• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
চেতনার বাংলাদেশ প্রেরণার বাংলাদেশ

আকর্ষণীয় প্রবৃদ্ধির পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ

মতামত

চেতনার বাংলাদেশ প্রেরণার বাংলাদেশ

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

উন্নয়নে বিশ্বময় ঈর্ষার কারণ বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক সবগুলো নির্দেশককে ইতিবাচক সম্ভাবনায় নিয়ে আকর্ষণীয় প্রবৃদ্ধির পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ। উন্নয়নে রোল মডেল বাংলাদেশ। এখন শুধু এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। এই বাংলাদেশ প্রেরণার বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশ চেতনার বাংলাদেশ। দুর্যোগ, জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি, সীমিত সম্পদ আর রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও উন্নয়নে অভূতপূর্ব সফলতা দেখিয়ে বিশ্বে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। স্বাধীনতা অর্জনের পর পথ হারানো দেশটি আবারো ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ পারে, বাংলাদেশ পারবে। তলাবিহীন ঝুড়ির কালিমা কাটিয়ে আশার আলোয় আলোকিত বাংলাদেশ সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিচ্ছে— আমরা বাঙালি, আমরাই পারি।

বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন অনন্য উদাহরণ। দুর্যোগ সহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশের নাম। বিশ্বশান্তি রক্ষায় শান্তি রক্ষা মিশনে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে মানবীয় রাষ্ট্রের সুখ্যাতি পেয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে দক্ষিণ এশিয়ায় বেশি সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। গার্মেন্ট পণ্য রফতানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ধান উৎপাদনে পৃথিবীতে চতুর্থ। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বে অষ্টম। মিষ্টি পানিতে মাছ উৎপাদনে বিশ্বে পঞ্চম এবং চাষের মাছ উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে বাংলাদেশ। ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার তালিকায় ১১তম। বাংলাদেশের ওষুধ এখন ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার ৮০টি দেশে রফতানি হচ্ছে। জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রেও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে, ফল উৎপাদন বৃদ্ধির হারের ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম। আম উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম। পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম। স্যানিটেশন, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও সেবা, প্রযুক্তির সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের মেলবন্ধন, খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলা, মৎস্য উৎপাদন, ইলিশ উৎপাদনে দৃষ্টান্ত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পোশাক রফতানি প্রভৃতি খাতে বাংলাদেশের সাফল্য এখন বিশ্বের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর কাছে অনুসরণীয়। বিশ্বে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এখন বিস্ময়কর বলে মনে করা হয়। কারণ অবিশ্বাস্যভাবে দেশের অর্থনীতি ইতিবাচক সূচকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্রযুক্তির বিপ্লব, কৃষি ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের জাগরণ, শিল্প সম্ভাবনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির ধরন। কৃষি থেকে শিল্পের পথে ঘুরছে অর্থনীতির চাকা। সবদিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় আশার ব্যাপারটি হচ্ছে প্রায় পাঁচ কোটি তরুণের মেধা, মনন এখন বাংলাদেশের উন্নয়নে বিপ্লব ঘটাতে প্রস্তুত। আন্তর্জাতিক গোল্ডম্যান স্যাঙ্কস সংস্থার জরিপে বলা হয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে পরবর্তী সম্ভাবনাময় এগারোটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সেখানে বলা হয়, দেশটির জনসংখ্যার বেশিরভাগই তরুণ। যাদের কাজে লাগালে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বদলে দেওয়া সম্ভব। লন্ডনের জাতীয় দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, প্রবৃদ্ধির বিচারে ২০৫০ সালে বাংলাদেশ পশ্চিমা দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে যাবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগানে উজ্জীবিত বর্তমান প্রজন্ম। তাই নিজেদের মতো করে সবাই নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি করছে। প্রযুক্তি নতুন প্রজন্মের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে অবারিত কাজের সুযোগ। স্বউদ্যোগে স্বাবলম্বী হওয়া মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে খুব দ্রুতগতিতে।

২০১৩ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গ্রামবাংলায় নিজের উদ্যোগ ও উদ্যমে অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হওয়া নারীর সংখ্যা ১৮ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সংখ্যা আরো বেশি। নানামুখী উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সফলতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ। অনেক ক্ষেত্রে রফতানি স্বনির্ভর দেশও।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটার হাউজ কুপারসের (পিডব্লিউসি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষ তিনটি দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এ সময় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ভিত্তিতে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৩তম বড় অর্থনীতির দেশ। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের সৃজনী কর্মক্ষমতা, সহনশীলতা, দুর্যোগ মোকাবেলায় পারদর্শিতা সর্বোপরি উন্নয়নের ধারায় বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে রোল মডেল। বাংলাদেশের ব্যক্তি উদ্যোগ, সামাজিক উদ্যোগ, দেশের আপামর জনগণের মেধা, পরিশ্রম, সৃজনশীলতা, ধৈর্য ও সাহস দেশের উন্নয়ন ধারায় গতি সঞ্চার করেছে। তবে বলতেই হবে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত যা কিছু অর্জন তার অধিকাংশই দেশের সাধারণ মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের মধ্যে বিশেষত খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বাংলার কৃষক এবং উৎপাদন ও রফতানিতে বাংলার শ্রমিকদের অসামান্য অবদানকে স্যালুট জানাতেই হয়। বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের ক্ষেত্রে প্রবাসী বাঙালিদের অনন্য অবদান। নারীর অগ্রযাত্রা অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করতে নতুন আশাবাদ সৃষ্টি করেছে। তা ছাড়া ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের অবদান, পেশাজীবীসহ সর্বসাধারণের অনন্য অবদান দেশের সার্বিক উন্নয়নে স্মরণীয়। প্রায় পাঁচ কোটি তরুণকে যোগ্যতা অনুসারে কাজ দিতে পারলে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যাবে আগামী দশ বছরে। সব বাধা পেরিয়ে উন্নয়নের জাগরণে উজ্জীবিত বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, এটাই প্রত্যাশা।

 

এস এম মুকুল

লেখক :  প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads