• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
১৩ বছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সংগৃহীত ছবি

মতামত

১৩ বছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

  • সাধন সরকার
  • প্রকাশিত ২০ অক্টোবর ২০১৮

২০ অক্টোবর ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’। একে একে ১৩টি বছর পার করল উচ্চশিক্ষা বিস্তারে সময়ের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর একরাশ স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটিকে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়। পথচলার শুরুতে নানা সঙ্কট থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি পরিপূর্ণ ও আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শর্তাবলি আবশ্যক, সে পথেই রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা, যুগোপযোগী জ্ঞান বিতরণ, অগ্রসরমাণ বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা ও সমতা অর্জন, আধুনিক জ্ঞান ও সংস্কৃতির চর্চা, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব প্রদানে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম লক্ষ্য। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছয়টি অনুষদের অধীনে ৩৬টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২২ হাজার ছাত্রছাত্রী, প্রায় ৬০০ শিক্ষক ও ৬০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে।

এবার আসা যাক শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধার কথায়। যাতায়াত ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের পরিবহন সুবিধা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ক্যান্টিনও নানা সমস্যায় নিয়মিত খোলা থাকে না। ফলে শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, দেশসেরা অন্যতম এ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আবাসন সঙ্কটের সমাধানে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে বরাবরই উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে! বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাবে পুরাতন হলগুলো নানাভাবে হাতছাড়া হয়েছে অনেক আগেই। অথচ ভারতবর্ষে সবচেয়ে আবাসিক সুবিধা সংবলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল তৎকালীন ‘জগন্নাথ কলেজ’। প্রশ্ন হলো, অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবাসন সুবিধা পেলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে কেন? নানা সমস্যা মোকাবেলা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে বিভিন্ন ভাড়া বাসায় মেস করে। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসকে সম্প্রসারণ ও উন্নত করতে ঢাকার কেরানীগঞ্জে ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত জমির ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন সমস্যার সমাধান এবং নানা সুবিধার কথা বলা হচ্ছে। যত দ্রুত আবাসন সঙ্কটের সমাধান করা যাবে তত দ্রুত শিক্ষার্থীদের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র খেলার মাঠও খেলার জন্য অনুপযোগী। মাঠটিতে প্রায় সময় ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাঠটির বেহাল দশা। মাঠটি সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

অতি দুঃখের বিষয়, প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ১৩টি বছর পার করলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনো সমাবর্তনের (প্রথম) আয়োজন করতে পারেনি। সব কটি বিভাগ মিলিয়ে (কলেজের শেষ দুই ব্যাচের স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীসহ) প্রথম আটটি ব্যাচের প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বেরিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন থাকে সমাবর্তনে অংশ নেওয়া। শিক্ষাজীবন শেষে একজন শিক্ষার্থী গায়ে কালো গাউন, মাথায় সমাবর্তন ক্যাপ পরে আচার্যের হাত থেকে সনদ গ্রহণ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। ফলে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গ্র্যাজুয়েটদের সমাবর্তনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। সমাবর্তন শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় শক্তি জোগায়, উজ্জীবিত করে। সমাবর্তনে পড়ালেখা শেষ করা শিক্ষার্থীরা শুধু সনদপত্র গ্রহণ করে তা নয়। সমাবর্তন শিক্ষার্থীদের দেশ ও জাতির সেবা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও মানবকল্যাণে নিবেদিত করার প্রেরণা দিয়ে থাকে।

অতি সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তন হয়ে গেল। আবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে বা কাছাকাছি সময়ে প্রতিষ্ঠিত এমন বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বা একাধিকবার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যাই বলা হোক না কেন, মোটকথা হলো সদিচ্ছা। ইচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলে সমাবর্তন আয়োজন করা খুব কঠিন কাজ নয়! জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত হবে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে যথাসময়ে সমাবর্তনের অয়োজন করা। সবশেষে এককথায় বলতে হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও উচিত শিক্ষার্থীদের আবাসন সঙ্কট সমাধান ও সমাবর্তন আয়োজনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। এ দুটি সমস্যার সমাধান হলে শিক্ষার্থীদের অনেক দিনের সমস্যার সমাধান যেমন হবে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ আরো উন্নত হবে বলে মনে করি। 

লেখক : সাবেক ছাত্র, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads