যক্তিগত। এ কারণে তাদের কাছে যা কালো বলে মনে হয়েছে, তা যে সবসময়ই কালো ছিল তা হয়তো নয়। তারা যাকে কালো মনে করেছেন তা হয়তো কখনো সাদাও ছিল। কিন্তু যে বিষয়টি মুকুল বা গোলাম মাজেদ নেতিবাচক মনে করতেন, তার বিরুদ্ধে লড়তে কখনো পিছপা হতেন না। এটাই ছিল মুকুল বা তার বাবার আদর্শ। মুকুলের ভাই আরএম মঞ্জুরুল আলম টুটুলও এ মানসিকতার ছিলেন।

আরএম সাইফুল আলম মুকুল সাংবাদিকতায় একটা ভিন্নমাত্রা দিয়েছিলেন। একে বিদ্রোহী সাংবাদিকতা বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি সমাজকে শোধরানোর কাজও করতেন। তারই ধারাবাহিকতায় এখন যশোর শহরে শান্তি-শৃঙ্খলা কমিটি আছে। এ কমিটি সমাজকে কোন পথটি ভালো তা দেখিয়ে দেওয়ার কাজ করে। এ ধরনের কমিটি দেশের আর কোথাও আছে কিনা আমার জানা নেই।

এসবের বাইরেও মুকুলের আরো একটি পরিচয় ছিল। তার ভেতর লুকিয়ে ছিল এক কবিসত্তা। এ বিষয়টি কখনো কেউ জানত না। হঠাৎ একদিন যশোরের মানুষ জানল রানার সম্পাদক মুকুল একজন কবিও। ‘দূর নির্বাসনে যাও’ শিরোনামে লেখা তার কবিতাটি হঠাৎ আলোড়ন তোলে। এ কবিতাটি লিখে তিনি আকস্মিক হারিয়ে যান। কয়েকদিন তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না।

কবিতাটি শুধু কবিতা ছিল না। জসীম উদ্দীনের খ্যাতনামা সব কবিতার মতো তার কবিতাও কাহিনীনির্ভর। এ কবিতায় মুকুল বনের পশু আর মানুষের ফারাক তুলনা করেন। তিনি বলেন, পশুরাও কিছু নিময়নীতি মেনে চলে। কিন্তু আমরা যারা নিজেদের মানুষ বলে দাবি করি, তাদের ভেতর তাও নেই। তাই বনই ভালো। এ কথার মাধ্যমে তিনি এদেশের ‘ভালো’ মানুষের ভেতরকার মানুষটি কেমন তা বোঝাতে চান। 

সাংবাদিক, কবি ও সমাজসংস্কারক সেই মুকুলের আজ হত্যাবার্ষিকী। এতগুলো বছর পার হলেও তার হত্যার বিচার হয়নি। তাই গতানুগতিক ধারায় তার হত্যার বিচার দাবি করছি। একই সঙ্গে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।

লেখক : সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads