• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
বিদেশকেন্দ্রিক দেশীয় রাজনীতি

ক্ষমতায় আসতে হলে জনরায় নিয়ে আসতে হবে

আর্ট : রাকিব

মতামত

বিদেশকেন্দ্রিক দেশীয় রাজনীতি

  • জি. কে. সাদিক
  • প্রকাশিত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সম্প্রতি বিএনপির প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মিরোস্লাভ জেনকার ও আমেরিকান প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় প্রতিনিধিদলটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করে। দলটির সফর ও তাদের আলোচনার বিষয়ে মিডিয়ায় নানা মত দেখা যাচ্ছে। বড় একটা রাজনৈতিক দলের বিদেশ সফর নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতেই পারে। আর হওয়াটাই স্বাভাবিক। এর আগে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির সিরিয়াল ধরে ভারত সফর নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা দেখা গেছে। রাজনৈতিক দলগুলো অন্য দেশে সফর করবে এটা রাজনীতি চর্চার ক্ষেত্রে ভালো। কিন্তু যখন দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে বিদেশে রাজনীতি শুরু হয় তখন সফরটা দোষণীয় দেখায়। শুধু দোষণীয়ই নয় এটা দেশের সার্বভৌমত্ব, সংবিধান ও গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয়। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যার সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণ যে দলকে ক্ষমতায় দেখতে চাইবে তারাই ক্ষমতায় থাকবে। আর যাকে বিদায় দেবে তাকে বিদায় নেওয়া ছাড়া ভিন্ন উপায় নেই। ভারত, আমেরিকা, ব্রিটেন, জাতিসংঘ, অন্য কোনো দেশ বা আন্তর্জাতিক সংগঠনের পক্ষে কোনো দলকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কোনো দলকে ক্ষমতায় আসতে হলে সাংবিধানিক প্রক্রিয়াতে জনগণের রায় নিয়ে ক্ষমতায় আসতে হবে এবং টিকে থাকতে হবে জনগণের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার ঠিক রেখে, সংবিধান ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে গণতান্ত্রিক অঙ্গীকার রক্ষার মাধ্যমে। ভিন্ন কোনো পথ জনগণ মেনে নেবে না। আমাদের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রাজনীতি করা আবশ্যক।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে আমাদের মধ্যে এই চেতনা কাজ করছে যে, ভারত, আমেরিকা, ব্রিটেন, জাতিসংঘ বা অন্য কোনো ক্ষমতাধর রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক সংস্থার আস্থা অর্জন করতে পারলে বা তাদের বাগে আনতে পারলেই যেন ক্ষমতার মসনদ দখল করা যাবে। এমন একটা ধারণা দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও কেন্দ্রীভূত হয়ে দৃঢ়বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে। এটা আমাদের দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সংবিধান, গণতন্ত্র ও দেশীয় রাজনীতির জন্য বড় ধরনের ভুল। শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনকালে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক করেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে এমন সম্পর্ক প্রশংসনীয়। এটা কোনো অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে যখন বলা হয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে বাংলাদেশ আরেকটা পাকিস্তান হয়ে যাবে এবং ভারতকে পূর্ব-পশ্চিমে দুটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে থাকতে হবে তখন চরম অস্বাভাবিক মনে হয়।

ক্ষমতায় আসতে হলে জনরায় নিয়ে আসতে হবে। টিকে থাকতে হবে জনসমর্থন নিয়ে। সরকারি দলকে তাদের অবস্থান, ক্ষমতার মাত্রা ও অধিকার-অনধিকার সম্পর্কে গণতান্ত্রিক ধারণা রাখতে হবে এবং সে আলোকে কাজ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ বাজায় রাখা ও উন্নয়নের নামে ক্ষমতার অপব্যবহার করে গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে অগণতান্ত্রিক কাজ করলে সাময়িক টিকে থাকা সম্ভব হলেও এক সময় জন-আস্থা হারিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়, তা আমরা ইতিহাস থেকে কমবেশি জেনেছি। অন্যদিকে বিরোধী দলকেও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিরোধী দলের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। জ্ঞাত থাকতে হবে তাদের ক্ষমতা, অধিকার ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর চালচিত্র দেখে মনে হয়, যেন কেবল ক্ষমতা দখলই মুখ্য। দলগুলোর কার্যক্রম ও আচরণ দেখে মনে হয় না, সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস, দেশপ্রেম ও জনগণের প্রতি বিন্দুমাত্র আস্থা রয়েছে তাদের। ক্ষমতায় আসার জন্য বিএনপির প্রতিনিধিদল সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরে জাতিসংঘের মহাসচিব ও ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছে। পূর্বেই বলেছি এদেশের রাজনীতিতে জনগণই শেষ কথা। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির উচিত ছিল নির্বাচন বিষয়ে তাদের দাবি বা মতামতগুলো মূল্যায়নের জন্য জনমত ও সমর্থন গড়ে তোলা। তাদের নির্বাচনী ইশতেহার জনকল্যাণ ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য যুগোপযোগী করে প্রচারণা চালিয়ে জনরায় আদায়ের চেষ্টা করা। জনগণ যদি বিএনপির দাবিগুলোর যৌক্তিক সম্পর্ক বুঝতে পারে ও নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে রায় দেয় কেবল তখনই তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে। জাতিসংঘের মহাসচিব, আমেরিকার ট্রাম্প, ভারতের মোদি, ব্রিটেনের থেরেসা মে বা অন্য যে কেউ বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে পারবে না। বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির মধ্যে জনরায় বাগে আনার চেষ্টার চেয়ে বিদেশিদের সমর্থন আদায়ের তদবির বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য যেমন উদ্বেগের তেমনি বিএনপির জন্য সুখকর হবে না।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যা করছে তাতে এদেশের রাজনীতিতে আগামী দিনগুলো সুবিধাজনক হবে কিনা তা নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতায় আসার জন্য যে প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে তা আমাদের দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করতে পারে। এ প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জনগণ যে দলের পক্ষে রায় দেবে তারাই ক্ষমতায় আসতে পারবে। এখানে জনরায়ই মুখ্য।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads