• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
আসছেন দেবী আনন্দময়ী

শরৎ মানেই জগজ্জননী দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা

সংগৃহীত ছবি

মতামত

জীবন যেমন

আসছেন দেবী আনন্দময়ী

  • প্রকাশিত ১৬ অক্টোবর ২০১৮

বিশ্বজিত রায়

আড়মোড়া ভেঙে প্রকৃতি জেগে ওঠে শরৎস্নানে। এই সময়টিতে হাসিখেলায় মত্ত থাকে চারপাশ। যেন সাজ সাজ রব, মনে হয় নতুন অতিথি বরণের মাহেন্দ্রক্ষণ। হ্যাঁ, সত্যিই অতিথি আসছেন এই মধুর লগনে। শরৎ মানেই জগজ্জননী দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। তাই তো অসুরনাশিনী দেবীর পৃথিবীস্পর্শে পূর্ণতা পায় ঋতুরানি শ্বেত শরৎ। কিন্তু এবারকার আগমন একটু ভিন্ন। দেবী আসছেন শরতের শেষবেলায়। তাই ঋতুভাস্কর শরৎ বিশ্বময়ীর শুভাগমন সংক্রান্ত নিমন্ত্রণ পত্রটি আগেভাগেই পড়ে শুনিয়েছে দুর্গা জননীর আশীর্বাদ প্রত্যাশী প্রকৃতি ও মানুষকে।

শিউলি সুরভিত শরৎ প্রকৃতিতে বেজে উঠেছে ঢাক মাঙ্গল্য নিনাদ। মৃত্তিকা ময়দানে শুভ্র কাশের উৎসব উন্মাদী নৃত্যে গগন গায়ে ভেসে বেড়াচ্ছে তুলতুলে সফেদ মেঘমালা। চারপাশে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। দুর্গেশপত্নীর শুভাগমনে আশিস প্রার্থী হবে মর্ত্যলোক। প্রতিবারের মতো এবারো দেবী দুর্গা আসছেন সব অনাচার-অবিচার রুদ্ধ করে প্রশান্তির ছোঁয়ায় পৃথিবী মাতাতে। তাই তো সর্বশক্তি স্বরূপিনী দেবীর পাদপদ্মে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণে ব্রতী হয় মর্ত্যলোক। দুর্গামায়ের ধরিত্রী গমনের এ শুচিলগ্নে তাঁর আশীর্বাদ ও করুণায় সবার জীবন সুন্দর হোক।

দুর্গা ও দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে যতগুলো পৌরাণিক গল্প প্রচলিত আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় গল্পটি পাওয়া যায় শ্রীশ্রীচণ্ডী বা দেবীমাহাত্ম্যম্-এ। দেবীমাহাত্ম্যম্ আসলে মার্কণ্ডেয় পুরাণের একটি নির্বাচিত অংশ। শ্রীশ্রীচণ্ডী গ্রন্থে বর্ণিত কাহিনী অনুসারে— পুরাকালে মহিষাসুর দেবগণকে একশ বছরব্যাপী এক যুদ্ধে পরাস্ত করে স্বর্গের অধিকার কেড়ে নিলে বিতাড়িত দেবগণ প্রথমে প্রজাপতি ব্রহ্মা এবং পরে তাঁকে মুখপাত্র করে শিব ও নারায়ণের সমীপে উপস্থিত হলেন। মহিষাসুরের অত্যাচার কাহিনী শ্রবণ করে তাঁরা উভয়েই অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলেন। সেই ক্রোধে তাঁদের মুখমণ্ডল ভীষণাকার ধারণ করল। প্রথমে বিষ্ণু, পরে শিব ও ব্রহ্মার মুখমণ্ডল থেকে এক মহাতেজ নির্গত হলো। সেই সঙ্গে ইন্দ্রাদি অন্যান্য দেবতার দেহ থেকেও তেজ নির্গত হয়ে সেই মহাতেজের সঙ্গে মিলিত হয়। সুউচ্চ হিমালয়ে স্থিত ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে সেই বিরাট তেজঃপুঞ্জ একত্র হয়ে এক নারীমূর্তি ধারণ করল। প্রত্যেক দেবতা তাঁদের আয়ূধ বা অস্ত্র দেবীকে দান করলেন। হিমালয় দেবীকে তাঁর বাহন সিংহ দান করলেন। এই দেবীই অষ্টাদশভুজা মহালক্ষ্মীরূপে মহিষাসুর বধের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। দেবী ও তাঁর বাহন সিংহনাদে ত্রিভুবন কম্পিত হতে লাগল। মহিষাসুর সেই প্রকম্পনে ভীত হয়ে প্রথমে তাঁর সেনাদলের বীরযোদ্ধাদের পাঠাতে শুরু করলেন। দেবী ও তাঁর বাহন সিংহ প্রবল পরাক্রমে যুদ্ধ করে একে একে সব যোদ্ধা ও অসুরসেনাকে বিনষ্ট করলেন। তখন মহিষাসুর স্বয়ং দেবীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করলেন। যুদ্ধকালে ঐন্দ্রজালিক মহিষাসুর নানা রূপ ধারণ করে দেবীকে ভীত বা বিমোহিত করার চেষ্টায় রত হলেন; কিন্তু দেবী সেসব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিলেন। তখন অসুর অহঙ্কারে মত্ত হয়ে প্রবল গর্জন করল। দেবী বললেন— ‘গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবাম্যহম। ময়া ত্বয়ি হতেহত্রৈব গর্জিষ্যন্ত্যাশু দেবতাঃ\’ অর্থাৎ- হে মূঢ়, যতক্ষণ আমি মধুপান করি, ততক্ষণ তুই গর্জন করে নে। আমি তোকে বধ করলেই দেবতারা এখানে শিগগির গর্জন করবেন। এই বলে দেবী লম্ফ দিয়ে মহিষাসুরের ওপর চড়ে তাঁর কণ্ঠে পা দিয়ে শূল দিয়ে বক্ষ বিদীর্ণ করে তাকে বধ করলেন। অসুরসেনা হাহাকার করতে করতে পলায়ন করল এবং দেবতারা স্বর্গের অধিকার ফিরে পেয়ে আনন্দধ্বনি করতে লাগলেন।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজা। প্রতিবারের মতো দেবী বরণে এবারো প্রস্তুত হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। জগজ্জননীর সন্তুষ্টি লাভে পাঁচ দিনব্যাপী পূজার্চনায় মাতবে সনাতনবিশ্বাসী মানুষজন। উৎসবের রঙ ছড়িয়ে পড়বে সবখানে। প্রার্থনা থাকবে কলুষমুক্ত সমাজ, সুন্দর দেশ ও সুস্থ পৃথিবী গড়ার। মানবধরা আজ অন্যায়-অবিচার, পেশিশক্তি, জোর-জবরদস্তি, অত্যাচার-নির্যাতন, লোভ-লালসাসহ নানা বিশৃঙ্খলায় আক্রান্ত। বাড়ছে মানুষে মানুষে হানাহানি ও রক্তপাত। মানুষের মধ্যে ভর করেছে পশুত্ব। অনেক ক্ষেত্রে অত্যাচারী অসুরদেরও ছাড়িয়ে যাচ্ছে তারা। তাই জগৎমাতা দেবী দুর্গার সুদৃষ্টি সবার আগে একান্ত প্রয়োজন। মায়ের আশীর্বাদ পর্যবসিত হোক এই বসুন্ধরায়। দূর হোক অন্ধকার, ছড়িয়ে পড়ুক আলো। মানুষের মাঝে উদয় হোক শুভ বুদ্ধি। বিরাজ করুক শান্তির সুবাতাস। এমন প্রার্থনাই রইল আনন্দময়ীর কাছে।

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads