• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
কনসিভ ও ভ্রূণ হত্যা

নারীর গর্ভে প্রাণের সঞ্চার তেমনি একটি বিষয়

সংগৃহীত ছবি

মতামত

ভিন্নমত

কনসিভ ও ভ্রূণ হত্যা

  • প্রকাশিত ০৮ অক্টোবর ২০১৮

সাঈদ চৌধুরী

বিচিত্র মানুষগুলোর আচরণ বেশি বিচিত্র। এই বিচিত্রতায় ভালোবাসার বিচরণ আরো বিচিত্রতা দেয়। মানুষ যখন একজনকে ভালোবাসে তখন তার সম্পূর্ণ সত্তাকে ধারণ করে বুকের ভেতরে মন নামক অদৃশ্য কোনো স্থানে। এই অদৃশ্য স্থানটি এমনই একটা জায়গা যেখানে অন্যকে নিয়েই মানুষ বসত করতে বেশি ভালোবাসে। একজনকে আরেকজন ভালোবাসা থেকে সৃষ্টি হয়েছে সারা পৃথিবীর মানবকুল। কিন্তু কী এক অবাক করা বিষয় এটি যে, এত সৃষ্টির পরও মানুষগুলো ঘর বাঁধতে চায় বা ঘর বাঁধে, একজন মানুষ একজনকে নিয়েই জীবনের অন্তিম আনন্দগুলো উদযাপন করতে চায়।

দিন যাচ্ছে। আধুনিকতায় এখন সম্পর্ক অনেক ফিকে হয়ে গেলেও কিছু কিছু জায়গায় মানুষ একেবারেই আনাড়ি। নারীর গর্ভে প্রাণের সঞ্চার তেমনি একটি বিষয়! যখন ভালোবাসার পর নরনারী একে অপরের ওপর সম্পূর্ণ নিজেকে সমর্পণ করতে পারে তখনই আসে তাদের দুজনের রূপভেদ থেকে আরেকজনের আগমন। কি অসাধারণ সৃষ্টির কৌশল বিধাতার! আমরা যদি এই বিষয়গুলোর ভেতরে যাই তবে দেখতে পাব সামাজিক অস্থিরতাগুলোর পেছনে ভালোবাসার এ বৈপরীত্যগুলোও রয়েছে।

পরিণত অথচ আবেগিকভাবে কোনো ছেলে বা মেয়ে ভালোবাসার পর কোনো ভুল সম্পর্কের কারণে যদি মেয়েটি কনসিভ করে বসে তবেই এলোমেলো হয়ে যায় সব চাওয়া পাওয়াগুলো। এ রকম হচ্ছে। একটু আবেগকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে কেউ কেউ ভুল করে ফেলছে এবং হতাশায় ডুবছে তাদের পরবর্তী জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যগুলো। খুব হাসির ছলে তথাকথিত এখনকার ছেলেমেয়েরা কনসিভকে কোনো বিষয় না মনে করলেও আমি মনে করি একটি মেয়ে যখন কনসিভ করে তা তার জন্য অনেক মূল্যবান।

কনসিভ করার পর কোনো নারী যদি তার সন্তানকে ধারণ না করতে পারে তবে তা থেকে জন্ম নেয় হতাশা। এই হতাশা থাকে সারাটা জীবন ধরে। মাতৃত্ব এমন একটি জিনিস যা শুধু দূর থেকে নারীর দৈহিক পরিবর্তনে বোঝার বিষয় নয়। কি কষ্ট করে সন্তানকে নারীরা তার গর্ভে লালন করে তবুও কখনো বলে না আমার সন্তানকে আমি রাখতে চাই না! সারা দিন বমি, মুখে অরুচি, মাথা ঝিম ঝিম কারো কারো ক্ষেত্রে বিছানা থেকে উঠতে না পারা তবুও কোনো মায়ের মুখ থেকে শুনিনি আমি এত কষ্ট করে সন্তান চাই না!

বর্তমানে অনেক পরিমাণে ভ্রূণ নষ্ট করা হচ্ছে। একটি ভ্রূণ নষ্ট করার পর একটি মাতৃত্বও নষ্ট হয়। নারী তার ভেতরে যে দ্বিতীয় সত্তাকে লালন করে সেই সত্তা পৃথিবীর মুখ দেখে না সেটা ভেবেই নষ্ট হয়ে যায় নারীত্বের চরম সেই উৎকর্ষতা! ভবিষ্যৎ জীবনেও এর অনেক প্রভাব। পরবর্তীতে কনসিভ করতে গিয়েও দেখা যায় আবেগীয় সমস্যা, মানসিক সমস্যার সৃষ্টি, হতাশা, জীবনে স্থীতিশীল হওয়ার অপারগতা ও নানামুখী মানসিক ব্যাধি!

অজানা এবং অবাধ শারীরিক মিলনের ফলে যে নারীরা বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েরা কনসিভ করছে তাদের বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই দেখা যায় বিভিন্নভাবে ভ্রূণ নষ্ট করা হয়। এতে করে শরীরে বড় একটি প্রভাব পড়ে নারীদের। অধিক রক্তক্ষরণ, জরায়ুর স্থায়িত্ব কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে অনেক নারী অপরিণত বয়সেই। যার ফলে বিবাহিত জীবনে গিয়ে নারীদের বরণ করে নিতে হয় বন্ধ্যত্ব ও অসহায়ত্ব। প্রচুর পরিমাণ ভ্রূণ হত্যা হয় এখন ঢাকা শহরেই। বিশেষ করে খুব তরুণ সমাজ লিভ টুগেদার নামক জায়গাটিকে বৈধ ভাবার পর থেকে এই সমস্যাটি জটিল আকার ধারণ করেছে। শহরের আনাচে কানাচে ক্লিনিকগুলোয় অদক্ষ হাতে এবং খুব কম টাকার বিনিময়ে ভ্রূণ হত্যার মতো গর্হিত কাজ হচ্ছে অবিরত! এ বিষয়টিকে এখন গুরুত্ব দিয়ে দেখার সময় এসেছে। ভ্রূণ হত্যা মানে একটি প্রাণকে হত্যা। বিবেচনায় এখানেও আইনের প্রয়োগে বড় ভূমিকা প্রয়োজন আর প্রয়োজন ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার নিয়মানুবর্তিতা। 

এ বিষয়ে সবার আত্মসচেতন হওয়া প্রয়োজন এক্ষুনি। বিবাহিত সম্পর্কের ক্ষেত্রে কনসিভ করে ফেললে তা যত্ন করে লালন করুন, অনৈতিক সম্পর্কগুলো স্থাপনের আগে নিজেকে আরেকটু স্থির করুন, নইলে যে হতাশা আপনাকে পেয়ে বসবে তা আপনার সারা জীবনের উচ্ছ্বল জীবনের অন্তরায় হয়ে যেতে পারে!

লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি

শ্রীপুর, গাজীপুর

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads