• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়াই

কার্যত আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেনি

সংগৃহীত ছবি

মতামত

অভিমত

বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়াই

  • প্রকাশিত ২৮ অক্টোবর ২০১৮

আজহার মাহমুদ

যত দোষ নন্দ ঘোষ— প্রচলিত এই বাক্যটি আসলেই যথার্থ। বর্তমানে আমরা এখনো এই বাক্যটির ভেতরেই বসবাস করছি। আমাদের দেশে উন্নয়ন যেমন হচ্ছে ঠিক তেমনভাবে কোনো না কোনো সমস্যা কোথাও না কোথাও লেগে আছে। মানলাম, সমস্যা ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশ নেই। তবে বাংলাদেশের সমস্যাগুলো যেন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। আর এর কারণও মূলত আমরা। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের কাছ থেকে শুনতাম ‘এক হাতে তালি বাজে না’। আজ এই বাক্যটি অনুসরণ করে বুঝতে পারলাম, বাক্যটিও যথার্থ। আমাদের একটা বিষয় মানতে হবে, আমাদের দেশের অধিকাংশ সমস্যার জন্য আমরাই দায়ী। যা আমরা চাইলেই দূর করতে পারি। যেমন ধরুন সড়ক দুর্ঘটনা। সরকার রাস্তা পার হওয়ার জন্য ফুটওভার ব্রিজ করে দিয়েছে, কিন্তু আমরা সেই ফুটওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে গাড়ি চলাচলের মাঝখানে দৌড়াচ্ছি। অনেক সময় গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পার হচ্ছি। কিন্তু কেন? আসলে আমরা বাঙালিরা শর্টকার্ট বিষয়টি অতিরিক্ত পছন্দ করে ফেলেছি, যা থেকে নিজেদের উত্তরণ ঘটানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কি আমাদের নীতিগত অভ্যাস কখনো পরিবর্তন হবে না? কয়েক দিন তৎপরতা আর সচেতন করলে আমরাও কিছু দিন ভালোভাবে চলি, তারপর আবার যে লাউ সেই কদু। বলতে লজ্জা লাগলেও বলতে চাই, কুকুরের লেজ যেমন বারো বছর চুঙ্গার ভেতর রাখলেও সোজা হয় না,  আমরাও ঠিক তেমন।

আমরা নিজেরা সচেতন না হলে অন্যকে কেন দোষ দেব, তা আমার বোধগম্য নয়। আমরা একটা কথাই শুধু বলতে শিখেছি, যা কিছু দোষ সব সরকারের, ভুল প্রশাসনের। বাস্তবে কখনো নিজেদেরটা দেখি না। আর এই জন্য আমরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ভুগছি। রাস্তায় বের হলে ধুলোবালি উড়ছে এবং দুর্গন্ধ ময়লা আবর্জনা দেখি। অথচ এই আমরাই যেখানে সেখানে ময়লা, কফ, থুথু ফেলে আমাদের পরিবেশকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছি। মন চাইল দোকান থেকে সেভেন-আপ কিনে খেয়ে রাস্তায় বোতলটা ফেলে বাসায় চলে আসি আমরা। আর সকালে উঠে বলি সিটি করপোরেশন এগুলো পরিষ্কার করে না কেন? বড়ই অদ্ভুত আমরা! আসলে আমাদের বিবেক, বোধ বলতে কিছু আছে বলে মনে হয় না। আমরা সবাই মিলে এক কক্ষে টিভি দেখি, কিন্তু বাকি তিনটি কক্ষের লাইট-ফ্যান চালিয়ে রাখি। দিনে কত পরিমাণ বিদ্যুৎ অপচয় করি তার কোনো হিসাব রাখি না। অপরদিকে বিদ্যুৎ না থাকলে কতক্ষণ বিদ্যুৎ নেই সেই হিসাবটা আমরা ঠিকই রাখি।

কার্যত আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেনি। বাথরুমে গেলে কখনো হিসাব করি না কতটা পানি অপচয় করি, কিন্তু কখনো পানি না থাকলে সেই হিসাবটা প্রতিনিয়ত লাফিয়ে লাফিয়ে বলি। আসলে আমরাই ভালো, শুধু দেশটাই খারাপ! আমাদের ভেতর এমন মানসিকতা যত দিন থাকবে তত দিন আমরা এমন সমস্যায় ভুগব। আমরা নিজেরাই যার যার অবস্থান থেকে সৎ নই, আবার আমরা অন্যের দিকে আঙুল তুলে ধরি। একবার নিজের ভুলগুলো নিজে ভাবুন, চিন্তা করুন মানুষের সঙ্গে কতটা প্রতারণা করছেন আর কতটা উপকার করছেন। চিন্তা করুন কতটা ভালো এবং কতটা মন্দ আপনার মধ্যে আছে। আমি বলছি না আমরা সবাই খারাপ। অবশ্যই আমরা ভালো। তবে আমরা যদি মন্দের পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারি, আমরা অবশ্যই সফল হব। আমরা তখনই সচেতন হব, আর নিজেদের পরিবর্তন করতে পারব। তাই আগে নিজের বিচার নিজে করতে চেষ্টা করি, পরে না হয় অন্যকে দোষ দেব। এই নন্দ ঘোষের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করি। আমার ক্ষতি কীভাবে না হয় সেটা আমার অবশ্যই জানা থাকবে, ঠিক তেমনি আমাদের সমস্যা কীভাবে হবে না সেটাও আমাদের জানা আছে। কিন্তু আমরা সেদিকে গুরুত্ব দিই না। যার কারণে আমাদের এত সমস্যা।

পরিবেশদূষণ, শব্দদূষণ, পানিদূষণ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ যাবতীয় সমস্যায় আমি মনে করি আমরাও জড়িত। আমরা কিছু হলেই আন্দোলন, প্রতিবাদ, সমাবেশ, মানববন্ধন ইত্যাদি করি। কিন্তু যারাই এসব আন্দোলন প্রতিবাদে আসে প্রকৃতপক্ষে তারাই সবচেয়ে বেশি অসচেতন। আগে সচেতন হই, তারপর সচেতন করি, এরপর আন্দোলন, প্রতিবাদ। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, আমি সচেতন হলে অন্যজন সচেতন হবে। আমার দেখাদেখি অন্যজন যেমন আন্দোলন এবং প্রতিবাদে আসে, ঠিক তেমনি আমার দেখাদেখি অন্যজন পরিবর্তন এবং সচেতনও হবে। তাই আগে নিজে পরিবর্তন হই, অন্যকে হতে সাহায্য করি। দেখবেন, আমাদের দেশটা তখন সত্যিকারের সোনার বাংলায় পরিণত হয়েছে।

লেখক : শিক্ষার্থী, ওমরগনি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads