• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
একটি আত্মহত্যা ও কিছু মৌলিক প্রশ্ন

আত্মহত্যা কতগুলো প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে

আর্ট : রাকিব

মতামত

একটি আত্মহত্যা ও কিছু মৌলিক প্রশ্ন

  • তারেক শামসুর রেহমান
  • প্রকাশিত ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বিভাগের ভালো ছাত্র হয়েও অনেকে বিভাগের শিক্ষক হতে পারছেন না। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট। টাকার জোর এখানে বড়। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই যোগ্যরা বাদ পড়ছেন। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে রাজনীতি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় একজন দেবাশীষ মণ্ডলের আত্মহত্যার কথা। তার আত্মহত্যার খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এই আত্মহত্যা কতগুলো প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে, যা আমাদের ভাবায়। দেবাশীষ মণ্ডল সাধারণ একজন নাগরিক নন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন তরুণ শিক্ষক। সদ্য প্রতিষ্ঠিত কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। তিনি প্রভাষক হিসেবে আবেদন করেছিলেন তার নিজ বিশ্ববিদ্যালয় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু চাকরির শর্ত হিসেবে তার কাছে চাওয়া হয়েছিল ১৫ লাখ টাকা। সে টাকা তিনি জোগাড়ও করেছিলেন। ১২ মে তিনি সেখানে মৌখিক পরীক্ষায় অংশও নেন। কিন্তু যখন জানতে পারেন ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার ভায়েরার সেখানে চাকরি হয়েছে তার চাইতে অনেক কম যোগ্যতা সত্ত্ব্বেও, তখন ১৪ মে দেবাশীষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। দেবাশীষ অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। এ ধরনের ঘটনা এখন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই ঘটছে। টিআইবি আইনি তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল কীভাবে অর্থের বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে! আমার ধারণা ছিল, দুদক টিআইবির সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে পারে। কিন্তু দুদক তা করেনি। ফলে এই প্রবণতা বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা জানেন বিষয়টি। এই প্রবণতা যদি বন্ধ করা না যায়, তাহলে দক্ষ শিক্ষকের অভাবে আমরা বিশাল জনগোষ্ঠীকে কখনোই দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব না। এ জন্য আমার আবারো সুপারিশ, শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি মঞ্জুরি কমিশনের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। অথবা পিএসসির মডেলে শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে একটি কমিশন গঠন করতে হবে। এটা খুবই জরুরি। সরকারি কলেজের শিক্ষকরা যদি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষকরা হবেন না কেন? একসময় এর প্রয়োজনীয়তা ছিল না, এটা সত্যি। কিন্তু এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক, প্রায় ৩৬ থেকে ৩৭টি। নতুন দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ও হতে যাচ্ছে। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার প্রশ্ন যখন জড়িত, তখন প্রয়োজন যোগ্য শিক্ষকের। ব্যক্তি পরিচয়, সম্পর্ক, রাজনৈতিক পরিচয় শিক্ষক নিয়োগের মানদণ্ড হতে পারে না। বিশেষায়িত শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। বিবিএ আর এমবিএ’র ‘মাকাল ফল’ আমাদের উচ্চশিক্ষাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা সার্টিফিকেটসর্বস্ব বিবিএ গ্র্যাজুয়েটের নামে শিক্ষিত কেরানি তৈরি করছি। ‘স্যুটেড-বু্যুটেড’ হয়ে এসব অর্ধশিক্ষিত তরুণ কোনোক্রমে বাবার কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে একখানা বিবিএ’র সার্টিফিকেট নিচ্ছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবলিকসহ) একাধিক নামের এমবিএ কোর্স আছে। যিনি কোনোদিন নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা বলে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি, তিনি অর্থের বিনিময়ে আবার ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সার্টিফিকেট কিনছেন! একই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ধরনের শিক্ষা চলতে পারে না। এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববাজারে যেসব শিক্ষকের চাহিদা রয়েছে (আইটির বিভিন্ন শাখা, নার্সিং, মেডিকেল টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, কৃষি ইত্যাদি), সেসব বিষয় চালু করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে একটি কমিশন গঠন করারও প্রস্তাব করছি।

আমাদের অনেক সিনিয়র শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পরও ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী থাকেন। তাদের স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে অথবা নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা যেতে পারে। এতে করে নতুন প্রজন্ম তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। বিশেষ করে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে এদের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন রয়েছে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, বিশ্ববিদ্যালগুলোর মধ্যে এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট আর পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটের মান এক নয়। ফলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের শিক্ষার মানের উন্নতি করতে পারে। এক্ষেত্রে একটি নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কাঠামো ভেঙে সাতটি বিভাগে সাতটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করা প্রয়োজন। প্রতিটি বিভাগে অন্তর্ভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলোকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এরা নিজেরাই সিলেবাস প্রণয়ন করবেন। নিজেরা তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কাঠামো শিক্ষিত বেকার তৈরি করছে। একটি সার্টিফিকেটসর্বস্ব জাতিতে পরিণত করছে। মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। রাজনৈতিক বিবেচনায় এখানে নিয়োগ হচ্ছে। ফলে নিয়োগপ্রাপ্ত সদস্যরা ব্যস্ত থাকেন সরকারের তোষামোদে। পত্রিকায় রাজনৈতিক কলাম লিখে তারা তাদের নিজেদের স্বার্থ আদায় করছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে অনিয়ম হচ্ছে, তা তারা দেখছেন না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়েও কিছু কথা বলা প্রয়োজন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন একশ অতিক্রম করেছে। এটা ভালো কি মন্দ, আমি সেই বিতর্কে যাব না। এরা জনশক্তি গড়তে একটা ভূমিকা রাখছে, এটা অস্বীকার করি না। তবে এক্ষেত্রে যা প্রয়োজন, তা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনায় দক্ষ জনবল নিয়োগ। আধুনিক উপযোগী বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন। ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা না করা। অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল নিজেদের স্বার্থেই করা দরকার। প্রয়োজন ভালো ও সিনিয়র শিক্ষক নিয়োগ। সেই সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখভাল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড ও সরকারের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে আলাদা একটি ইউজিসি টাইপ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার। একুশ শতকে আমরা যদি একটি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে এই তরুণ প্রজন্ম আমাদের জন্য একটা বড় সঙ্কট তৈরি করবে আগামী দিনে। সেই সঙ্কট আমরা মোকাবেলা করতে পারব না। মনে রাখতে হবে, একশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে উচ্চশিক্ষাকে আমরা উচ্চস্তরে নিয়ে যেতে পারব না। এজন্য দরকার দক্ষ ও বাজার উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এ জন্য যে পরিকল্পনা থাকা দরকার, তা নেই। পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটা কোঅর্ডিনেশন থাকা দরকার, তাও নেই। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভালো করছে। আবার অনেকগুলোই খারাপ করছে। এ জন্য একটা ‘ওয়াচডগ’ প্রতিষ্ঠান থাকা দরকার, যা ইউজিসির নেই। ইউসিজি শুধু পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করছে। ঢালাওভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সমালোচনা করে লাভ নেই। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যর্থতাই শিক্ষার্থীদের ব্যাপক হারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমরা যেন এ কথাটা ভুলে না যাই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ যুগের বাস্তবতা।

এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ার একদিন আগে একটি জনপ্রিয় দৈনিকে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছে, শিক্ষার সংখ্যাগত উন্নয়ন হলেও এর গুণগত মানের উন্নতি হয়নি (বণিকবার্তা, ৫ মে)। প্রতিবেদনে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, শিক্ষার মানে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। আর বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে শিক্ষার মানের দিক থেকে ১৩০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৭। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ভারত। তালিকায় বৈশ্বিকভাবে ভারতের অবস্থান ২৭, শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৩৮, পাকিস্তানের ৬৬ আর নেপালের অবস্থান ৭০তম। এর অর্থ, শিক্ষার মানের দিক দিয়ে আমরা নেপালের নিচে অবস্থান করছি। অথচ নেপালি ছেলেমেয়েরা কি-না বাংলাদেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে। তাদের মান আমাদের চাইতে বেশি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্টকে হালকাভাবে নিতে চাই না। এই রিপোর্ট পক্ষপাত দোষে দুষ্ট, সে কথাও আমি বলব না। এই রিপোর্টের ভিত্তি আছে। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি তা শিকারও করি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘দি হিউম্যান ক্যাপিটাল রিপোর্ট ২০১৭’-এ বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, জনবহুল দেশটিতে পড়াশোনা শেষ করার পর শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ বেকার থাকে। দেশটির প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাও বিশ্বমানের। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিশেষায়িত বিষয়ের সংখ্যা খুবই কম। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াই, এই মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করতে পারি না। এটা সবাই স্বীকার করবেন যে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মানের যথেষ্ট অবনতি হয়েছে।

আমরা মানি আর না-ই মানি, আমরা এ দেশে জিপিএ-৫ মার্কা একটি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছি। আমাদের শিক্ষামন্ত্রীও উচ্ছ্বসিত হন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মান বেড়েছে দাবি করে। কিন্তু শিক্ষার মান তো আদৌ বাড়েনি। এটা সত্য, দেশে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। সরকারি আর বেসরকারি পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন অনেক। মানুষ বেড়েছে, তাদের উচ্চশিক্ষা দিতে রাষ্ট্র বাধ্য। সরকার তাই একাধিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। কিন্তু যে প্রশ্নটি প্রধানমন্ত্রী কিংবা শিক্ষামন্ত্রীকে কখনোই করা হয় না, তা হচ্ছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে শিক্ষার মানোন্নয়ন করা যায় না। প্রতিষ্ঠানের হয়তো প্রয়োজন আছে। কিন্তু তার চাইতেও বেশি প্রয়োজন তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা। ভালো শিক্ষক আমরা তৈরি করতে পারিনি। এই ব্যর্থতা একজন শিক্ষক হিসেবে আমারও। যারা এই টেক্সাসে এসেছেন, তারা দেখবেন ডালাস, অস্ট্রিন বা হিউস্টনে প্রচুর ভারতীয় বাস করেন। এরা কিন্তু সবাই অভিবাসীর সন্তান নন।  এরা সরাসরি রিক্রুট হয়েই এ দেশে এসেছেন। ভারত তার শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক করেছে। যুগোপযোগী করেছে। বিশেষায়িত শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। আইটি সেক্টরে প্রতিবছর ভারত যত গ্র্যাজুয়েট তৈরি করে, তা স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পরেও বিদেশে এই দক্ষ জনশক্তি ‘রফতানি’ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের এই টেক্সাসে ভারতীয় আইটি বিশেষজ্ঞরা একটি বড় স্থান দখল করে আছে। এরা সরাসরি ভারত থেকেই রিক্রুট হয়ে আসেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়া বন্ধ করতে চাচ্ছেন বটে, কিন্তু আইটি নার্সদের চাহিদা এত বেশি যে, এটা বন্ধ করা আদৌ সম্ভব হবে না। ইউরোপে আইটি জগতে জনশক্তির ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণ করছে ভারতীয় ও চীনা ছাত্ররা। আমাদের এক বিশাল তরুণ প্রজন্ম রয়েছে। এই তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তৈরি করে আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপেও এদের জন্য একটা জায়গা তৈরি করে দিতে পারি। এ জন্য দরকার সুস্পষ্ট নীতি। এই নীতিটি প্রণয়ন করতে পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। কিন্তু আমরা তা পারিনি। নতুন নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেখানে যে সব বিষয় চালু করা হয়েছে, তার আদৌ কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। এতে করে বরং শিক্ষিত বেকার সমস্যা বাড়ছে। আমি অবাক হয়ে যাই যখন দেখি নতুন নতুন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু ‘দলীয় ও ব্যক্তিগত’ স্বার্থরক্ষায় এমনসব বিষয় চালু করা হয়েছে যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। অথচ ওইসব বিশ্ববিদ্যালয় সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল শুধু প্রান্তিক জনপদকে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত করে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে। গোপালগঞ্জ কিংবা পাবনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এ লক্ষ্যেই। কিন্তু সেখানে সাধারণ বিষয় চালু করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু যারা উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান, তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থেই সরকারের মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে চলেছে। আমি অবাক হয়ে যাই এটা দেখে যে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব সাধারণ বিষয় চালু করার অনুমতিও দিয়েছে। দেশের বড় বড় যে ক’টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, সেখানে সাধারণ বিষয় রয়েছে। নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব বিষয় চালু করার কোনো প্রয়োজন নেই।

অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি বন্ধ করা জরুরি। দেবাশীষ মণ্ডলের বিষয়টি তদন্ত করে দেখুক বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এমনকি দুদকও বিষয়টি দেখতে পারে এখানে আদৌ দুর্নীতি হয়েছে কি-না। আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। এটি সমর্থনযোগ্য নয়। এটি কোনো প্রতিবাদের ধরনও হতে পারে না। এ ঘটনা দুঃখজনক। একজন শিক্ষক হিসেবে এই ঘটনা আমাকে ব্যথিত করেছে।

লেখক : প্রফেসর ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

 tsrahmanog@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads