• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
পথশিশুদের পুনর্বাসনে এগিয়ে আসুন

বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যার সরকারি কোনো জরিপ নেই

সংগৃহীত ছবি

মতামত

ভিন্নমত

পথশিশুদের পুনর্বাসনে এগিয়ে আসুন

  • প্রকাশিত ০৪ অক্টোবর ২০১৮

হিমেল আহমেদ

দেশের সব পথশিশুর সুরক্ষা ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিবছর ২ অক্টোবর আমাদের দেশে পালিত হয় পথশিশু দিবস। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এই দিনে পথশিশুদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে। প্রকৃত অর্থে পথশিশু কারা? কেন এদের পথশিশু বলা হয়? আসলে সব শিশুই সমান। কোনো শিশুই পথশিশু হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। রাস্তায় জন্ম এবং রাস্তাতেই যারা বসবাস করে, তাদের আমরা পথশিশু বলি। এসব শিশুর পিতা-মাতা নেই অথবা মা-বাবা আলাদা হয়ে গেছে; আবার অসচ্ছল কিংবা অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত এসব পরিবারের শিশুই পারিবারিক বন্ধন থেকে ছিটকে পড়ে। ফলে বাধ্য হয়েই এরা রাস্তায় নামে জীবন ধারণের জন্য। এদের নেই ভালো বাসস্থান, নেই পুষ্টি এবং নেই প্রয়োজনীয় বস্ত্র ও শিক্ষা। বাংলাদেশের অধিকাংশ পথশিশু ফুটপাথ, বস্তি কিংবা রেলওয়ের প্লাটফরমে ঘুমায়।

বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা আসলে কত, এ নিয়ে সরকারি কোনো জরিপ নেই। তবে বেসরকারি জরিপ অনুযায়ী এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকা অনুযায়ী, দেশে পথশিশুর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। উন্নয়ন সংস্থা সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রামের (সিপ) ‘পথশিশুদের অমানবিক জীবন ও বিভিন্ন সমস্যা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ পথশিশু রয়েছে, যাদের দেখার কেউ নেই। অর্থের অভাবে পথশিশুদের ৭৫ ভাগ ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না। অসুস্থ হলে তাদের প্রায় ৫৪ ভাগের দেখাশোনার জন্য কেউ নেই। পথশিশুদের প্রায় ৪০ ভাগ প্রতিদিন গোসল করতে পারে না। আর ৩৫ ভাগ শিশু খোলা জায়গায় শৌচ করে। খুবই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠে তারা। এভাবেই দরিদ্রতার সঙ্গে নিত্যদিন যুদ্ধ করে বেড়ে উঠছে তারা। বাংলাদেশের শতকরা ৪৫ জনই শিশু-কিশোর। আর জাতিসংঘেরও তথ্যমতে, বাংলাদেশে বাস করে প্রায় ১০ লাখ পথশিশু। এদের মধ্যে ঢাকাতেই আছে প্রায় ২ লাখ। এসব অবহেলিত পথশিশুর জীবন আজ চরম হুমকির মুখে রয়েছে। এসব শিশুর ভবিষ্যৎ রক্ষার দায়িত্ব কিন্তু বর্তায় রাষ্ট্রের ওপরই।

বাংলাদেশে অসংখ্য সামাজিক সংগঠন রয়েছে। তবু কেন পথশিশুদের জীবনে পরিবর্তন আনা সম্ভব হচ্ছে না? কেন দিন দিন পথশিশুর সংখ্যা কমার বদলে বাড়ছেই? দেশে দু-চারটি সামাজিক সংগঠন ছাড়া কজন পথশিশুদের পুনর্বাসনে কাজ করছে, তারও অনুসন্ধান জরুরি। বিভিন্ন দিবস এলেই কিছু পথশিশুকে ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। দু-একটি কাপড় আর একবেলা খাবার দিয়েই সাহায্যের নামে ফটোসেশনের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ থেকে পথশিশু শব্দটি কখনোই মুছে ফেলা সম্ভব হবে না। পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা এবং তাদের পুনর্বাসনে লোকদেখানো নীতি পরিহার করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিবেশে এই পথশিশুদের প্রভাব লক্ষণীয়। এই পথশিশুদের কারণে দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা বাড়ছে। কিশোর ও শিশু অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যমতে, পথশিশুদের ৮৫ ভাগই কোনো না কোনোভাবে মাদক সেবন করে। বর্তমানে এই মাদকাসক্ত শিশুরা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। যে শিশুদের একসময় রাষ্ট্র শাসন কিংবা লেখক, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কথা ছিল, সেই শিশুরা আজ উপযুক্ত শিক্ষা ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির মতো এহেন অপকর্ম নেই যা তারা করতে পিছপা হচ্ছে! শিশুকাল থেকে সঠিক শিক্ষার অভাব এবং গাইডলাইনের অভাবে পথশিশুরা ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ছে অসামাজিক ও অসৎ কর্মকাণ্ডে।

আমাদের দেশে রাজনীতিতেও এই পথশিশুদের ব্যবহার দেখা গেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পথশিশুদের হাতে কিছু অর্থের বিনিময়ে পেট্রোল বোমা অথবা ককটেল ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে— নিক্ষেপ করার জন্য। পথশিশু দিবস আসবে, পথশিশু দিবস যাবে; কিন্তু অবহেলায় অযত্নে থেকে যাবে আমাদের ছোট ছোট ভাইবোনেরা। তারা তো এ দেশেরই একটি অংশ। সমাজবিচ্ছিন্ন হলেও সমাজেরই অংশ। এই বিচ্ছিন্নদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের এত সংখ্যক পথশিশুকে অন্ধকারে রেখে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশের সব বিত্তবানসহ সরকারকে পথশিশুদের পুনর্বাসনে এগিয়ে আসা উচিত। এদের উপযুক্ত শিক্ষা ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।

লেখক : শিক্ষার্থী, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ

imparfectheemel@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads