• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং সম্ভাব্য রাজনীতি

যুক্তফ্রন্টের এই ভাঙনে দলগতভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল আওয়ামী লীগ

সংগৃহীত ছবি

মতামত

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং সম্ভাব্য রাজনীতি

  • শাহ আহমদ রেজা
  • প্রকাশিত ২৪ অক্টোবর ২০১৮

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখনো ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। বহু বিতর্ক ও নেতিবাচক জল্পনা-কল্পনা পার হয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনী জোট হিসেবে এই ফ্রন্ট গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ফ্রন্টে রয়েছে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের দলগুলো। তীব্র মতবিরোধ ও বিতর্কের কারণে সুযোগ পায়নি শুধু জামায়াতে ইসলামী।

ঘটনাপ্রবাহে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে গঠিত ‘যুক্তফ্রন্ট’। কিন্তু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক হলেও আজকের নিবন্ধে প্রথমে ইতিহাসের অন্য একটি অধ্যায়েরও উল্লেখ করা হবে। সেটা আওয়ামী লীগ এবং তার প্রধান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কিত।

হঠাৎ শুনলে বিস্ময়কর মনে হতে পারে; কিন্তু ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টে বিশেষ করে বিএনপির অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত ১৯৬০-এর দশকে বিপন্ন আওয়ামী লীগের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। পাঠকরাও বেগম খালেদা জিয়ার করুণ অবস্থাসহ কিছু ঘটনা স্মরণ করতে এবং বর্তমানের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে পারেন। কারণ ৬-দফা উপস্থাপনার এবং এর ভিত্তিতে আন্দোলন প্রচেষ্টার প্রাথমিক পর্যায়ে, ১৯৬৬ সালের ৯ মে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রতিরক্ষা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে, ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি আইয়ুব সরকার তাকে আগরতলা (ষড়যন্ত্র) মামলার প্রধান আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করে এবং কুর্মিটোলা সেনানিবাসে বন্দি-আটক রাখে।

শেখ মুজিব বন্দি থাকাকালেই ৬-দফার প্রশ্নে আওয়ামী লীগ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল। ১৯৬৭ সালের ২৩ ও ২৭ আগস্ট গঠিত হয়েছিল যথাক্রমে ‘পিডিএমপন্থি’ এবং ‘৬-দফাপন্থি’ নামে পরিচিতি পাওয়া পৃথক দুটি আওয়ামী লীগ। বন্দি নেতা শেখ মুজিবকে ৬-দফাপন্থি আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়। দল দ্বিখণ্ডিত হওয়ায় এবং প্রচণ্ড দমন-নির্যাতনের কারণে ৬-দফাপন্থি আওয়ামী লীগ সে সময় অত্যন্ত দুর্বল ও বিপন্ন হয়ে পড়েছিল।

শেখ মুজিব মুক্তি পেয়েছিলেন ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। এর পেছনে অবদান ছিল ছাত্র সমাজের ১১-দফাভিত্তিক গণঅভ্যুত্থানের। ঘেরাও আন্দোলনের মাধ্যমে মওলানা ভাসানীও বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন। গণঅভ্যুত্থানের প্রচণ্ড চাপে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সরকার আগরতলা মামলা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবসহ সব রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। আইয়ুবের পতন ঘটেছিল ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ।

পাঠকদের উচিত ইতিহাসের এই অধ্যায়ের পাশাপাশি বিশেষ করে বিএনপির বর্তমান অবস্থার সঙ্গে সেকালের আওয়ামী লীগের তুলনা করে দেখা এবং হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ১৯৫৩ সালে গড়ে ওঠা যুক্তফ্রন্টের ইতিহাস ও পরিণতির কথা স্মরণ করা।

১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে সেবার যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর। এর নেতৃত্বে ছিল ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত প্রদেশের প্রথম বিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লীগ এবং ‘শেরে বাংলা’ আবুল কাশেম ফজলুল হকের নেতৃত্বে ১৯৫৩ সালের ২৭ জুলাই প্রতিষ্ঠিত কৃষক-শ্রমিক পার্টি। পরবর্তীকালে হাজী মোহাম্মদ দানেশ ও মাহমুদ আলীর নেতৃত্বাধীন গণতন্ত্রী দল (প্রতিষ্ঠা ১৭ জানুয়ারি ১৯৫৩) এবং পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্টের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছিল। অবিভক্ত বাংলার মুসলিম লীগ সেক্রেটারি আবুল হাশিমের খেলাফতে রব্বানী পার্টিও (প্রতিষ্ঠা সেপ্টেম্বর ১৯৫৩) যুক্তফ্রন্টের মিত্র সংগঠন হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। অন্যদিকে মওলানা আতাহার আলীর নেজামে ইসলাম পার্টি (প্রতিষ্ঠা ১৯৫৩) কৃষক-শ্রমিক পার্টির সঙ্গে পৃথকভাবে স্বাক্ষরিত ‘১০-দফা’ চুক্তির ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্টে যোগ দিয়েছিল। এখানে লক্ষণীয় যে, নামে যুক্তফ্রন্ট হলেও সব দল কিন্তু সকল বিষয়ে একমত ছিল না। যেমন নেজামে ইসলাম পার্টি শেরে বাংলার কৃষক-শ্রমিক পার্টির সঙ্গে এমন এক ‘১০-দফা’ চুক্তির ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্টে যোগ দিয়েছিল, যার মধ্যে সেকালের প্রধান দাবি স্বায়ত্তশাসনের উল্লেখ পর্যন্ত ছিল না। সব দলের লক্ষ্য ছিল ক্ষমতা থেকে মুসলিম লীগকে উৎখাত করা। সেটা তারা করেছিলও।

পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ‘পূর্ব পাকিস্তানের’ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ১৯৫৪ সালের ৩ এপ্রিল এই যুক্তফ্রন্টই মুসলিম লীগবিরোধী প্রথম সরকার গঠন করেছিল। এখানে পেছনের ইতিহাস স্মরণ করা দরকার। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী কর্মসূচি হিসেবে ১৯৫৪ সালের জানুয়ারিতে ঘোষিত ২১-দফায় প্রধানত পূর্ব বাংলার জনগণের বিভিন্ন দাবি ও অধিকার আদায়ের অঙ্গীকার করা হয়েছিল (তখন পর্যন্ত পাকিস্তানের কোনো সংবিধান ছিল না, প্রদেশের নামও ‘পূর্ব পাকিস্তান’ রাখা হয়নি)। স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে ২১-দফার ১৯তম দফায় বলা হয়েছিল, লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব বাংলাকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া ও সার্বভৌমিক করা হবে এবং দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ছাড়া সব বিষয়কে প্রদেশের কর্তৃত্বে আনা হবে। দেশরক্ষা বিভাগের স্থলবাহিনীর সদর দফতর পশ্চিম পাকিস্তানে ও নৌবাহিনীর সদর দফতর পূর্ব বাংলায় স্থাপিত হবে, পূর্ব বাংলাকে আত্মরক্ষায় স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য প্রদেশে অস্ত্র নির্মাণের কারখানা স্থাপন করা হবে। আনসার বাহিনীকে সশস্ত্র বাহিনীতে পরিণত করা হবে।

ঐতিহাসিক সেই ২১-দফার ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচার অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানী এবং পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের আহ্বায়ক ও অবিভক্ত বাংলার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। এই দুজনের পাশাপাশি ছিলেন ‘শেরে বাংলা’ ফজলুল হক। তিনিও অবিভক্ত বাংলার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন। ‘হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী’র নেতৃত্বেই যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। অন্যদিকে ছিল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বা চিফ মিনিস্টার নূরুল আমীনের নেতৃত্বে তৎপর ক্ষমতাসীন দল মুসলিম লীগ।

১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত পূর্ব বাংলার প্রথম সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিল। ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট জিতেছিল ২২৩টিতে। এর মধ্যে আওয়ামী মুসলিম লীগ ১৪৩, কৃষক-শ্রমিক পার্টি ৪৮, নেজামে ইসলাম পার্টি ১৯ এবং গণতন্ত্রী দল ১৩টি আসন পেয়েছিল। অমুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত ৭২টি আসনের মধ্যে গণতন্ত্রী দল তিনটি এবং কমিউনিস্ট পার্টি চারটি আসন পাওয়ায় যুক্তফ্রন্টের সর্বমোট সদস্য সংখ্যা হয়েছিল ২৩০। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পেয়েছিল মাত্র ১০টি আসন। মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীন নিজেও শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিলেন।

বিজয়ের পর ১৯৫৪ সালের ২ এপ্রিল মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত যৌথ সভায় ‘শেরে বাংলা’ ফজলুল হককে যুক্তফ্রন্টের সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করা হয়েছিল। পরদিন ৩ এপ্রিল ফজলুল হক যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রধান বা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। কোন দল থেকে কতজনকে মন্ত্রী করা হবে— সে প্রশ্নে মতপার্থক্য সৃষ্টি হওয়ায় আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রথমে মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। ফলে ৩ এপ্রিল ফজলুল হক মাত্র তিনজনকে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করেন। তারা ছিলেন কৃষক-শ্রমিক পার্টির আবু হোসেন সরকার ও সৈয়দ আজিজুল হক নান্না মিয়া এবং নেজামে ইসলাম পার্টির আশরাফউদ্দিন চৌধুরী।

আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মন্ত্রী নেওয়া হয়েছিল ১৯৫৪ সালের ১৫ মে। মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন আতাউর রহমান খান, আবুল মনসুর আহমদ, আবদুস সালাম খান, হাশিমউদ্দিন আহমদ এবং শেখ মুজিবুর রহমান। কেএসপির নেতা হলেও ডা. বি. চৌধুরীর বাবা কফিলউদ্দিন চৌধুরীকেও আওয়ামী মুসলিম লীগের কোটা থেকে মন্ত্রী করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ফজলুল হক ছাড়া মোট ১২ জনকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা। এই মন্ত্রিসভা অবশ্য বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। আদমজীতে সংঘটিত দাঙ্গা এবং ‘পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করা হবে’ বলে কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী ফজলুল হকের কথিত ঘোষণা প্রভৃতির অজুহাতে ২৯ মে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভাকে বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে পূর্ব বাংলায় ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের ১২-ক ধারা জারি করে গভর্নরের শাসন প্রবর্তন করা হয়েছিল। গভর্নর পদে নিযুক্তি দেওয়া হয় মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জাকে। এর মধ্য দিয়ে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের সে রাজনীতিরই বাস্তবায়ন ঘটেছিল, যার কারণে প্রতিষ্ঠাকালেই পাকিস্তান থেকে সংসদীয় গণতন্ত্র নির্বাসিত হয়েছিল।

প্রসঙ্গক্রমে এখানে কয়েকটি তথ্যের উল্লেখ করা দরকার। যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলার জন্য সম্ভাবনার সৃষ্টি হলেও বানোয়াট অভিযোগে শেরে বাংলা ফজলুল হকের মন্ত্রিসভাকে বাতিল করার পাশাপাশি ৯২-ক ধারার আড়ালে বিশেষ করে আওয়ামী মুসলিম লীগের অধিকাংশ নেতাকে গ্রেফতার করেছিল সরকার। দলের সভাপতি মওলানা ভাসানীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন গভর্নর ইস্কান্দার মির্জা। সুইডেনের রাজধানী স্টকহমে অনুষ্ঠিত বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কারণে মওলানা ভাসানী সে সময় দেশে ছিলেন না। তার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে করাচিকেন্দ্রিক ক্ষমতাসীন চক্র ও ষড়যন্ত্রকারীরা সাফল্যের সঙ্গে যুক্তফ্রন্টে ভাঙন সৃষ্টি করেছিল। ১৯৫৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী ফজলুল হকের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপিত হওয়ায় যুক্তফ্রন্টে ভাঙন ঘটেছিল।

যুক্তফ্রন্টের এই ভাঙনে দলগতভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল আওয়ামী লীগ। এর কারণ, ৯২-ক ধারা প্রত্যাহারের পর ১৯৫৫ সালের ৬ জুন আবু হোসেন সরকারের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলায় গঠিত মন্ত্রিসভা ‘যুক্তফ্রন্ট’ নাম নিয়েই শপথ নিয়েছিল। অর্থাৎ যুক্তফ্রন্ট সরকারই ক্ষমতায় ফিরে এসেছিল। কিন্তু যুক্তফ্রন্টের প্রধান শরিক আওয়ামী মুসলিম লীগ এতে সুযোগ পায়নি। এরই পাশাপাশি দলত্যাগ করেছিলেন আওয়ামী লীগের ৩৯ জন সদস্য, যার ফলে দলটির পরিষদ সদস্য সংখ্যা কমে হয়েছিল ১০৪। ওদিকে গণপরিষদের ৩১টি মুসলিম আসনের নির্বাচনে ‘যুক্তফ্রন্ট’ পেয়েছিল ১৬টি। বড় দল হলেও আওয়ামী লীগের ভাগে এসেছিল মাত্র ১২টি আসন। ষড়যন্ত্র ও ভাঙাগড়ার অনেক পথ পেরিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বরে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং আতাউর রহমান খান যথাক্রমে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ততদিনে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর ‘যুক্তফ্রন্ট’ ইতিহাসের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছিল।

দীর্ঘ সে ইতিহাসের গভীরে যাওয়ার পরিবর্তে এ সময়ে সেকালের নির্যাতিত দল আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান বিএনপির মধ্যে তুলনা করা যেতে পারে। একই সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিও লক্ষ্য রাখা উচিত। কারণ খালেদা জিয়া বর্তমানে চরম অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। অন্যদিকে জামায়াতের বিরুদ্ধে চলছে প্রচণ্ড দমন-নির্যাতন। তাছাড়া ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা হলেও বাদ পড়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. বি. চৌধুরী। হাত গুটিয়ে বসে থাকার পরিবর্তে তিনি নাকি যথেষ্ট তৎপরতা চালাচ্ছেন। সুতরাং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পরিণতি দেখার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে।

লেখক : সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads