• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
বিকাশ অ্যাপ ও ইংরেজদের চা খাওয়ার গল্প!

অ্যাপে ঢুকিয়ে চার্জ বাড়িয়ে সেবার বদলে বিকাশ এখন গলার কাঁটা

সংগৃহীত ছবি

মতামত

ভিন্নমত

বিকাশ অ্যাপ ও ইংরেজদের চা খাওয়ার গল্প!

  • প্রকাশিত ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মোহাম্মদ আবু নোমান

ইংরেজরা এদেশের মানুষকে প্রথমে বিনে পয়সায় চা পান করতে দিত। এরপর মানুষ যখন তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ল, তখন আর চা ফ্রিতে জোটে না। ফলে তারা তখন টাকা দিয়ে কিনে খেত। ব্রিটিশরা যেমনিভাবে বাঙালিদের চা পান করা শিখিয়ে গেছে! তেমনি আধুনিক সংস্করণ ও অ্যাপ সেবার নামে বিকাশের গ্রাহকদের এখন থেকে হাজারে আড়াই টাকা বেশি গুনতে হবে। অ্যাপ চালুর মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় বিকাশ কর্তৃপক্ষ চার্জে ছাড় তুলে নিল। সেই ব্রিটিশদের হুবহু অনুকরণ, অনুসরণ ও কূটনীতিক চালে প্রথমে সাধারণ জনগণকে চার্জ কমানোর লোভ দেখিয়ে, অ্যাপ ডাউনলোড করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে অ্যাপটি জনপ্রিয় হওয়ার পর সব ভুলে গিয়ে ছাড় তুলে নিয়ে চার্জ বাড়াল বিকাশ অ্যাপ। এ যেন ‘গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়া।’

বিকাশ কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে ইচ্ছে করে, আপনাদের সিকিউরিটির মান কতটুকু বেড়েছে? ইতোপূর্বে বিকাশের কারিগরি ত্রুটির কারণে লাখো জনগণ টাকা হারিয়েছে। যা লিখতে গেলে অনেক বড় কিতাব হয়ে যাবে। ‘ধর মার খাও’ নীতি হলে এদেশের সাধারণ জনগণের আর কী করার আছে! এ দেশের সব ক্ষেত্রে এটাই যেন নিয়তি। এসব নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা আছে কি? এ দেশের সহজ-সরল, সাধারণ ও বিশেষত কম শিক্ষিত মানুষদের পেয়ে ধূর্ত ও চালাক শ্রেণির মানুষরা আজ ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হয়েছে। আর যাদের দায়িত্ব দেশের মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া তারা যদি অজানা কারণে চুপ থাকে তাহলে সাধারণ জনগণের আর কিছুই করার থাকে না। এখন চাকরির ক্ষেত্রে মেধার মূল্যায়ন নেই, লাগে ঘুষ কিংবা মামা-ভাগ্নের সম্পর্কের মতো জাদুর ছোঁয়া। একটা মেথর থেকে শুরু করে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা নিয়োগে পর্যন্ত চলে বাণিজ্য আর অপরিসীম দুর্নীতি। ঠিকাদারদের মন্ত্রী, আমলা, ইঞ্জিনিয়ার, স্থানীয় মাস্তানদের পারসেন্টেজ ও চাঁদা দিয়ে কাজ করতে হয়। রাজনীতিবিদদের গোয়েবলসীয় কায়দায় মিথ্যাকে সত্য এবং সত্যকে মিথ্যা বলে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়বে না। অবৈধ লোন দিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা পয়সা কামাবেন। জাল সার্টিফিকেটে শিক্ষকতা। ভুয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। এমনিতর শত-সহস্র অনৈতিক ঘটনা যেখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার, সেখানে বিকাশ কর্তৃপক্ষ চার্জ না বাড়িয়ে পিছিয়ে থাকবে কোন যুক্তিতে?

প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে চার্জ বা ফি যখন উত্তরোত্তর কমানোর কথা, বিকাশ তখন গ্রাহকদের কাছ থেকে উল্টো সুযোগ নিয়ে তাদের ব্যবহার করছে। গ্রাহকদের অ্যাপে ঢুকিয়ে নিয়ে আবার চার্জ বাড়িয়ে, সেবার বদলে বিকাশ এখন যেন জনগণের গলার কাঁটা! যা সম্পূর্ণই প্রতারণা, অন্যায় ও অনৈতিক। তথ্যমতে, অ্যাপের মাধ্যমে ক্যাশ আউটের ক্ষেত্রে এখন থেকে গ্রাহককে হাজারে আড়াই টাকা বেশি গুনতে হবে। অর্থাৎ গ্রাহককে এখন চার্জ দিতে হবে হাজারে ১৭.৫ (সাড়ে সতের) টাকা। অ্যাপ চালুর পর যা ছিল ১৫ টাকা।

পূর্বে যে চার্জ ছিল তা মোটেই কম ছিল না। তবুও জনগণ সাধারণ প্রক্রিয়ায় বিকাশের অ্যাপের মাধ্যমে টাকা লেনদেন সহজভাবে মেনে নিয়েছে। গ্রাহকের কাছে জনপ্রিয়তার দিকটি ভেবে তাদের উচিত ছিল চার্জ কমানো। কিন্তু হঠাৎ বিকাশ কর্তৃপক্ষ যে চার্জ বাড়াল এটা কতটুকু ঠিক হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবে বলে আশা করি। তাই আমরা মনে করি, আগের অবস্থানে ফিরে এসে, বিকাশ কর্তৃপক্ষ এই নীতি পরিহার করবে।

এ ছাড়াও বিকাশ কর্তৃপক্ষেরও ভেবে দেখা উচিত, বিকাশ ছাড়াও এদেশের মানুষ বেঁচে ছিল, অর্থের লেনদেনও হয়েছে। বর্তমানে বিকাশের বিকল্পও এদেশে আছে। এখন দেশের অজপাড়াগাঁয়েও ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা ছাড়াও রকেট অ্যাকাউন্ট, ডাচ-বাংলাসহ টাকা লেনদেনের বৈধ মাধ্যম রয়েছে।

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads