• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
বিএনপির নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ

লোগো বিএনপি

মতামত

বিএনপির নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ

  • মহিউদ্দিন খান মোহন
  • প্রকাশিত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট ও ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম আহূত ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’র সমাবেশে হাজির হয়েছিলেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। সে সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার  মোশাররফ হোসেন ও ড. আবদুল মঈন খান বক্তৃতা করেছেন। পত্রিকার খবর অনুযায়ী ওই সমাবেশে উপস্থিত মানুষের নব্বই শতাংশ ছিল বিএনপি নেতাকর্মী-সমর্থক। যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের লোক ছিল অতি নগণ্য। সমাবেশের যে বিবরণ পত্রিকায় এসেছে তাতে দেখা যায়, বিএনপির মূল দাবি তাদের দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়কে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যদিও সমাবেশে পঠিত ঘোষণাপত্রে কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার ‘আইনগত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার’ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে। অবশ্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বি. চৌধুরী বেগম জিয়ার মুক্তি দাবির কথা তাদের বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। তবে ঐক্য প্রক্রিয়ার মূল ঘোষণাপত্রে সে দাবির কথা উল্লেখ না থাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। আরো লক্ষণীয় যে, বিএনপি নেতারা দলীয় সভা-সমাবেশে কিংবা সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা ও আদালতের রায় বাতিলের দাবি জানালেও ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে তারা তারেক রহমানের নামটিও উল্লেখ করেননি। বোঝা যায়, এ বিষয়ে ঐক্য প্রক্রিয়ার পূর্ব সিদ্ধান্তকেই তারা অবনত মস্তকে মেনে নিয়েছেন।

ড. কামাল-বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ঐক্য প্রক্রিয়া এখনো চূড়ান্ত রূপ লাভ করেনি। বলা হয়েছে এর গঠন প্রক্রিয়া কেবল শুরু হলো, অচিরেই তা পূর্ণ অবয়বে দৃশ্যমান হয়ে উঠবে। এ নিবন্ধ লেখাকালীন (২৬/০৯/২০১৮) ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা মতবিনিময় করছেন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে দেশের বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তারা মতবিনিময় করবেন। এরপর তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল সফর করে জনমত গঠন করবেন। তারপরই প্রস্তাবিত জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করা হবে।

বিএনপির কয়েক নেতা ২২ সেপ্টেম্বরের সমাবেশে বক্তৃতা করলেও দলের একটি বড় অংশ এ ঐক্য প্রক্রিয়ায় শামিল হওয়ার বিরোধী। বিরোধিতা আছে দীর্ঘদিন একসঙ্গে পথচলা জামায়াতে ইসলামী এবং এলডিপির সঙ্গেও। জামায়াতকে বাদ দিয়ে বিএনপি শেষ পর্যন্ত ঐক্য প্রক্রিয়ার অংশীদার হতে পারবে কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ ইতোমধ্যেই তার দ্বিমত ও অসন্তোষের কথা সরাসরি গণমাধ্যমে বলেছেন। আর জামায়াতে ইসলামী কিছুটা কৌশল অবলম্বন করে বলেছে, যেহেতু এটা ২০-দলীয় জোটের বাইরে একটি প্রক্রিয়ার বিষয়, তাই তারা এই নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাবে না। যদি ২০-দলীয় জোট থেকে তাদের বাদ দেওয়ার কথা বলা হতো, তাহলে তারা কথা বলত। এদিকে সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলের নেতৃবৃন্দকে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, কোনোভাবেই ২০-দলীয় জোট ভাঙা যাবে না। এই নিয়ে বিএনপির ভেতরেও রয়েছে টানাপড়েন। জামায়াতকে ফেলে ঐক্য প্রক্রিয়ায় গেলে কতটুকু লাভ হবে সে পর্যালোচনাও হচ্ছে। ভোটের বাজারে বি. চৌধুরী-ড. কামালের চেয়ে জামায়াতের দর বেশি এবং বিএনপির কাঙ্ক্ষিত ফল লাভের ক্ষেত্রে বিরাট ফ্যাক্টর, তাও মাথায় রাখা হচ্ছে।

সবকিছু ছাপিয়ে যে প্রশ্নটি সর্বত্র আলেচিত হচ্ছে তা হলো, যেভাবে যে প্রক্রিয়ায় বিএনপি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় নাম লেখাতে চাচ্ছে, তা দলটির জন্য কতটা সম্মানজনক? পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, বি. চৌধুরীর মান ভাঙাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গত ২১ সেপ্টেম্বর তার বাসায় যান। সেখানে তারা অতীতে বি. চৌধুরীর সঙ্গে বিএনপির অপ্রীতিকর কর্মকাণ্ডের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তারা জাতির এই ‘চরম ক্রান্তিলগ্নে’ বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়তে তাকে নেতৃত্ব দেওয়ার অনুরোধ করেন। (সূত্র : সমকাল, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮)। এ ঘটনা বিএনপির একটি বড় অংশ মেনে নিতে পারছে না। কেননা, ‘অতীত অপ্রীতিকর কর্মকাণ্ড’ বললে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে বি. চৌধুরীর পদত্যাগের বিষয়টি এসে যায়। অথচ, ওই সময় তা ঘটেছিল দলের সংসদীয় কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে (একমাত্র বি. চৌধুরীপুত্র মাহী ছাড়া)। আর তাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রকাশ্য সমর্থন ছিল। এখন যদি সে ঘটনার জন্য বিএনপি দুঃখ প্রকাশ করে বা ক্ষমা চায়, তাহলে এটা প্রমাণ হয়ে যায় যে, সেদিন বিএনপি অন্যায়ভাবে তাকে রাষ্ট্রপতি পদ ছাড়তে বাধ্য করেছিল। তা ছাড়া অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য দুঃখ প্রকাশ তথা ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দলের চেয়ারপারসন আদৌ দিয়েছেন কি-না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে। গণভিত্তিহীন একটি গ্রুপের সঙ্গে কথিত ঐক্য করার জন্য বিএনপির এই পাগলপারা হয়ে ওঠাকেও ভালো চোখে দেখছেন না দলটির শুভানুধ্যায়ীরা। তাদের মতে, বর্তমানে বিএনপি বেশ বেকায়দা ও হীনবল অবস্থায় আছে এটা ঠিক। সাংগঠনিক দুর্বলতাও প্রকট। তাই বলে ভোটযুদ্ধে এককভাবে আওয়ামী লীগের মোকাবেলায় দলটি একেবারেই অক্ষম হয়ে পড়েছে এমনটি নয়। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, সরকারের বাইরে থাকা দেশের সবচেয়ে বড় দল হওয়া সত্ত্বেও বিএনপিকে অনুগামী হতে হচ্ছে বি. চৌধুরী-ড.কামালের মতো গণভিত্তিহীন নেতাদের। এটা বিএনপির জন্য অসম্মানজনক। তা ছাড়া ষোল বছর পর অতীতের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তাকে নেতৃত্ব নেওয়ার অনুরোধ করা বি. চৌধুরীর কাছে বিএনপির নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের শামিল।

সবাই বলছেন, ডা. বি. চৌধুরী ২২ সেপ্টেম্বরের সমাবেশে যে ভাষায় বর্তমান সরকারকে আক্রমণ করে বক্তৃতা করেছেন, তেমনি ভাষায় তিনি ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। সে সময় তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ‘চোরের মা’, ‘চোরনি’ বলেও অভিহিত করেছেন। তিনি বিএনপি সরকারকে দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসী বলে নিন্দা করেছেন। ২০০৬ সালের ৬ নভেম্বর তিনি তার দল বিকল্প ধারার এক সভায় বলেছিলেন, ‘খালেদা জিয়া ও তার পুত্র দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে। চুরি করেছে আড়াই লাখ কোটি টাকা।’(সূত্র : দৈনিক জনকণ্ঠ, ৭ নভেম্বর, ২০০৬)। আর তার ছেলে মাহী চৌধুরী তারেক রহমানকে সন্ত্রাসীদের নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। এমনকি বিএনপিকে এক হাত দেখে নেওয়ার জন্য বি. চৌধুরী আওয়ামী লীগের মহাজোটে ভিড়তে চেয়েছিলেন এবং এ বিষয়ে শেখ হাসিনার চিঠি নিয়ে বার্তাবাহক হয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের বাসায় যেতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি! তথ্য-প্রমাণভিত্তিক এমন উদাহরণ অনেক দেওয়া যাবে। তাতে নিবন্ধের কলেবর বেড়ে যাবে। তাই সেদিকে যাচ্ছি না। শুধু সে সময় নয়, অতিসম্প্রতি একাধিক টিভি টক শো’তে মাহী চৌধুরী তারেক রহমান সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ভেতর প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই নিয়ে নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় বইছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে বি. চৌধুরী ‘খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির’ মুক্তির কথা উচ্চারণ করলেও এখনো তিনি পুরনো ক্ষোভ ভুলতে পারেননি। আর সে জন্যই ঘোষণাপত্রে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের মুক্তি বা তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়নি।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিএনপি নেতাদের বি. চৌধুরীর বাসায় গিয়ে অতীত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা দলটির নেতৃত্বের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বই প্রমাণ করে। আত্মমর্যাদাবোধ আছে এমন কোনো দল বা নেতারা এ ধরনের আত্মঘাতী কাজ করতে পারেন না। ভেতরের খবর হলো, বি. চৌধুরী শর্ত দিয়েছিলেন, বিএনপিকে ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’য় আসতে হলে তার কাছে অতীত সব ঘটনার জন্য মাফ চাইতে হবে এবং তার নেতৃত্ব মানার প্রকাশ্য ঘোষণা দিতে হবে। এই নিয়ে কয়েক দিন ‘টাগ অব ওয়ার’ চলার পর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের আপসকামী অংশটি বি. চৌধুরীর কাছে দুঃখ প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়। সে মোতাবেক সমাবেশের আগের দিন তারা বাসায় গিয়ে কাজটি সেরে আসেন।

এ লেখাটি যখন লিখছি, তখন টেলিফোনে আমার উপজেলা (মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর) বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন বললেন, ‘বিএনপি অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য বি. চৌধুরীর কাছে ক্ষমা চেয়ে এলো। কিন্তু ওই সময়ে বি. চৌধুরী ও তার ছেলে মাহী বিএনপি, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সম্পর্কে কুৎসিত ভাষায় যেসব কথা বলেছে, তার জন্য তো তারা দুঃখ প্রকাশ করল না! তাহলে কি ধরে নিতে হবে, বি. চৌধুরী ও মাহী যেসব অভিযোগ খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সম্পর্কে করেছেন, তা মেনে নিয়েছেন মির্জা আলমগীর সাহেবরা?’ বিস্মিত হলাম মফস্বলের উপজেলা পর্যায়ের একজন বিএনপি নেতার চিন্তার গভীরতা দেখে। সত্যি তো, বি. চৌধুরী এবং মাহী যদি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে তাদের বলা অশালীন কথাবার্তার জন্য দুঃখ প্রকাশ না করেন, ভুল স্বীকার না করেন, তাহলে তো এখন তাদের সেসব অভিযোগ সত্যতার ভিত্তি পেয়ে যাবে!

সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর বি. চৌধুরীর বারিধারা বাসায় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের বৈঠকে যে ঘটনা ঘটেছে, তা বিএনপির আত্মসম্মানে লাগার কথা। ওইদিনের বৈঠকে বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব ও বি. চৌধুরীপুত্র মাহী বলেছেন, বিএনপিকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় আসতে হলে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের ঘোষণা দিয়ে আসতে হবে। বৈঠকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বিকল্প ধারার ঢাকা মহানগর ও তিনটি অঙ্গ-সংগঠনের নেতাদের একটি যৌথ আবেদনপত্র ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনাকে গণমাধ্যমগুলো বিএনপির ঐক্য প্রক্রিয়ায় শরিক হওয়ার বিরুদ্ধে বিকল্প ধারার বিদ্রোহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বিএনপি বিকল্প ধারার করুণার পাত্রে পরিণত হয়েছে!

ঐক্য প্রক্রিয়ার প্রতি অতি আগ্রহ এবং তাতে যোগ দেওয়ার সুযোগ লাভের আশায় বিএনপি নেতাদের বি. চৌধুরীর বাসায় গিয়ে দুঃখ প্রকাশের ঘটনা এবং মাহী চৌধুরীর কর্মকাণ্ড দলটির সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীরা মেনে নিতে পারছেন না। এটাকে তারা ‘অতিলাভের আশায় চালান খোয়ানোর সর্বনাশা ব্যবসা’ বলে মনে করছেন। কিন্তু ক্ষমতার সোনার চাবি হাতে পেতে উদগ্র হয়ে ওঠা বিএনপি নেতাদের তা উপলব্ধি করার ফুরসত এ মুহূর্তে আছে কি-না সেটাই প্রশ্ন।

ম হি উ দ্দি ন  খা ন  মো হ ন

লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads