• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
চাকরি প্রতিযোগিতায় ভোগান্তি

লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার অলসভাবে তাদের মূল্যবান সময় ও জীবন পার করছে

সংগৃহীত ছবি

মতামত

ভিন্নমত

চাকরি প্রতিযোগিতায় ভোগান্তি

  • মাহমুদুল হক আনসারী
  • প্রকাশিত ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দেশে এমনিতেই সরকারি চাকরি প্রাপ্তিতে সঙ্কট। দেশের বিভিন্ন সরকারি দফতরে ইতোমধ্যে নানা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার অলসভাবে তাদের মূল্যবান সময় ও জীবন পার করছে। পত্রিকায় দেখা গেছে, একটি সরকারি পদ প্রাপ্তির জন্য শত শত আবেদন জমা হচ্ছে। সেখানে আবার কোটার তালিকায় যারা আছে, তাদের দাবি পূরণ করে যে কয়টা পদ খালি থাকে তার জন্য হাজার হাজার, লাখ লাখ আবেদন জমা হচ্ছে। এমন সংবাদ প্রতিদিন দেশের স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। চাকরির মতো সোনার হরিণ পাওয়ার পেছনে ঘুরবে দৌড়াবে সেটাই স্বাভাবিক। এখানে যে বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে তা হলো— আবেদনকারী প্রার্থী যেভাবে প্রতিষ্ঠান হতে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পত্র পাওয়ার কথা সেভাবে তারা পাচ্ছে না। আবেদন ঠিক থাকলেও যথাসময়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে তাদের কাছে পত্র আসে না। কাউকে যথাসময়ে দেওয়া হয়, কাউকে দেরিতে দেওয়া হয়। পাওয়া তথ্যমতে জানা যায়, শহরে অবস্থানরত যোগাযোগকারী প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রবেশপত্র নিতে বলা হলেও গ্রামের আবেদনকারীদের সময়মতো পত্র পাঠানো হয় না। ফলে গ্রামের একজন প্রার্থী যথাসময়ে আবেদন করলেও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে না। এটা এক ধরনের ভোগান্তি। আবার যে দফতর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সে অফিসের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ ও সম্পর্ক আছে তাদেরকে যথাসময়ে সবকিছু বলে রাখা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশ্নের আগাম তথ্যও দেওয়া হয়। সম্পর্ক এবং আত্মীয়তার কারণে কেউ সবকিছু পাচ্ছে। আবার যাদের পূর্বপরিচিত কেউ নেই, তারা পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পত্র পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে শিক্ষিত বেকার যুবকদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব তৈরি হচ্ছে। তারা নানাভাবে সমাজকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সমাজের প্রতি তারা আস্থাহীন হয়ে পড়ছে। সরকারি চাকরির এসব বিজ্ঞপ্তি দেখে তারা আশান্বিত হওয়ার চেয়ে হতাশ হচ্ছে বেশি। একটা চাকরি পাওয়ার আশায় পরিবারের হাজার হাজার টাকা খরচ করে আবেদন করার পরও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে পরীক্ষায় অংশ নিতে পত্র পর্যন্ত পাওয়া যায় না।

এরপরও দেশের লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার যুবক চাকরি নামের সোনার হরিণ পাওয়ার আশায় আবেদন করেই যাচ্ছে। দেশে যে পরিমাণ চাকরির পদ খালি আছে তার চেয়ে কয়েক হাজার গুণ চাকরিপ্রত্যাশী যুবকের পদচারণায় দেশের মাটি ভারি হয়ে উঠছে। সেখানে তাদের জন্য চাকরির আবেদন নিবেদন দরখাস্ত সহজ না করে কঠিন পদ্ধতিতে আবেদনের ঝামেলায় ফেলে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। সমাজ ও রাষ্ট্র শিক্ষিত যুবসমাজকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। কর্মসংস্থান না পেয়ে তারা এক প্রকারের বিপথগামী হয়ে পড়ছে। চাকরি প্রাপ্তির রাস্তা কোণঠাসা করে তাদের জীবনকে এক ধরনের অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের আবেদন নিবেদন যোগ্যতা মেধা যাচাই বাছাই করে তাদেরকে পরীক্ষায় অংশ নিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পত্র প্রেরণ করতে হবে। সরকারি দফতরের কর্মরত কর্মকর্তাদের দায়িত্বের প্রতি অবহেলা বন্ধ করতে হবে। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ভোগান্তির হাত থেকে শিক্ষিত যুবকদের নিস্তার দিতে হবে। চাকরি পাবে না অথচ উল্টো ভোগান্তি কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়। চাকরি প্রাপ্তি ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেশের সব সেক্টরে দেখতে চাই। দেশে উন্নয়ন দৃশ্যমান হলেও শিক্ষিত যুব সমাজের চাকরির নিয়োগ না হওয়ায়  পারিবারিক ও সামাজিকভাবে দুঃখ-দুর্দশা বেড়ে চলছে। শিক্ষিত যুবসমাজ তাদের শিক্ষা জীবন শেষ করে চাকরির সংস্থান করতে না পারলে পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা আরো বাড়বে। এই অস্থিরতা ও সামাজিক বৈষম্য থেকে যুব সমাজকে মুক্তি দিতে হবে। দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানের পথ খুঁজতে হবে। তাদের মূল্যবান জীবন-যৌবন রক্ষা করা সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কর্মসংস্থান তৈরিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads