• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
মানবিক সমাজ চাই

প্রতীকী ছবি

মতামত

মানবিক সমাজ চাই

  • মাহমুদুল হক আনসারী
  • প্রকাশিত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সমাজে স্বাভাবিকভাবে জীবন পরিচালনার পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। সমাজ ও মানুষ এক ধরনের হিংস্র প্রাণীর ভূমিকায় অবতীর্ণ। গত ২৮ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পাবনার নারী সাংবাদিক সুবর্ণা আক্তার নদীকে সাংবাদিকতার পেশায় সর্বশেষ বলি হতে হলো। সাংবাদিকতা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একটি সেবামূলক কাযর্ক্রম। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ, প্রচার জনগণ ও সমাজ-রাষ্ট্রের স্বার্থে। সংবাদ আদান-প্রদান না থাকলে সে সমাজ অন্ধ ও বধির হয়ে যাবে। সংবাদকর্মীও একজন মানুষ। তারও দোষ-ত্রুটি থাকতে পারে। তারও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান থাকাটা স্বাভাবিক, পারিবারিক সামাজিক পক্ষ-বিপক্ষ, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক দূরত্বও না থাকার বিষয় নয়। যে কোনো কারণে পারিবারিক সামাজিকভাবে কোনো না কোনো জায়গায় মানুষে মানুষে, পরিবারে পরিবারে, সমাজে সমাজে, গোত্রে গোত্রে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি থাকাটাই সমাজবদ্ধ জীবের চরিত্র। তাই বলে মতের অমিল হলে, আদর্শের ঐক্য না হলে তাকে হত্যা করা, গুম করা কোনো সভ্য সমাজের নৈতিক আদর্শের মধ্যে পড়ে না। সমাজ যেন ক্রমান্বয়ে অধপতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দেড় হাজার বছর আগের জাহেলি সমাজ তথা অন্ধ-অনৈতিকতা, অপশাসন আর মানবতার জুলুম-শোষণ থেকে নিস্তার পেতেই আধুনিক ও সভ্য সমাজের সন্ধান করা হয়েছিল। সভ্য সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, মানুষে মানুষে হানাহানি মারামারি বন্ধ আর সম্প্রীতি স্থাপনের উদ্দেশ্যেই উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠাার সংগ্রাম যুগে যুগে মানুষ করেছে। যদি তা-ই হয়, তাহলে আজকের এ সভ্য সমাজে কেন এত হানাহানি, রক্তপাত, অন্যের মতের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখাতে পারছি না? অপরজনের স্বাধীন জীবন চলা সহ্য করতে পারছি না। আমাদের সভ্যতা কোন পথে হাঁটছে। মানুষ হিসেবে মানুষের অধিকারকে সম্মান দিতে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। আমাদের নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে ফেলছি। সভ্যতার নামে পশুত্বের চরিত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ তার মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারছে না। সমাজ, দেশ ও জনগণের স্বার্থে সংবাদকর্মীরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে থাকে। কিন্তু সেখানে কখনো কখনো নেমে আসে মধ্যযুগীয় বর্বরোচিত হামলা-মামলা আর নির্যাতন। এখন দেখছি মতের অমিল হলে তাকে নির্মমভাবে নৃশংসভাবে হত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। এভাবে হত্যার শিকার সংবাদকর্মী থেকে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সুশীল সমাজের মানুষ। মানুষের স্বাভাবিক জীবনের কোনো নিশ্চয়তা আমরা দেখতে পারছি না। রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন সবকিছু জনকল্যাণের জন্য। যখন সমাজে ও রাষ্ট্রে গুম-খুন-অপহরণ সংঘটিত হতে থাকে, তখন কিন্তু মানুষ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে। অনিরাপদ জীবন ঝুঁকির জন্য জনগণ তখন শাসকগোষ্ঠীকেই দায়ী করে। সুতরাং নির্বাচনের বছরে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যেন পরিবেশ ঘোলাটে করার সুযোগ না পায়।

রাস্তায় বেরুলেই বাস-ট্রাকের নিচে মানুষের জীবনপ্রদীপ নিভে যাচ্ছে। প্রতিদিন রাস্তায় কতসংখ্যক মূল্যবান প্রাণ ঝরে পড়ছে, তার কোনো সঠিক হিসাব কেউ দিতে পারবে না। সারা দেশে অপরিকল্পিত অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য আর বিশৃঙ্খলার কারণে এভাবে সড়ক দুর্ঘটনা নামক হত্যা হচ্ছে। নিজ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পরিবার থেকে রাষ্ট্র- সব সেক্টরে নির্যাতন আর নিপীড়নের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যশোরের শামছুর রহমান, সিরাজগঞ্জের আবদুল হাকিম, শিমুল, সাগর-রুনির মতো মেধাবী যোগ্য কলমসৈনিক নির্মমভাবে আততায়ীর হাতে হত্যার শিকার। রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ওইসব হত্যাকারী খুনিকে বের করতে পারেনি। একটি সুন্দর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সম্প্রীতির সমাজ প্রতিষ্ঠাই হলো সাংবাদিক সমাজের অন্যতম উদ্দেশ্য এবং সংগ্রাম। সে উদ্দেশ্যেই সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা। রাষ্ট্র ও সমাজের প্রয়োজনে এসব আততায়ীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। মানুষ হিসেবে ভুল হতে পারে। মানুষ হিসেবে মানুষে মানুষে, সমাজে সমাজে মতবিরোধ থাকাটাও স্বাভাবিক। কিন্তু তার পরিণাম নির্মমভাবে হত্যা তা কাম্য হতে পারে না। সব গুম খুন হত্যা বন্ধ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। জাতি স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়। চায় জীবনের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক পরিবেশ। সামাজিক অস্থিরতা, হানাহানি, নৈরাজ্য ও খুন-খারাবি রাষ্ট্রকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আইনের সঠিক প্রয়োগ না হলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা, ন্যায়নীতি বলতে কিছুই থাকবে না। আইনকে আপন গতিতে চলতে দিতে হবে। তার অপব্যবহার কাম্য নয়। জনগণকে জীবনের নিরাপত্তা আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া একদিকে যেমন উন্নত জাতির পরিচায়ক, অন্যদিকে আবার জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। সেই বিবেচনায় সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ সত্যবান বিবেকের কণ্ঠকে রুদ্ধ করার শামিল। সব নাগরিকের সব ধরনের সুযোগ ও ন্যায্য অধিকারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সুতরাং সব হত্যা-গুম-অপহরণের বিচার এখন সময়ের দাবি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads