• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
আতঙ্কের নাম ডেঙ্গু

ডেঙ্গু মশা

সংগৃহীত ছবি

মতামত

আতঙ্কের নাম ডেঙ্গু

  • মো. মাঈন উদ্দিন
  • প্রকাশিত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়ার সঙ্গে ইদানীং যুক্ত হয়েছে ডেঙ্গু নামক এক আতঙ্কের নাম। রাজধানীসহ সারা দেশব্যাপী ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। খবরে প্রকাশ ২৪ ঘণ্টায় ৬০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত তিন মাসে ডেঙ্গুজ্বরে মারা গেছেন ১১ জন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২৮৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে গড়ে প্রতিদিন ৮৫ জনেরও বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এটি বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীবাসীর মনেও ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক।

যদিও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃপক্ষ। তারা বলেন, আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, ডেঙ্গুর বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কেউ এ জ্বরে আক্রান্ত হলে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ এ বছর বাড়লেও তা ২০১৬ সালের তুলনায় বেশি নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ৪-৫ জন করে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এডিস মশা ডেঙ্গুর বাহক। এ সময় জ্বর বা শরীরে ব্যথা হলে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর যখন বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের লক্ষণ (যেমন— মাড়ি বা নাক থেকে রক্তক্ষরণ, মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি) দেখা দেয়, তখনই একে হেমোরেজিক ডেঙ্গু বলা হয়।

এ বছর হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। ডেঙ্গুজ্বর হলে সাধারণত জ্বরের মাত্রা বেশি হয় এবং গায়ে রেশ ওঠে। এ বছর কম জ্বর এবং গায়ে রেশ ওঠেনি এমন ডেঙ্গু রোগীও পাওয়া যাচ্ছে। জ্বর কম থাকায় এবং গায়ে রেশ দেখা না দেওয়ায় অনেকে সাধারণ জ্বর ভেবে চিকিৎসকের কাছে যান। এতে করে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে। কারো ৪-৫ দিন জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রচুর পানি, শরবত ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে।

তথ্যমতে, ডেঙ্গুজ্বরের ধরন ও প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) চলতি বছর যারা ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছেন, তাদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শুরু করেছে। আইইডিসিআরের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদফতর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী এবং এ রোগে মৃতদের তথ্য সংগ্রহ করছে। চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম ৯ দিনে ৭৬৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত  হয়েছেন। সেই হিসাবে গড়ে প্রতিদিন ৮৫ জনেরও বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৮২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে জুনে ৩ জন, জুলাইয়ে ৪ জন এবং আগস্টে ৪ জনসহ ১১ জন মারা গেছেন। ডেঙ্গুজ্বরে গত ১০ বছরের মধ্যে ২০১৬ সালে সর্বাধিক লোক মারা যায়, এ সংখ্যা ১৪ জন। তবে এ বছর মাত্র তিন মাসেই মারা গেছেন ১১ জন।

বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকরা বলেছেন, জুন থেকে অক্টোবর ডেঙ্গু রোগ ছড়ানো বাহক এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। কিন্তু এবার ফেব্রুয়ারিতে আগাম বৃষ্টি হওয়ায় মশার উপদ্রব আগে থেকেই বাড়তে থাকে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় এডিস মশার প্রজনন বাড়ে। ফলে রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ে ডেঙ্গু। এ জ্বর থেকে রক্ষা পেতে হলে এডিস মশা যেন বংশ বিস্তার করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাসা বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, সে বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে। মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশার ওষুধ ছিটিয়ে থাকে। তবে রাজধানীবাসী বরাবরই বলে আসছেন যে, মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম মোটেও সন্তোষজনক নয়।

আসলে মিডিয়ায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের কথাগুলো মিষ্টি লাগলেও প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণ ডেঙ্গু প্রতিরোধ সংক্রান্ত কোনো সেবাই পায় না। এদিকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দিনকে দিন বেড়ে যাওয়ায় এই ডেঙ্গুজ্বর সাধারণ জনগণের মধ্যে এক আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং ডেঙ্গুর প্রভাব বিস্তার রোধে জনগণকে যেমন সচেতন হতে হবে, তেমনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে সঠিক পদক্ষেপ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads