• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু প্রসঙ্গে

প্রতিদিন ৫৩ জনের মৃত্যু হচ্ছে পানিতে ডুবে

সংগৃহীত ছবি

মতামত

ভিন্নমত

পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু প্রসঙ্গে

  • শামীম শিকদার
  • প্রকাশিত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশে যে কয়েকটি শিশুমৃত্যুর কারণ রয়েছে তার মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যুর কারণটি প্রধান। অথচ অভিভাবকদের একটু সচেতনতাই পারে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর এই হার অনেকাংশে কমিয়ে আনতে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, ভারী বর্ষণ, জলাবদ্ধতা, ঘরের কাছাকাছি খানাখন্দের পরিমাণ বৃদ্ধি ও বন্যাই শিশুমৃত্যুর মূল কারণ।

স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) পানিতে ডোবাসহ বিভিন্ন ধরনের জখমে মৃত্যু ও আহতদের নিয়ে ২০১৬ সালে জাতীয় জরিপ করে। তাতে দেখা যায়, প্রতিদিন ৫৩ জনের মৃত্যু হচ্ছে পানিতে ডুবে। এর মধ্যে ১ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু-কিশোর ৪০ জন এবং বয়স্ক ১৩ জন। জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৬ সালে সারা দেশে পানিতে ডুবে মারা গেছে ১৯ হাজার ২৪৭ জন। এর মধ্যে শিশু ১৪ হাজার ৪৩৮ জন। বয়স্ক মানুষ মারা গেছে ৪ হাজার ৮০৯ জন।

জাতীয় জরিপ অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৭৬ জন মানুষ পানিতে ডুবে আহত হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৯৬ জন পানিতে ডুবে আহত হয়। মেডিকেল জার্নালের এক প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে বিভিন্ন রোগে শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। তবে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে। নব্বইয়ের দশকে ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুমৃত্যুর ২০ শতাংশ ঘটত পানিতে ডুবে। ২০১১ সালে এই হার বেড়ে ৪৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

পানিতে ডুবে মৃত্যু বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ হলেও তা প্রতিরোধে সরকারের দেশব্যাপী কোনো কর্মসূচি নেই। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিআইপিআরবি ২০০৫ সাল থেকে ‘আঁচল’ নামের এক কর্মসূচির মাধ্যমে পানিতে ডোবা প্রতিরোধ ও সচেতনতামূলক কাজ করছে। বিভিন্ন গ্রামে দিবাযত্ন কেন্দ্র তৈরি করে সেখানে শিশুদের রাখা হয়। দিনের যে সময় বাবা ও মা দুজনই ব্যস্ত থাকেন, তখন শিশুদের দিবাযত্ন কেন্দ্রে এসে রাখা হয়। সারা দেশে এদের ১ হাজার ৭০০টি কেন্দ্র আছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তা ছাড়া প্রতিটি অঞ্চলে এ ধরনের সেবা এখনো পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি।

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ফলে যেমন একটি পরিবার সন্তান হারায়, তেমনি দেশ হারায় তার মূল্যবান মানবসম্পদ। তাই পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধ করতে হলে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। যদি অভিভাবক তার শিশুটির ওপর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ১টা পর্যন্ত ভালোভাবে নজর রাখে, তাহলে শিশুমৃত্যুর হার অনেকটা কমে আসবে। কারণ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এই সময়েই শিশুমৃত্যুর হার বেশি। ডোবা ও পুকুরের চারপাশে বেড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ১০ মাস থেকে তিন বছর বয়সী শিশুদের প্রতি পরিবারের, বিশেষ করে মায়ের সার্বক্ষণিক নজরদারি এবং চার বছর বয়স থেকে শিশুকে সাঁতার শেখানো। আবার যদি কোনো শিশু পানিতে পড়ে যায়, তখন পানি থেকে তোলার পর পরই শিশুকে কার্যকর প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে, অর্থাৎ শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে সাহায্য করার ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ এ সময় শিশু অক্সিজেন-স্বল্পতায় ভোগে। শিশুকে দ্রুত হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণত বালতির পানিতে ডুবে গিয়ে, পুকুরে পড়ে গিয়ে, বাড়ির পাশে ডোবায় পড়ে গিয়ে শিশুমৃত্যু সংঘটিত হয়ে থাকে। যদি বাড়ির আশপাশে পুকুর বা ডোবা থাকে, তাহলে বাড়ির শিশুটির প্রতি বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু প্রতিবছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যায়। তাই এই সময় শিশুদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

লেখক : সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads