• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
রোহিঙ্গাদের নিজভূমে ফেরার প্রত্যাশা

রোহিঙ্গা ক্যাম্প

সংগৃহীত ছবি

মতামত

ভিন্নমত

রোহিঙ্গাদের নিজভূমে ফেরার প্রত্যাশা

  • প্রকাশিত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রাবাত রেজা খান

পৃথিবীর ভাগ‍্যবিড়ম্বিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে বতর্মানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অন‍্যতম। রাখাইনে তাদের ঘরবাড়ি,  ধন-দৌলত, টাকা-পয়সা সবই ছিল। কিন্তু এখন তারা শরণার্থী এবং সহায় সম্বলহীন। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনী শুরু করে রোহিঙ্গা নিধনের অপকর্ম। শুরু হয় সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কট। প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা ছুটে আসে বাংলাদেশে। প্রথমে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দিলেও পরে বর্তমান সরকার মানবিকতার পরিচয় দিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রবেশের অনুমতি দেয়। ফলে বছরজুড়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা স্রোত অব্যাহত থাকে।

সম্প্রতি এএফপির এক রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২৯ হাজার জন, এই দিনই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাখাইনে রোহিঙ্গা নিপীড়নের ব‍্যাপারে প্রথমবারের মতো উন্মুক্ত বিতর্ক হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিষয়ে তাদের মতামত প্রদান করে।

৩১ অক্টোবর জাতিসংঘের তৃতীয় কমিটিতে মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই দিনে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৭ হাজার। মানবাধিকার কোথায় গিয়ে পৌঁছালে এক মাসের ব‍্যবধানে ২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে? গত বছর ২৩ নভেম্বর নেইপিডোতে রোহিঙ্গা প্রত‍্যাবাসনের ব‍্যাপারে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও একজন রোহিঙ্গাও রাখাইনে ফিরে যেতে পারেনি।

চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল রোহিঙ্গাদের দেখতে বাংলাদেশে আসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদল। এ সময় বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৯৩ হাজার। সর্বশেষ ১ জুলাই বিশ্বব‍্যাংকের প্রেসিডেন্টকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি রোহিঙ্গা এলাকাগুলো ঘুরে দেখেন।

কিছু দিন আগে আঞ্চলিক সংস্থা আসিয়ানের পাঁচ দেশের ১৩২ জন সংসদ সদস্য মিয়ানমারকে আইসিসির আদালতে নেওয়ার জোর দাবি জানান। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদলের আগমন, জাতিসংঘের মহাসচিবের আগমন, আসিয়ানের বিবৃতি, কয়েক দিন আগে কানাডা মিয়ানমারকে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা, বাংলাদেশের উৎকণ্ঠা, সর্বোপরি বিশ্বমানবতার উদ্বেগ কোনো কিছুই মিয়ানমারকে টলাতে পারেনি এবং একজন রোহিঙ্গাকেও তারা ফেরত নেয়নি।

বছর ধরে নানামুখী বৈশ্বিক চাপেও এখনো অনড় মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ মিয়ানমার এখনো নেয়নি। তাই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের কার্যত কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। রোহিঙ্গা প্রত‍্যাবাসনের ব‍্যাপারে গত জুন মাসে ইউএনডিপি ও ইউএনএইচসিআরের মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল সেটিও এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে।

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচিও রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে নীরব থেকেছেন। রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের উন্নয়নে ২০১৬ সালে আনান কমিশন গঠিত হলেও মিয়ানমার সরকার তা বাস্তবায়ন করেনি বরং সুচি বলেছেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের অধিবাসী নয়। সুচির কথায় এটা স্পষ্ট যে, মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত‍্যাবাসনে কখনোই আন্তরিক নয়। টালবাহানা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি অন‍্যদিকে সরিয়ে দেওয়াই তাদের মূল লক্ষ্য। তাই বৈশ্বিক চাপ ও মানবিকতার দোহাই কোনোটাই টলাতে পারেনি সুচি ও মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারকে।

তবে থেমে নেই রোহিঙ্গাদের জীবন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য ৮০০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছে। পূর্বের তুলনায় রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রার মান একটু উন্নত হয়েছে। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিজস্ব দেশ নয়। রোহিঙ্গাদের নিজস্ব দেশ আছে, ভূখণ্ড আছে। নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা পেলে তারা নিজ দেশে ফিরে যাবে। এই স্বপ্নটা রোহিঙ্গারা নিজেরাও দেখে। নিজ দেশে সবকিছু থাকতে কেউ কখনো পরদেশে শরণার্থী হয়ে থাকতে চায় না।

এত কিছুর পরও একটা প্রশ্ন ধ্বনিত হয়, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কি রাখাইনে আর কোনোদিন ফিরতে পারবে? উত্তরটি  আমরা জানি না, এমনকি জানে না ভাগ্যবিড়ম্বিত রোহিঙ্গারাও।

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads