• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

মতামত

মাদকাসক্তি নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

  • অমিত বণিক
  • প্রকাশিত ১৭ অক্টোবর ২০১৮

বর্তমানে দেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলেছে। দেশে প্রথমবারের মতো মাদকাসক্তের সংখ্যা নির্ধারণে পরিচালিত সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ১৮ বছর বা এর ঊর্ধ্ব বয়সী মানুষের মধ্যে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ মাদকাসক্ত। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। মাদকাসক্তের এ পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক আখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে মাদকাসক্তি এমনই এক ভয়ঙ্কর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা নির্মূলে দেশব্যাপী ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেও ফলপ্রসূ উত্তরণ ঘটছে না বললেও মনে করি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোনো সমস্যা, তা যতই গুরুতর হোক না কেন, যদি স্থায়ী রূপ ধারণ করে, তাহলে একটা সময় তা যেন স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়। বাংলাদেশে মাদকের বিষয়টিও এমন প্রতীয়মান হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। অথচ সুস্থ ও কল্যাণকামী সমাজ গঠনের জন্য এ অবস্থার  অবসানই কাম্য।

নানাভাবেই এটা সামনে এসেছে যে, দেশের তরুণ-যুবকদের বেশ বড় একটি অংশ মাদকে আসক্তির শিকার। তবে মাদকাসক্তি শুধু এই বয়সীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, পূর্ণবয়স্ক, এমনকি শিশু-কিশোরদের মধ্যেও মাদকাসক্তি ছড়িয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ৭ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সী মানুষের মধ্যেও মাদকাসক্তির হার শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ। মাদকাসক্তির এলাকাও সীমাবদ্ধ নেই। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম-মফস্বল পর্যন্ত সারা দেশেই ব্যাপকভাবে মাদক ছড়ানো। মাদকাসক্তির সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সঠিক পরিসংখ্যান মেলে না। বাংলাদেশে কত সংখ্যক মানুষ মাদকাসক্ত, এতদিন এ বিষয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কিংবা সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব না থাকলেও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত সমীক্ষায় এ সংক্রান্ত যে তথ্য পাওয়া গেল তা শুধু উদ্বেগজনকই নয়, রীতিমতো আতঙ্কেরও।

আমরা জানি, বর্তমান সরকার জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে মাদক নির্মূলে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচালিত মাদকবিরোধী অভিযানে অনেকে নিহতও হয়েছে। এরপরও দেশ থেকে মাদক নির্মূল না হওয়া অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। মাঝেমধ্যেই নতুন নামে মাদকের সন্ধান মিলছে বলেও গণমাধ্যমগুলোতে খবর আসছে। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, বন্ধু-বান্ধবের সাহচর্যে সিগারেট থেকে ধীরে ধীরে মাদকের প্রতি আসক্তি জন্মে। মাদক কেনার অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে কিশোর-তরুণরা ব্যাপকভাবে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে- এমন তথ্যও উঠে এসেছে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে। এ সুযোগে মাদক ব্যবসায়ী, সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্র খুন, অপহরণ ও চাঁদাবাজিসহ নানা কাজে এদের ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। দেশের সর্বত্র সন্ত্রাসী কার্যক্রম, স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করা, গুলি বা ছুরিকাঘাতে হত্যা কিংবা সড়ক দুর্ঘটনার আধিক্যের পেছনেও মাদকাসক্তির ভূমিকা অন্যতম। ফলে মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে মাদকদ্রব্যের প্রাপ্তি যাতে সহজলভ্য না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে, কিংবা কখনো তাদের ম্যানেজ করে দেশের অভ্যন্তরে মাদকের প্রবেশ ঘটে বলে জানা যায়। দেশেও মাদক উৎপাদনের তথ্য আছে। মাঝেমধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ছোটখাটো মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের চালান ধরা পড়লেও মাদক নিয়ন্ত্রণের মূল কুশীলবরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। অভিযোগ আছে, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের স্পর্শ করতে পারে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে মাদক সিন্ডিকেট যতই শক্তিশালী হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য।

পরিশেষে বলতে চাই, মাদক থেকে তরুণ সমাজকে মুক্ত রাখতে সবার আগে পরিবারকে সচেতন হতে হবে। ব্যস্ত বাবা-মা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের অবশ্যই সন্তানকে সময় দেওয়া উচিত। তারা কী করছে, কোথায় যাচ্ছে সে ব্যাপারেও নজর দিতে হবে। কেউ মাদকে আসক্ত হলে শুধু ওই পরিবার নয়, পুরো সমাজ এবং দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই মাদকের বিরুদ্ধে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র একসঙ্গে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদক নির্মূলে সরকারের সদিচ্ছা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান ছাড়া মাদক নির্মূূলে সাফল্য আসতে পারে না। মাদক নিয়ন্ত্রণে সামাজিক সচেতনতারও কোনো বিকল্প নেই। যারা ইতোমধ্যেই মাদকাসক্ত হয়েছে, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বাড়াতে হবে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা। সীমান্ত দিয়ে কিংবা দেশের অভ্যন্তরে যাতে মাদক উৎপাদন না হতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক নজরদারি প্রয়োজন। দেশ থেকে মাদক নির্মূল করতে হলে নিয়মিত বিশেষ অভিযান পরিচালনা এবং মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে সরকার ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতির পরিপূর্ণ বাস্তবায়নও জরুরি।

 

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads