• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
প্রসঙ্গ শেখ মনি ও কাজী জাফর

শেখ মনি ও কাজী জাফর

সংগৃহীত ছবি

মতামত

রাজনীতিকদের সম্পর্ক

প্রসঙ্গ শেখ মনি ও কাজী জাফর

  • শাহ আহমদ রেজা
  • প্রকাশিত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

গত সপ্তাহের নিবন্ধে কাজী জাফর আহমদের আত্মজীবনী ‘আমার রাজনীতির ৬০ বছর : জোয়ার-ভাটার কথন’ থেকে রাজনীতিকদের মধ্যকার ব্যক্তিগত সম্পর্কের উদাহরণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মনোভাব ও কার্যক্রম সম্পর্কিত দু-একটি ঘটনার উল্লেখ করেছিলাম। আজকের নিবন্ধে ১৯৬০ দশকের দুই খ্যাতনামা ও সংগ্রামী ছাত্রনেতা কাজী জাফর এবং শেখ ফজলুল হক মনির মধ্যকার সম্পর্ক প্রসঙ্গে কিছু তথ্যের উল্লেখ করা হবে। দুজনের মধ্যে কাজী জাফর ছিলেন অত্যন্ত কঠোরভাবে আওয়ামী লীগবিরোধী। অন্যদিকে শেখ মনি শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ছিলেন না, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানও ছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রথম সরকারের আমলে তার যথেষ্ট প্রভাব ছিল। আওয়ামী লীগের দলীয় মুখপত্র দৈনিক ‘বাংলার বাণী’র সম্পাদক হিসেবেও দেশের রাজনীতিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। প্রচুর লেখাপড়া করতেন তিনি। তার পাণ্ডিত্যও ছিল অসাধারণ।

সেকালের পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজনীতিতে কাজী জাফর ও শেখ মনির প্রতিষ্ঠা ঘটেছিল ১৯৬২ সালের শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। দুজন পরিচিত ছিলেন যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। পরস্পরবিরোধী এই সম্পর্ক বজায় ছিল শেষদিনগুলো পর্যন্তও। অমন পরিচিতি ও সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও দুজনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল খুবই হূদ্যপূর্ণ। এ সম্পর্কিত একটি ঘটনার উল্লেখ করতে গিয়ে কাজী জাফর জানিয়েছেন, ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে, বাকশাল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ঠিক প্রাক্কালে একদিন শেখ মনির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। শেখ মনি কাজী জাফরকে তার বাসায় নিয়ে যান। কাজী জাফর তখন গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে অর্থাৎ পলাতক অবস্থায় ছিলেন। দুজনের মধ্যে বাকশালসহ সে সময়ের রাজনীতি নিয়ে অনেক কথা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানাতে গিয়ে কাজী জাফর লিখেছেন, “শেখ মনি এরপর যা বলল তা আমার কাছে ছিল খুব হূদয়স্পর্শী। বলল, ‘কোথায় থাকিস, কী খাস, কী করিস, কোথায় ঘুমাস? তোদের (অর্থাৎ কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের) এ সমস্ত জিনিস আমি বুঝি না। আমরা কখনো এ সমস্ত আন্ডারগ্রাউন্ডের জীবন বিশ্বাস করি না। আমরা জেলে যাওয়াটাই পছন্দ করি।’...”

কাজী জাফর আরো লিখেছেন, “তারপর সে (শেখ মনি) বলল, ‘তোর কাছে টাকা-পয়সা আছে?’

আমি বললাম, ‘দিবি নাকি?’ সে বলল, ‘দেখি।’ বলেই সে ঘরের মধ্যে চলে গেল। আমি শুনতে পাচ্ছিলাম, তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হচ্ছে, যা হয় রাজনীতিবিদদের জীবনে। তারা যা আছে সব উজাড় করে দিতে চায়। কিন্তু তাদের স্ত্রীদের তো সংসার চালাতে হয়।’

শেখ মনি এরপর আলমারি খুলে এক মুঠো টাকা নিয়ে এসে কাজী জাফরের হাতে দিয়েছিলেন। কাজী জাফর জানতে চেয়েছিলেন, ‘কত?’ শেখ মনি বলেছিলেন, ‘আমি জানি না, তুই দেখ।’ গাড়িতে ওঠার পর কাজী জাফর গুনে দেখেছিলেন, শেখ মনি তাকে আট হাজার টাকা দিয়েছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও প্রকাশ্য রাজনীতিতে কাজী জাফর এবং শেখ ফজলুল হক মনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তথা শত্রু হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সে কারণেই একজন শত্রুর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ব্যাপারটা কাজী জাফরের নিজের কাছেও ভালো লাগেনি। তা ছাড়া তার তখন টাকার প্রয়োজনও ছিল না। এজন্যই কাজী জাফরের মনে হয়েছিল, ‘(টাকা) নেওয়াটা সঠিক হবে না।’ তা সত্ত্বেও নেওয়ার কারণ জানাতে গিয়ে কাজী জাফর লিখেছেন, ‘কিন্তু মনির যে আবেগ এবং আমার জন্য হূদয়মিশ্রিত তার যে ভালোবাসা তাকে অপমান করা যায় না। তাই টাকাটা আমি নিলাম।’

এ পর্যন্ত এসে কাজী জাফর লিখেছেন, ‘এটা আমি বললাম এই কারণে যে, তখনকার রাজনীতিবিদদের চরিত্র, তাদের চিন্তাভাবনা, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আজকের রাজনীতিবিদদের মতো ছিল না। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য খুবই তীক্ষ ছিল; কিন্তু একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্কের একটা অভিব্যক্তি সেদিন ঘটেছিল শেখ মনির সঙ্গে আমার সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে।’

উল্লেখ্য, টাকা দেওয়া-নেওয়ার আগে সেদিন কাজী জাফর ও শেখ মনির মধ্যে অনেক কথাবার্তা হয়েছিল। বলেছিলেন প্রধানত শেখ মনি। এটা ১৯৭৫ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের ঘটনা। ততদিনে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে (ডিসেম্বর, ১৯৭৪)। বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশাল গঠন ও অন্য সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করার সিদ্ধান্তও জানাজানি হয়ে গিয়েছিল। নতুন এ ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে যে রাষ্ট্রপতি করা হবে এবং তার হাতেই যে দল ও রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকবে— এসব খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।

কাজী জাফর ও শেখ মনির সেদিনের সাক্ষাৎ এবং আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এজন্য যে, শেখ মনি শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ছিলেন না, তিনি আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডেন্টও ছিলেন। বড় কথা, একজন উপদেষ্টা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ওপর তার ব্যাপক প্রভাব সম্পর্কে রাজনৈতিক অঙ্গনের সবাই জানতেন। কাজী জাফরের সঙ্গেও শেখ মনি বাকশাল এবং দেশের ভবিষ্যৎ নিয়েই আলোচনা করেছিলেন। মূলকথায় তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের সংগঠন ধরে রাখার পাশাপাশি জাতীয় দলের পরিচিতি দেওয়ার উদ্দেশ্যে সরকারের ‘বি টিম’ হিসেবে পরিচিত ‘মস্কোপন্থি’ মোজাফফর ন্যাপ এবং কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) থেকে জনা কয়েক নেতাকে প্রাথমিক পর্যায়ে বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেওয়া হবে। কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যেই (বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট পার্টির মতো) বঙ্গবন্ধুকে চেয়ারম্যান করে সাত সদস্যের একটি পলিট ব্যুরো গঠন করা হবে। পলিট ব্যুরোতে বঙ্গবন্ধুর দুজন প্রতিনিধি থাকবেন। ‘(বঙ্গবন্ধুসহ) এই ৩ জন আর আমরা ৪ জন।’

‘এই ৪ জন কে?’— প্রশ্নের জবাবে কাজী জাফরকে অবাক করে দিয়ে শেখ মনি এরপর বলেছিলেন, ‘আমি, তুমি, মোহাম্মদ ফরহাদ এবং সিরাজুল আলম খান।’

কাজী জাফর লিখেছেন, ‘আমি তো একেবারেই অবাক। শেখ মনি বলে কী? ৪ জনের চার রাজনীতি, তাদের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক ধারা। এই ৪ জনের মধ্যে সমন্বয় কীভাবে করবে? আমার মনে হয়, তারা আবেগের বশবর্তী হয়ে এই চিন্তাভাবনা করছে।’ শেখ মনিকে কথাটা বলেছিলেনও কাজী জাফর— ‘এটা সম্ভব হবে?’

শেখ মনির জবাব ছিল, ‘কেন হবে না? অবশ্যই সম্ভব হবে। আমরা যারা ’৬২-এর (শিক্ষা কমিশনবিরোধী) আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করেছি, যে ’৬২-এর আন্দোলন ভাষা আন্দোলনের পর সবচেয়ে বড় আন্দোলন, যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তরুণ নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়েছে, সেই তরুণ নেতৃত্বই আগামী দিনে বাংলাদেশকে পরিচালনা করবে এবং কমপক্ষে ৩-৪ দশক নেতৃত্ব দেবে। কারণ, আমাদের মধ্যে একটি নতুন চিন্তাভাবনা আছে।’

চারজনের বিপরীতমুখী চিন্তাভাবনা, আদর্শ, নীতি ও কর্মসূচি ধরনের বিষয়গুলোর সমন্বয় কীভাবে করা যাবে— এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ মনি বলেছিলেন, ‘এগুলো করা যাবে। আলোচনার জন্য আমাদের বসতে হবে। কবে বসবে?’

সরাসরি উত্তর না দিয়ে কাজী জাফর তার দল ইউনাইটেড পিপ্লস পার্টি—ইউপিপির অন্য সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে শেখ মনিকে জানানোর কথা বলে বিষয়বস্তু পরিবর্তন করেছিলেন। তারও আগে এবং আলোচনার মধ্যেও শেখ মনি কাজী জাফরকে ‘মামার’ অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। দলের সবার সঙ্গে আলোচনার কথা শুনে শেখ মনি বলেছিলেন, ‘চিন্তাভাবনার কথা বাদ দে। দেখবে কোনো দিন তোমার লাশ রাস্তায় পড়ে থাকবে। আর আমাকে সে লাশ এনে দাফনকাফন করতে হবে। এমনকি তোমার পরিবারকেও আমাকেই চালাতে হবে।’

এই পর্যায়ে এসে কাজী জাফর লিখেছেন, ‘একদিকে তার (শেখ মনির) অন্তরিকতা, অন্যদিকে তার এ ধরনের কথা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। আমি যখন পেছনের দিকে তাকাই তখন দেখি, শেখ মনি আমাকে যা বলেছিল তার বন্ধুত্বের দাবি আর আন্তরিকতা নিয়েই বলেছিল।’

শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং আলোচনার এ ঘটনাগুলো কাজী জাফরের আত্মজীবনী ‘আমার রাজনীতির ৬০ বছর : জোয়ার-ভাটার কথন’-এর ২৯৫-৯৮ পৃষ্ঠায় ‘শেখ মনির সাথে সাক্ষাৎ’ শিরোনামে একটি অধ্যায়ে ছাপা হয়েছে। এর পরপর ‘লন্ডন যাত্রা’ শিরোনামের অধ্যায়ে কাজী জাফর জানিয়েছেন, জীবনের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যৎ করণীয়র প্রয়োজনে গোপনে লন্ডন যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তার তখন কোনো পাসপোর্ট ছিল না। তা ছাড়া সরকারবিরোধী রাজনৈতিক পরিচিতির কারণে এবং তার নিজের ও দলের অন্য কয়েক নেতার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় পাসপোর্ট পাওয়াটাও অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। সে অবস্থায় কাজী জাফর রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকার একটি বাসায় মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম কামারুজ্জামানের সঙ্গে গোপনে সাক্ষাৎ করেছিলেন (১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ যে চার জাতীয় নেতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল, জনাব কামারুজ্জামান ছিলেন তাদের একজন)।

১৯৫০-এর দশকে রাজশাহী কলেজের ছাত্র থাকার দিনগুলো থেকে জনাব কামারুজ্জামানের সঙ্গে কাজী জাফরের পরিচয় ও সম্পর্ক ছিল। কাজী জাফর বর্ণিত এবারের ঘটনার মধ্য দিয়েও সেকালের রাজনীতিকদের ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক প্রসঙ্গে ধারণা পাওয়া যাবে।

কাজী জাফরকে দেখে বিস্মিত হয়ে জনাব কামারুজ্জামান বলেছিলেন, ‘তুমি আমাদের বিরুদ্ধে রাজনীতি করছ, তোমার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা, তুমি আমার সাথে দেখা করতে এসেছ। কী ব্যাপার?’

জবাবে কাজী জাফর বলেছিলেন, ‘আমি আপনার সাথে মন্ত্রী কিংবা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেখা করতে আসিনি। আমি এসেছি হেনা ভাইয়ের সাথে দেখা করতে।’ উল্লেখ্য, ‘হেনা’ জনাব কামারুজ্জামানের ডাকনাম এবং রাজশাহীতে ও রাজনৈতিক অঙ্গনের ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে তিনি ‘হেনা’ নামেই পরিচিত ও জনপ্রিয় ছিলেন। নেতাকে দুর্বল করার কৌশল হিসেবে কাজী জাফর তাকে হেনা ভাই বলে ডেকেছিলেন। এতে কাজও হয়েছিল। পাসপোর্টের কথা শুনে তিনি বলেছিলেন, ‘তোমার নামে তো গ্রেফতারি পরোয়ানা।’ কাজী জাফর বলেছিলেন, ‘গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে বলেই তো আপনার কাছে এসেছি।’ জনাব কামারুজ্জামান দ্বিধান্বিত অবস্থায় বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে কাজটা করা কি আমার ঠিক হবে?’ জবাবে কাজী জাফর বলেছিলেন, ‘আপনার জন্য ঠিক হবে। কারণ, আপনার পারিবারিক ঐতিহ্য আছে।’

জনাব কামারুজ্জামান তখন ‘কাগজটা দাও’ বলে পাসপোর্টের আবেদন ফরম হাতে নিয়ে তাতে কাজী জাফরের নামে পাসপোর্ট ইস্যু করার জন্য সুপারিশ করে স্বাক্ষর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘দেখ, কেউ যেন জানতে না পারে।’ সম্মতিসূচক ঘাড় নেড়ে কাজী জাফর জনাব কামারুজ্জামানের সুপারিশসহ আবেদনের ফরমটি দ্রুত ভাঁজ করে পকেটে ঢুকিয়েছিলেন। কাজী জাফর জানিয়েছেন, পাসপোর্টের আবেদন ফরমে নিজের ছবি দিলেও নাম পাল্টে দিয়েছিলেন জাহিদ ইকবাল। কিন্তু জনাব কামারুজ্জামান সেটা খেয়াল করেননি। কাজী জাফর প্রসঙ্গত লিখেছেন, ‘এমনই ছিলেন এএইচএম কামারুজ্জামান। আমি শুনেছি, বিরোধী দলের যখনই কেউ তার কাছে সাহায্যের জন্য যেতেন তিনি সাহায্য করতেন। অত্যন্ত নিখাদ একজন মানুষ ছিলেন (জনাব কামারুজ্জামান)।’

এভাবেই অন্য নাম ও চট্টগ্রামের একটি ঠিকানা দিয়ে পাসপোর্ট করিয়েছিলেন কাজী জাফর। এর দিন কয়েক পর তিনি চট্টগ্রাম থেকে কলকাতা হয়ে লন্ডন চলে গিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের আগস্ট হত্যাকাণ্ডের খবর তিনি লন্ডনে বসেই শুনেছিলেন। সে কাহিনীও রয়েছে কাজী জাফরের আত্মজীবনীতে। কিন্তু এখানে প্রথমে শেখ ফজলুল হক মনির এবং পরে জনাব কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলোচনার বিষয় উল্লেখের উদ্দেশ্য আসলে এ কথা জানানো যে, প্রকাশ্য রাজনীতিতে মতপার্থক্য ও বিরোধিতা থাকলেও একটা সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিকদের মধ্যে অত্যন্ত মধুর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। তাদের রাজনৈতিক বিরোধিতার মধ্যে যেমন লোক দেখানোর কোনো উপাদান বা উদ্দেশ্য ছিল না, তেমনি তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কও ছিল নিখাদ।

লেখক : ইতিহাস গবেষক

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads