• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
দেব না আমারে ভুলিতে

শিক্ষক আলোকিত মানুষ— তিনি জীবনভর আলো বিলিয়ে যান

সংগৃহীত ছবি

মতামত

দেব না আমারে ভুলিতে

  • ইউসুফ শরীফ
  • প্রকাশিত ০৫ অক্টোবর ২০১৮

আমার শিক্ষক— কথাটি এমন আলোকিত মানুষের প্রতিচ্ছবির সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়, যাদের স্নেহ-মায়া-মমতামাখা আলোকিত হাত আমি এখনো স্পর্শ করতে পারি। ময়মনসিংহ শহরের উপকণ্ঠে সুতিয়াখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মাওলা স্যারকে আমি স্পষ্ট দেখতে পাই। গোলাম মাওলা স্যার প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনার নাড়ি-নক্ষত্রের খবর রাখতেন এবং প্রয়োজনে স্কুলে ক্লাস শেষে নিজের কক্ষে বিশেষ ক্লাস নিতেন। আমি দেখতে পাই হাইস্কুলের সেই বিএসসি স্যারকে- যিনি আমাকে টিচার্স কমন রুমে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, তোমার মতো ছাত্র অঙ্কে তেত্রিশ পেলে লজ্জা আমাদের। তুমি কাল থেকে ক্লাস শেষে আমার কাছে অঙ্ক করবে— স্যারের কণ্ঠস্বর এখনো আমি শুনতে পাই। আমি শুনতে পাই আনন্দমোহন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কবীর চৌধুরী, আশরাফ সিদ্দিকী, আবদুল জলিল, মাহবুবুল আলম ও আরো অনেক স্যারের এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ মুনীর চৌধুরী, আহমদ শরীফ, কাজী দীন মুহম্মদ, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আনোয়ার পাশা এবং আরো অনেক স্যারের কণ্ঠস্বর। প্রিয় শিক্ষকদের ঘিরে যে আলোর-বলয়, তা আমি দেখেছি। সেই আলোর বলয়ে প্রবেশ কিংবা আলোয় স্নাত হয়ে আলোকিত মানুষ হতে পারা শিক্ষার্থীর নিজের গ্রহণ-শক্তির ওপর নির্ভর করে।

শিক্ষক আলোকিত মানুষ— তিনি জীবনভর আলো বিলিয়ে যান। সেই আলোয় নিজের ভেতরকার সুপ্ত মানবিকতা জাগিয়ে তুলে দায়িত্বশীল নাগরিক হবেন শিক্ষার্থী এবং কল্যাণকর সমাজ গড়ে তুলবেন। এই ন্যায়সঙ্গত প্রত্যাশা থাকে সমাজের-জাতির। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড আর শিক্ষক সেই মেরুদণ্ডের নির্মাতা। শিক্ষক যখন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন, তখন যে মেরুদণ্ড তৈরি হয়, তা জাতির দেহের ভার বহনে এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ায় সক্ষম হয়। সঙ্গত কারণেই সমাজে শিক্ষক জ্ঞানী, দায়িত্বশীল এবং মানবিক আদর্শের প্রতিভূ বলে সম্মান লাভ করে থাকেন। পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে— শিক্ষক সমাজ নিয়ে এই ধ্যান-ধারণার ন্যূনতম কোনো ব্যত্যয়ের খবর আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগে কালেভদ্রে শোনা গেছে। বরং তখন দেখা গেছে, শিক্ষকদের মানবিক-আদর্শের শিখরস্পর্শী উচ্চতা এবং দরিদ্র-মেধাবীসহ সব ছাত্রছাত্রীর প্রতি শিক্ষকদের অপরিসীম মমতা! দরিদ্র অভিভাবকরা যাতে মেধাবী ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে না দেন, সে জন্য শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের বুঝিয়েছেন। স্কুলে বিনা বেতনে বা অর্ধেক বেতনে তাদের পড়ার জন্য ফ্রি বা হাফ-ফ্রি করিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ শিক্ষকরাই নিয়েছেন। এ ধরনের ছাত্রছাত্রীর বইপত্র জোগাড় করা থেকে শুরু করে পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকাও স্কুল ফান্ড থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা অধিকাংশ সময়ে করেছেন শিক্ষকরা। শুধু তাই নয়, মেধাবী ছাত্রদের বিনা ফিতে বিশেষ কোচিংও দিয়েছেন শিক্ষকরাই। অতীতে এবং আজো এদেশে জীবনে যারা প্রতিষ্ঠিত ও সফল, তাদের অনেকের ছাত্রজীবনেই শিক্ষকদের এ রকম মমত্বের পরশমাখা স্মৃতি কম-বেশি রয়েছে। সেদিন শিক্ষকরা যদি মেধাবী দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার পথ কণ্টকমুক্ত রাখার জন্য এ দায়িত্ব পালন না করতেন, তাহলে পরবর্তী সময়ে অনেক সফল মানুষের মেধা-মনন ও কর্মের সেবা থেকে জাতিকে বঞ্চিত হতে হতো। এ কাজগুলো শিক্ষকরা করতেন, কারণ এগুলোকে সমাজে শিক্ষক হিসেবে তাদের দায়িত্বের অংশ মনে করতেন এবং ব্যক্তিগতভাবে এবং বাস্তবক্ষেত্রেও তারা যথেষ্ট মানবিক ও দায়িত্বশীল ছিলেন। ক্ষুদ্র-হীন ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধির লক্ষ্যে কোনো বেনিয়া মনোবৃত্তি তাদের কখনো কাবু করতে পারত না।

আজকাল এই দায়িত্বশীলতা কতটা বহাল আছে, তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই যে কথাবার্তা শোনা যায়, তা একেবারে অমূলক বলে মনে করা যাবে কি? যেসব কথা বলা হয়ে থাকে, তার মধ্যে রয়েছে— কোনো বছরই পাবলিক পরীক্ষার ফল-শিটের উপরের দিকে গ্রাম বা মফস্বল থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের নাম কিংবা দরিদ্র মেধাবী ছাত্রদের অস্তিত্ব আগেকার মতো লক্ষ্য করা যায় না। ভালো শিক্ষা, ভালো ফল— এসবই এখন যেন চড়া দামে ক্রয় করার বিষয়ে পরিণত হয়েছে! টাকা থাকলে ভালো স্কুলে ভর্তি হওয়া যায়, ভালো শিক্ষক রেখে ভালো পড়াশোনা করা যায় এবং পরীক্ষায় ভালো ফল করা যায়। দরিদ্র, নিম্নবিত্ত এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা আজ এক্ষেত্রে অনিবার্যভাবে পিছিয়ে পড়ছে। তারা কি পিছিয়েই থাকবে এবং যারা যেকোনো উপায়ে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা করায়ত্ত করতে পারছে, তাদের সন্তানরাই কি শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে? শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার অর্থ তো কর্মক্ষেত্রেও এগিয়ে যাওয়া। তাহলে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা তাদের ভাগ্য উন্নয়নের সুযোগ কীভাবে পাবে? তারা কি কোনো সুযোগই পাবে না? তদুপরি দেশে নানা রকমের শিক্ষার প্রচলন রয়েছে। শিল্প-প্রযুক্তি ও তথ্য-প্রযুক্তির বিশেষায়িত শিক্ষার ব্যাপক প্রচলন এখনো অপেক্ষমাণ। সর্বোপরি দায়িত্বশীল শিক্ষার জন্য দেশের সব শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষাদীক্ষার যে মান অপরিহার্য, তা নিশ্চিত করার প্রতি মনোযোগের অভাবও কম নয়।

খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা— এই মৌলিক বিষয় বা সেবা সমভাবে পাওয়ার অধিকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের। এদেশে শিক্ষালাভের ক্ষেত্রে কি আদৌ কোনো সমতা রক্ষা করা যাচ্ছে? সমতা প্রতিষ্ঠা করা কি সম্ভব হয়েছে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রেও? এসব প্রশ্নের ইতিবাচক জবাব হয়ত অচিরেই দেওয়া যাবে, আর তখন তা হবে আনন্দময়-সুুখকর। তবে এ কথা বলতে হবে যে, শিক্ষাক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। পরীক্ষায় নকল বা অসদুপায় অবলম্বন অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে, মেয়েদের শিক্ষা নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক হওয়ায় নারী শিক্ষা উদ্দীপ্ত হয়েছে, উপবৃত্তি চালু করায় ড্রপআউট সমস্যাও কিছুটা দূর করা গেছে। এসবই ঠিক এবং প্রয়োজনীয়ও বটে। তবে এরপরও বাকি রয়েছে গেছে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সব পর্যায়কে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত রাখা এবং শিক্ষা-ব্যবস্থাকে সত্যিকারভাবে উন্নত মান এবং আধুনিক আলো-বিস্তারী করে তোলা।

শিক্ষা বিভাগে দুর্নীতি একসময় ছিল অকল্পনীয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে এবং এই বিভাগটি অন্য সব বিভাগকে টেক্কা দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। কোনো জাতির শিক্ষাক্ষেত্র দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় আর কিছু থাকতে পারে না। শিক্ষা হলো জাতির নৈতিকতা, মূল্যবোধ, চারিত্রিক দৃঢ়তা, কল্যাণকামিতা— এসবকে ধারণ করার অনুশীলনের ক্ষেত্র। এখানে অনিয়ম-দুর্নীতি অনুপ্রবেশের কোনো অবকাশই থাকার কারণ নেই। দ্বিতীয়ত, জাতীয় আবেগ-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একুশ শতকের আধুনিক জীবন বাস্তবতার দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষাসূচি-শিক্ষাক্রম সংস্কার করার প্রক্রিয়াটি এখনো অপেক্ষমাণই রয়ে গেছে। বাস্তব জীবনে কার্যকর আধুনিক মানের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেধাবী, যোগ্য, দক্ষ, অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগসহ মানবিক-দায়িত্বশীল শিক্ষার নিরবচ্ছিন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। কোনো সরকার যদি শুধু দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করে ঢেলে সাজিয়ে মজবুত ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, তাহলে এ জাতির ইতিহাসে তাদের এই দায়িত্বশীল ভূমিকা হবে চিরদিনের জন্য গৌরবময়।

দায়িত্বহীনতা যেকোনো জাতির জীবনে এক মারাত্মক অসুখ। এই অসুখ থেকে মুক্ত থাকার জন্যই জনকল্যাণে দায়িত্বশীলতার চর্চা মানব-সভ্যতার যাত্রাপথে এত গুরুত্ব পেয়ে আসছে। সদিচ্ছা, সুষ্ঠু পরিকল্পনা, উপযুক্ত উদ্যোগ-আয়োজন থাকা সত্ত্বেও শুধু মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব ও দায়িত্বহীনতার কারণে সবকিছু ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে— হয়ে যায়ও। এজন্যই পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র সব ক্ষেত্রে মানবিকতা ও দায়িত্বশীলতার বিকল্প নেই। তারপরও অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও মাঝেমধ্যেই এমন সব দায়িত্বহীনতার কথা শোনা যায়- যার দংশনে মানবিকতা আহত, উন্নয়ন পঙ্গু এবং মানুষকে স্তম্ভিত ও হতবাক হয়ে পড়তে হয়। যারা এসব দায়িত্বহীনতার শিকার, তাদের যে ক্ষতি হয়ে থাকে, তা কে পোষাবে এবং কীভাবে পোষাবে কেউ জানেন না, জানার কথাও নয়। কারণ সাধারণ মানুষের সাধারণ বা স্বাভাবিক চিন্তায় এ রকম ধরে নেওয়াটাই সঙ্গত যে, দায়িত্ব পালনে কারো কোনোই শৈথিল্য থাকবে না। সব পর্যায়ে দায়িত্বশীলরা সমভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে, যত্ন সহকারে দায়িত্ব পালন করবেন এবং জনগণ তার কল্যাণ-স্পর্শ লাভ করবে, তাদের জীবন-মানের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটবে আর জীবন ধারণ সহজতর হয়ে উঠবে। অতীতে এক্ষেত্রে মানবিকতাসিক্ত দায়িত্বশীল মানুষ তৈরি করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন সমাজের আলোকিত মানুষ শিক্ষকরা।

মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব ও দায়িত্বহীনতার খবর মানুষকে স্তম্ভিত ও হতবাক করে এবং বিবেককেও দংশিত করে। এই দংশন এ কারণে যে, আজো আমরা সমাজে মানবিক দায়িত্বশীলতার পূর্ণ-চর্চা নিশ্চিত করতে পারিনি এবং এ কারণে উন্নয়নে-উৎপাদনসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে সিস্টেমলস কমানো যাচ্ছে না। তদুপরি যথাসময়ে প্রকল্প-কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় বার বার ব্যয়-সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পব্যয় বৃদ্ধি স্বাভাবিক প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে উৎপাদন-ব্যবস্থায় যোগ্যতা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার অভাবে রফতানি পণ্যের মানোন্নয়ন ও সংরক্ষণ যথাযথ হচ্ছে না। এতে করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং উৎপাদন-ব্যবস্থা ও রফতানি-প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। অথচ উন্নয়ন-অগ্রগতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত খাতগুলোতে বর্তমান সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে বহুমাত্রিক উদ্যোগ-আয়োজন গ্রহণ করা হচ্ছে। তৈরি পোশাক এবং জনশক্তি রফতানি খাতে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এসব উদ্যোগ-আয়োজনের সর্বোচ্চ সাফল্যের জন্য মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বশীলতার চর্চা অপরিহার্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, উপরে সতর্ক দায়িত্বশীলতা অব্যাহত থাকলে নিচে দায়িত্বহীনতা কোনোভাবেই শিকড় গেড়ে বসতে পারে না।

একুশ শতকের বিশ্বে উন্নয়ন-অগ্রগতি যা কিছুই বলা হোক না কেন, সবকিছুর শক্তির জোগান আসে শিক্ষাঙ্গন থেকে। আধুনিক উৎপাদন-ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক উৎকর্ষ ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে ইউরোপ-আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্যে ইতোমধ্যে চিড় ধরেছে। বিশ্ব ব্যবস্থার এই নতুন প্রবণতা যেসব দেশের উদ্যোগ-উৎপাদন বা অর্থনৈতিক বিকাশে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, সেসব দেশে উৎপাদন-প্রযুক্তি ও তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষায় বড় ধরনের উৎকর্ষসাধিত হয়েছে, হচ্ছে। চীন, ভারত, ব্রাজিলের মতো দেশ যে উৎপাদন ও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় দ্রুত সামনে এগিয়ে এসেছে, তার শক্তির উৎস ওই শিক্ষাব্যবস্থায়। এই শিক্ষা যেমন আধুনিক উৎপাদনপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তির, তেমনি যোগ্যতা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার। এসব ক্ষেত্রে ন্যূনতম শৈথিল্যও অর্থনীতিতে-উন্নয়নে পিছিয়ে পড়ার বড় কারণ হয়ে উঠতে পারে।

বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এবং এই মুহূর্তে উৎপাদনপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা-গবেষণা কার্যক্রম ব্যাপক ও দ্রুতায়িত করার বিকল্প নেই। এখনই মানবিক বোধ-বিবেচনাসম্পন্ন দায়িত্বশীল মানুষের সমন্বয়ে সব পর্যায়ে যোগ্য ও দক্ষ কর্মীবাহিনী গড়ে তোলা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে সরকারের শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় যুক্ত বিভাগ-মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব যতটা, তার চেয়ে কোনোভাবেই কম নয় শিক্ষক সমাজের দায়িত্ব। এ ব্যাপারে শিক্ষক সমাজের সচেতন উদ্যোগ গ্রহণ যতটা জরুরি, ততটাই অপরিহার্য মানবিক বোধ-চৈতন্যসিক্ত মেধাবীদের শিক্ষকতায় এগিয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি করা। শিক্ষকতাকে আকর্ষণীয় পেশায় পরিণত করার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে যতটা ইতিবাচক অগগ্রগতি ঘটেছে, তাকে সুদৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করার বাকি কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। শিক্ষকদেরও যুগের চাহিদা অনুধাবন ও সৃজনশীল কর্ম-প্রক্রিয়ায় সমন্বয় সাধনে সক্রিয় দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের মনোজগতকে কল্যাণকর মানবীয় আলোয় বিকশিত করায় সর্বপ্রযত্ন প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ‘দেব না আমারে ভুলিতে’— প্রত্যেক শিক্ষককে এই লক্ষ্য সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের হূদয়ে নিজেদের আলোকিত অস্তিত্বের ছায়াপাত ঘটাতে হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads