• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বিপর্যয়ের মুখে চামড়া বাণিজ্য

কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্যের ওপর শতভাগ হক হলো গরিব মানুষদের

সংগৃহীত ছবি

মতামত

বিপর্যয়ের মুখে চামড়া বাণিজ্য

  • প্রকাশিত ৩১ আগস্ট ২০১৮

আ ব ম রবিউল ইসলাম

কয়েক বছর আগে একটি উন্নত জাতের গরুর চামড়া বিক্রি হতো কয়েক হাজার টাকায়। এখন সেই উন্নত জাতের গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র কয়েক শত টাকায়। একটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে দশ-বিশ টাকায়। চামড়ার বাণিজ্যে কেন এই বিপর্যয়? কী এমন ঘটনা ঘটল যে, এই ব্যবসার এমন পরিণতি হলো? বিষয়টি ভাবনার। এবারো কোরবানিকেন্দ্রিক চামড়ার বাণিজ্যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পানির দামে চামড়া বিক্রির খবর পাওয়া গেছে।

কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্যের ওপর শতভাগ হক হলো গরিব মানুষদের। ইসলামের বিধান মতে, চামড়ার মূল্যের পুরো অংশটুকু গরিবদের ভাগ করে দেওয়া হয়। বিশেষ এই রফতানি পণ্যের ওপর প্রতিবছরই একটি অবৈধ সিন্ডিকেট কাজ করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) জানাচ্ছে, চামড়া শিল্পের ক্রান্তিকাল চলছে। বেশিরভাগ ট্যানারিতে উৎপাদন নেই। গত বছরের ৪০-৪৫ শতাংশ চামড়া এখনো অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। তারা আরো জানাচ্ছে, সাভারে পরিকল্পিত ট্যানারি শিল্প গড়ে না ওঠার দায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের। ভুল তথ্য দিয়ে ট্যানারি মালিকদের সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখানে যে বিনিয়োগ করেছিল ট্যানারি মালিকরা তা ভেস্তে গেছে। কাঁচা চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করে বিক্রি করতে আসায় দাম পাচ্ছেন না মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এরপরও নির্ধারিত দামে চামড়া কিনবে ট্যানারিগুলো।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, এবার পশুর চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেট চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত তিন দশকে সর্বনিম্ন দরে বেচাকেনা হয়েছে কোরবানির পশুর চামড়া। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, নায্যমূল্যে তো দূরের কথা, কোরবানি দিয়ে পশুর চামড়া অনুনয় করে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে হয়েছে। অবশ্য ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গরুর কাঁচা চামড়ার মূল্য প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ৪৫-৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর খাসি ও বকরির চামড়ার দামও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তারপরও  চামড়ার মূল্যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, এ বছর অনেকের কেমিক্যাল কেনার টাকা নেই। কারণ অনেক উদ্যোক্তা নতুন ট্যানারি শিল্প সাভারে টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এতে অর্থ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, এ বছর চামড়া রফতানি বাণিজ্য বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে চামড়া খাতের রফতানি আয় কমেছে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার। ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর, পরিবেশগত সমস্যা ও কমপ্লায়েন্স না থাকায় বিদেশি অনেক ক্রেতা অন্যত্র চলে গেছেন।

এ ছাড়া চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চীনের বাণিজ্যও কিছুটা কমেছে। চীন চামড়া আমদানির অন্যতম দেশ। এখন সেখানে পণ্যের দাম কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে চামড়া রফতানি নিয়ে অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বাংলাদেশ ও এ শিল্পের মালিকরা।

ঢাকায় গরুর চামড়া গড়ে প্রায় ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে। আর খাসির চামড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিনামূল্যে খাসির চামড়া দিয়ে দিতে হয়েছে। ঢাকার ওয়ারীতে খাসির চামড়া রাস্তায় ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।

বিশ্ববাজারে মূল্য কমে যাওয়ার অজুহাতে গত পাঁচ বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে কাঁচা চামড়ার ক্রয়মূল্য। ২০১২ সালে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার ক্রয়মূল্য ছিল ৯৫-১০০ টাকা। ছয় বছরের ব্যবধানে এবার প্রতি বর্গফুটের দর দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ৫০ আর সর্বনিম্ন ৪৫ টাকায়। এ হিসাবে ছয় বছরে লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৫০ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে।

চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়ার বিল বা চামড়া রফতানি সংক্রান্ত ব্যাংকের এলসি রেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মাসওয়ারি এলসি রেটে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি গরু ও মহিষের চামড়ার গড় রফতানি মূল্য পাওয়া গেছে ২.২৫ মার্কিন ডলার বা ১৮৯ টাকা (প্রতি ডলারে ৮৪ টাকা হিসেবে)। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে দুই ধরনের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হচ্ছে। গত বছর অক্টোবর থেকে চলতি বছর জুন পর্যন্ত সময়ে প্রতি বর্গফুট ক্রাস্ট চামড়ার দাম দেড় থেকে আড়াই ডলার ও ফিনিশড চামড়ার দাম মান ভেদে পৌনে ৩ থেকে ৫ মার্কিন ডলার পর্যন্ত ওঠানামা করছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিশ্বে চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও জুতার বাজার ছিল ২৪৪ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ চামড়া থেকে মোট ১০৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার আয় করে, যা আগের বছর ছিল ১২৩ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ফিনিশড চামড়া থেকে ১৮ দশমিক ৩ কোটি ডলার, চামড়াজাত পণ্য থেকে ৩৩ দশমিক ৬৮ কোটি ডলার ও জুতা রফতানি করে ৫৬ দশমিক ৫৬ কোটি ডলার আয় হয়। বাংলাদেশ থেকে হংকং, চীন, ইতালি, স্পেন, বেলজিয়াম, দক্ষিণ কোরিয়া ও নেদারল্যান্ডসে চামড়া রফতানি হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads