• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
গণপরিবহনে নারী সুরক্ষিত নয়

সংগৃহীত ছবি

মতামত

গণপরিবহনে নারী সুরক্ষিত নয়

  • প্রকাশিত ২৫ অক্টোবর ২০১৮

হিমেল আহমেদ

লেখক : কলামিস্ট ও সাহিত্যিক

বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে নারীরা অবদান রাখছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চাকরিসহ খেলাধুলায় নারীরা এগিয়ে চলেছে। রাজনীতিতেও নারীর অংশগ্রহণ লক্ষণীয়। তবু যেন নারীরা অসহায়ের শেকল থেকে মুক্ত হতে পারছে না। পদে পদে নারীরা লাঞ্ছনা ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে গণপরিবহনে নারী যৌন হেনস্তার শিকার হচ্ছে বেশি। পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে প্রতিদিন অসংখ্য নারী গণপরিবহনে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। যাত্রীকল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৩ মাসে গণপরিবহনে ২১ জন নারী ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, দেশে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৯ লাখ ১০ হাজার, নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার। অর্থাৎ নারী-পুরুষের অনুপাত প্রায় সমান। দেশের বিরাট এই অংশজুড়ে রয়েছে নারী, তবু যেন নারীরা সুরক্ষিত নয় এই সমাজে! ব্যস্ত নগরীর যান্ত্রিক জীবনে প্রতিনিয়ত নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটছে, যা একটি স্বাধীন দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে যথেষ্ট। এ দেশে গণপরিবহনগুলোতে ৯৪ ভাগ নারীযাত্রী মৌখিক, শারীরিক ও  যৌন নিপীড়নের শিকার হয় এবং হচ্ছে। নিপীড়িতদের অধিকাংশই প্রতিবাদ করে না আরো হয়রান হওয়ার ভয়ে। ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির ‘নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক’ শীর্ষক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গণপরিবহনে নারীর সুরক্ষায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে নিচে। অথচ বাংলাদেশের ক্ষমতায় আছেন, যিনি তিনি স্বয়ং একজন নারী!  বর্তমানে নারীরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে বিভিন্ন পেশায়। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনের চিত্র ব্যাপক খারাপ। অধিকাংশ নারী কাজের জন্য পরিবহনে যাতায়াত করে। বিভিন্ন অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজে যাওয়ার জন্য গণপরিবহনই একমাত্র মাধ্যম এসব নারীযাত্রীর। মহানগরী ঢাকায় অতিরিক্ত লোকসমাগমের কারণে গণ-পরিবহনের সংখ্যা কম থাকায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হয় বিশেষ করে নারীযাত্রীদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য। আর এই ভোগান্তির মাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। যত দিন যাচ্ছে, ততই বিরাট জনশক্তি ঢাকামুখী হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধান শহর ও রাজধানী হলো ঢাকা। তাই ঢাকায় মানুষের চাপ বেশি। প্রতিদিন শত শত মানুষ ঢুকছে ঢাকায়। তার মধ্যে অধিকাংশই আসে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে। এ ছাড়া চিকিৎসার জন্য, পড়াশোনার জন্য, রাজনৈতিক কারণে, উন্নত সেবাসহ বিভিন্ন কারণে মানুষের আকর্ষণ ঢাকা। এক জরিপে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা শহরে বছরে নতুন করে প্রায় ছয় লাখ ১২ হাজার লোক যুক্ত হচ্ছে। প্রতিমাসে প্রায় ৫১ হাজার আর প্রতিদিন প্রায় এক হাজার সাতশ লোক অন্য জেলা থেকে এসে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসতি গড়ছে। যত দিন যাচ্ছে ঢাকার জনসংখ্যা বাড়ছে। সরকারি হিসাবে ঢাকায় বর্তমান জনসংখ্যা এক কোটি ৬৫ লাখ। আর প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করেন ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। অথচ সে অনুপাতে ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা অপ্রতুল। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যমতে, জনসংখ্যার অনুপাতে চাহিদা অনুযায়ী রাজধানীতে প্রায় আট হাজার বাস-মিনিবাসের প্রয়োজন। বর্তমানে রাজধানীতে বাস-মিনিবাস চলছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। গত ১০ বছরে ১৬৬টি রুটে ৫ হাজার ৪১৯টি বাস-মিনিবাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও প্রায় অর্ধেকই এখন ঢাকার রাস্তায় নেই। বর্তমানে রাজধানীতে ৯২টি কোম্পানির প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাস চলাচল করছে। ১৬৬ রুটের মধ্যে ১১২ রুটে কোনো বাস নেই। ১২টি রুটে চলছে মাত্র একটি কোম্পানির বাস। গণপরিবহনের এই অপ্রতুলতা নারী যৌন নির্যাতনের অন্যতম কারণ। সঠিক সময়ে স্কুল-কলেজ অথবা কর্মক্ষেত্রে পৌঁছানোর লক্ষ্যে নারীরা বাসে পুরুষের সঙ্গে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। যৌন হেনস্তা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নারীদের জন্য আলাদা নারী গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা উচিত। যে পরিবহনে যাত্রী হবে শুধু নারীরা। বিশ্বে নারী ক্ষমতায়নের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে নারী উন্নয়নে সর্বোপরি পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। নারী সুরক্ষার জন্য নারীবান্ধব গণপরিবহনের উপযুক্ত ব্যবস্থা করা বর্তমানে সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণপরিবহনে নারী যৌন নির্যাতনের দায় এড়িয়ে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। তাই সচেতন হতে হবে আমাদের সবাইকে। একমাত্র পুরুষের সম্মিলিত উদ্যোগই পারবে গণপরিবহনে নারীদের নিরাপদ রাখতে। 

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads