• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
বায়ুদূষণে শিশুর ক্ষতি

মারাত্মক দূষণের কারণে শিশুদের স্নায়ু প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে

সংগৃহীত ছবি

মতামত

ভিন্নমত

বায়ুদূষণে শিশুর ক্ষতি

  • সাধন সরকার
  • প্রকাশিত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশের বহু শিশু বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, দূষিত বাতাসে শ্বাস নিলে শিশুর সুনির্দিষ্টভাবে মস্তিষ্কের টিস্যু ও জ্ঞানের বিকাশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে জীবনভর। শিশুর জন্য অপুষ্টি ও সহিংসতা যেমন মারাত্মক, তার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর বায়ুদূষণ। মারাত্মক দূষণের কারণে শিশুদের স্নায়ু প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রতি ‘ইউনিসেফের’ (জাতিসংঘের শিশু তহবিল) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে এক বছরের কম বয়সী প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ শিশুকে বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে হয়। বলা হয়েছে, এসব শিশুর তিন-চতুর্থাংশের বেশি দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাস করে। তথ্য মতে, বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটির বেশি শিশু বায়ুদূষণের শিকার। ঢাকাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরে সব মিলিয়ে প্রতিবছর প্রায় ১৫ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু ঘটে বায়ুদূষণে। বায়ুদূষণ নীরব ঘাতক। শীতকালে অতিমাত্রায় বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। যেসব শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম সেসব শিশু দূষণে বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।      

অতি সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, পরিবেশ দূষণের কারণে বিশ্বের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ বাংলাদেশ (১৩৩টি দেশের মধ্যে দূষণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিক থেকে ৯৭তম)। শুধু শহর অঞ্চলে দূষণের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। দূষণের কারণে ২০১৫ সালেই শহরাঞ্চলে মারা গেছে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। এর এক-তৃতীয়াংশই শিশু। বাংলাদেশে ২০১৫ সালে মোট মৃত্যুর ২৮ শতাংশের কারণ পরিবেশ দূষণজনিত অসুখ-বিসুখ। সমীক্ষায় আরো বলা হয়েছে, দেশের শহরাঞ্চলে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ সিসার দূষণের ঝুঁকিতে বসবাস করছে, যাদের বেশিরভাগই শিশু। এ দূষণের কারণে শিশুর মেধা ও বুদ্ধিমত্তার ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় শিশুমৃত্যুর হার বাড়ছে। রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরে দূষণজনিত সমস্যা দিন দিন মারাত্মক আকার ধারণ করছে। শহরে বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলো হলো আশপাশের ইটভাঁটার দূষণ (প্রায় ৫৮ ভাগ), রাস্তাঘাটের ধুলাদূষণ, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের দূষণ, শিল্প কারখানার দূষিত ধোঁয়া, সিসার দূষণ, ময়লা-আবর্জনার দূষণ, বস্তিতে ব্যাটারিসহ শিল্পবর্জ্যের দূষণ ইত্যাদি। দূষিত বাতাসে ক্ষতিকারক গ্যাস ও ধুলার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে ফুসফুস ক্যানসার, হূদরোগ ও স্ট্রোকসহ নানা রোগের ঝুঁকি। তথ্য মতে, ঢাকার বাতাসে প্রতি মাইক্রোগ্রাম বাতাসে এর পরিমাণ প্রায় ২০০ মাইক্রোমিটারের অধিক, যা মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর। গৃহস্থালি বায়ুদূষণও শিশুর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শিশুর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক এই তিনটি দিকের জন্যই হুমকি বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণসহ সব ধরনের দূষণ এখন জীবনের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। বায়ুদূষণের কারণে শিশুর স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ও বেড়ে ওঠা ব্যাহত হচ্ছে। বায়ুদূষণ থেকে শিশুসহ সবাই যদি সুরক্ষিত থাকে তাহলে শুধু উপকারই নয়, স্বাস্থ্যসেবার খরচও সাশ্রয় হবে। গ্রামের চেয়ে শহরের শিশুরাই বেশি বায়ুদূষণের শিকার। শহরের বস্তি ও দরিদ্র এলাকার শিশুরা সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছে। জীবনের শুরুতে একটি শিশু দূষণের শিকার হলে তার ভবিষ্যৎ জীবন এলোমেলো হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। দূষণ রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের বিকল্প নেই। দূষণের উৎসগুলো সবাইকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। দূষণে শিশুর মেধায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বায়ুদূষণসহ সব ধরনের দূষণের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে এখনই বিধিমালা বা নীতিমালা প্রণয়ন করার পাশাপাশি জনসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করা উচিত। ইটভাঁটাগুলোকে উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণসহ পরিবেশবান্ধব উপকরণের ব্যবহার বাড়াতে হবে। পরিবেশবান্ধব চুলা ও জ্বালানির (নবায়নযোগ্য শক্তি) ব্যবহার বাড়াতে হবে। শহর এলাকায় টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতিটি শিশুর জন্য ও সর্বোপরি সবার স্বার্থে বায়ুদূষণ রোধে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। এই দূষণ রোধে সরকারের সব সংস্থা, প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এটা এখন সময়েরও দাবি।

লেখক : নিবন্ধকার

sadonsarker2005@gmail.com

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads