• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
মানুষ আবার নদীমুখী

মানুষ আবার নদীমুখী

সংগৃহীত ছবি

মতামত

মানুষ আবার নদীমুখী

  • প্রকাশিত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সাঈদ চৌধুরী

বাংলাদেশের পানির আলাদা সুনাম রয়েছে বিশ্বে। নদীমাতৃক এ দেশের সব সৌন্দর্য নদীকে ঘিরে। একটা সময় বাণিজ্য থেকে শুরু করে সব উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু ছিল নদী ও নদীপাড়ের জনজীবনের বহমানতা। ইতিহাস বলে, আঠারোশ শতাব্দীর আগে ছোট-বড় মিলিয়ে এ দেশে চার হাজারের মতো নদী, শাখানদী ছিল। এত নদীবেষ্টিত দেশের সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নদীকেন্দ্রিক হবে এটাই স্বাভাবিক। এই নদীকেন্দ্রিক জনপদের অধিকাংশ মানুষ খুব সরল এবং এই সরলতার পেছনে নদীকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। নদী হলো মাতৃস্তনের মতো। শিশুরা খুব দুঃখ পেলে যেমন দ্রুত মায়ের কোলে উঠে মায়ের স্তনে মুখ ঠেলে দেয়, তেমনি মানুষ দুঃখ পেলে নদীর পাড়ে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

দুঃখগুলো তখন উবে যায়। বাংলার সঙ্গীতেও এ কারণে নদীর বড় অবদান। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি যেদেশে নদীকেন্দ্রিক, সে দেশের মানুষের নদীমুখী হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমানে আমরা নদী বলতে যা বুঝি, তা কি আদৌ কোনো স্বচ্ছ জলের সরোবর? নব্বই দশকের পর থেকে যখন এ দেশে পুরোপুরি শিল্প বিপ্লব শুরু হয়, তখন থেকেই নদীর ওপর অত্যাচার শুরু। এক এক করে ভূমিখোরদের চোখ পড়ল নদীর দিকে। দখল করে নিতে থাকল চর। আবার শুরু করল নদীর মাঝখানে দখল করে আস্তে আস্তে এগিয়ে তারপর সবটুকু জমি নিজের করে নেওয়ার মতো অপরাধ। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো দূষণও।

বর্তমানে শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও কর্ণফুলী নদীর পানি প্রায় পানির বৈশিষ্ট্যের বাইরে চলে যাওয়া তরলে পরিণত হয়েছে! মানুষ এখন আর নদীতে যেতে চায় না, দেখে না স্বচ্ছ জল আর দুঃখের সময় তারা দুঃখ পুষে রেখে রেখে বাধিয়ে ফেলে বড় ধরনের অসুখ!

পদার্থবিজ্ঞানের একটি সূত্রে চলে যাই। প্রিজমের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বিচ্যুতি কোণের মান আপাতত কোণের ওপর নির্ভর করে একটি সময় কমতে থাকে, কমতে কমতে একসময় শূন্য হয় এবং শূন্য হওয়ার পর তা আবার বাড়তে থাকে। একসময় বাড়তে বাড়তে সর্বোচ্চ চূড়া অতিক্রম করে। আমাদের নদীর প্রতি ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ ও নদীকে নিয়ে ভাবনা সবই কমে গিয়েছিল। নদী আমাদের সঙ্গে জড়িত আমরা এটা ভুলেই গিয়েছিলাম। বিচ্যুতি কোণের মতোই আমরাও নদীকে ভালোবাসা থেকে বিচ্যুত করে ফেলেছিলাম। এখন হয়তো শেষ অবস্থা। যার কারণেই বৈপরীত্য।

এবার ঈদে দেখলাম নদীর প্রতি মানুষের প্রচণ্ড টান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঈদের পর যতদিন খুলেছি, ততদিন দেখেছি নৌকা ভ্রমণের দৃশ্য, ততদিন দেখেছি নদীর পাড়ে গিয়ে মানুষের আনন্দ খোঁজার প্রয়াস এবং প্রতিদিন দেখেছি মানুষ কীভাবে মুক্তবিহঙ্গ হতে চাইছে নদীর মধ্যে নিজেকে সঁপে দিয়ে! খুব বেশি ভালো লাগার ছিল নদী ভ্রমণে গিয়ে রাতযাপনের মতো ঘটনাগুলো দেখে। গাজীপুরের শ্রীপুরের কথা যদি উল্লেখ করি তবে দেখা যাবে, ঈদ আনন্দের অধিকাংশ আনন্দের উপলক্ষ তৈরি হয়েছে এবার এই নদী ভ্রমণের মাধ্যমে। শুধু তা-ই নয়, নদীকে নিয়ে মানুষের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। গাজীপুরের বরমী, গোসিঙ্গা, ধাঁধারচর, শালদহ, লবলং, ফুলবাড়িয়া, মকসবিল তুমুল উৎসবের জায়গায় পরিণত হয়।

এ বিষয়টিই ভালো লাগার। নদীকে নিয়ে এখন অনেক সংগঠন কাজ করছে। নদী ভ্রমণ বাড়ছে। নদীকে বাঁচানোর জন্য মানুষ রাস্তায় দাঁড়াচ্ছে। তার মানে নদী বিষয়ে মানুষ আবার সচেতন হতে শুরু করেছে। মানুষ চায় নদীতে শান্তি খুঁজতে। এবার আমরা আশা করতেই পারি- নদী ফিরবে আবার আগের ধারায়। সরকারেরও আরো দৃষ্টিপাত প্রয়োজন। বিশেষ করে পর্যটনের জন্য গাজীপুরের ধাঁধারচর, মকসবিল, শালদহ, লবলং সাগরের কিছু অংশ নিয়ে পর্যটনের ব্যাপারে সরকারের এখনই দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। নদী অর্থনীতি আবার ফিরে আসবে পর্যটনের মাধ্যমে, যদি আমরা একটু সজাগ হই। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সদয় দৃষ্টি আশা করছি।

লেখক : রসায়নবিদ

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads