• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ফার্মাসিস্টদের মূল্যায়ন

বাংলাদেশে তৈরি ওষুধ বিশ্বের অনেক দেশে সুনামের সঙ্গে রফতানি হচ্ছে

সংগৃহীত ছবি

মতামত

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ফার্মাসিস্টদের মূল্যায়ন

  • প্রকাশিত ১০ অক্টোবর ২০১৮

তানভীর আহমেদ রাসেল

গার্মেন্ট শিল্পের মতো বাংলাদেশের আরেক গৌরব ও অহংকারের নাম ওষুধ শিল্প। বাংলাদেশে তৈরি ওষুধ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশে সুনামের সঙ্গে রফতানি হচ্ছে। এমন সোনালি গৌরবের প্রধান অংশীদার এই বাংলার একঝাঁক ফার্মাসিস্ট, যারা কিনা দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে পরম মমতায় তৈরি করেন লাখো কোটি মানুষের জীবন রক্ষাকারী পাথেয়।

ফার্মাসিস্টদের কাজের মধ্যে রয়েছে একটি ওষুধ কোন রোগের জন্য, কী কী উপাদান কী পরিমাণে মিশিয়ে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা হয়; ওষুধ সম্পর্কে সঠিক তথ্য বিতরণ এবং এর সঠিক ব্যবহার ও প্রভাব নিশ্চিতকরণ, চিকিৎসাগত প্রয়োগ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। ফার্মাসিস্টদের এমন সুনিপুণ কর্মতৎপরতায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প। দেশের তৈরি ওষুধ দেশের মানুষের ৯৮ শতাংশ চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে, যা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের পক্ষে এখনো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওষুধ শিল্পকে ২০১৮ সালের ‘প্রোডাক্ট অব দ্যা ইয়ার’ ঘোষণা করেছেন। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অনলাইন পোর্টাল থেকে জানা যায়, উন্নয়নশীল ৪৮টি দেশের মধ্যে ওষুধ উৎপাদনে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। শুধু তা-ই নয়, ধীরে ধীরে ওষুধ রফতানিতেও শীর্ষস্থানে পৌঁছে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমানে ওষুধ উৎপাদনে বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে দেশি-বিদেশি দু’শতাধিক কোম্পানি। ১৬০টি দেশে বাংলাদেশ থেকে ওষুধ রফতানি হচ্ছে।

বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে যাচ্ছে। আর এই রফতানির চিত্রও দ্রুত বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে এ খাতে রফতানি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে এ খাতের যে প্রবৃদ্ধি তা ধরে রাখতে পারলে ২০২৩ সালে এটি পাঁচ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে বলে আশা করছেন এ-খাত সংশ্লিষ্টরা। এমন গৌরবান্বিত সাফল্যের অনেকাংশেরই দাবিদার বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প তথা স্বাস্থ্যসেবার অতন্দ্র প্রহরী ফার্মাসিস্টরা। অথচ আজ সেই নিবেদিতপ্রাণ ফার্মাসিস্টরাই রয়ে গেছেন বঞ্চিত, অবহেলিত।

আমাদের দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বনামধন্য ১২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিশেষায়িত প্রফেশনাল সাবজেক্টটি পড়ানো হয়। দেশের অন্যতম মেধাবীরা আকাশছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে এই বিশেষায়িত সাবজেক্টটি পড়ে থাকেন। কিন্তু ফার্মাসিস্টদের প্রতি আমাদের সরকারের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে অনেক ফার্মাসিস্ট বিদেশে পাড়ি জমান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization- WHO)-এর মতে, উন্নত স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করার জন্য ফার্মাসিস্টদের শতকরা ৫৫ শতাংশ কমিউনিটি ফার্মেসি, ৩০ শতাংশ হসপিটাল ফার্মেসি, ৫ শতাংশ ম্যানুফ্যাকচারিং, ৫ শতাংশ সরকারি সংস্থায় এবং ৫ শতাংশ একাডেমিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার নিয়ম রয়েছে। অথচ বাংলাদেশে কমিউনিটি কিংবা হসপিটাল ফার্মেসিতে কোনো গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নেই বললেই চলে। উন্নত দেশগুলোতে দায়িত্বে থাকা ডাক্তারের কাজ রোগ নির্ণয় ও রোগ যাচাই করা এবং ফার্মাসিস্ট সেই রোগ ও রোগের মাত্রা দেখে ওষুধ দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে এই চিত্র একেবারেই ভিন্ন। রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে ওষুধ প্রেসক্রাইব সবই ডাক্তার করে থাকেন। ফলে স্বল্পসংখ্যক ডাক্তার দিয়ে বৃহৎ এই জনগোষ্ঠীর যথাযথ ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

কমিউনিটি ও হসপিটাল ফার্মেসি চালু না থাকায় বেশিরভাগ ফার্মাসিস্টের প্রায় ৮৫ শতাংশকেই কর্মক্ষেত্র হিসেবে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর বেছে নিতে হয়। বিসিএসে ফার্মাসিস্টদের জন্য নেই কোনো কোটার ব্যবস্থা, নেই তেমন কোনো সরকারি চাকরি। এই বৈষম্য আর কতদিন? ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নির্বাচনের আগে এক হাজার হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন যা সত্যিই উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল মাইলফলক। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। স্বাস্থ্য পেশাজীবী হিসেবে ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং নার্স— এই চার শ্রেণির পেশাজীবীর পূর্ণাঙ্গ টিম সম্মিলিতভাবে যখন তাদের অর্পিত দায়িত্ব ও মর্যাদা যত দ্রুত প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবেন, তত দ্রুত মানুষের স্বাস্থ্যগত মৌলিক অধিকার পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে ও দেশের মেধাপাচার রোধ করতে স্বাস্থ্য খাতের নিপুণ কারিগর ফার্মাসিস্টদের হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ব্যাপক হারে নিয়োগ দিয়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যথাযথ মূল্যায়ন করা সম্ভব হলে স্বাস্থ্য খাতে রোল মডেল হবে বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থে ফার্মাসিস্টদের স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ ও মূল্যায়ন এখন সময়ের সর্বোৎকৃষ্ট দাবি।

লেখক : শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

anvirahmedcou555@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads