• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
জোটের নামে নীতিহীনতার ঐক্য!

নীতিহীনতার ঐক্য তথা কোটারি স্বার্থের ঐক্য দেশের জন্য শুভ লক্ষণ ও মঙ্গলজনক নয়

সংগৃহীত ছবি

মতামত

অভিমত

জোটের নামে নীতিহীনতার ঐক্য!

  • প্রকাশিত ২৯ অক্টোবর ২০১৮

মোহাম্মদ আবু নোমান

শিশুরা আইচা-বাটি (নারিকেলের খোল) নিয়ে উঠানে, বাগানে, ধুলোবালিতে খেলাধুলা করে থাকে। খেলায় মিল না হলে আইচা-বাটি যার যারটা ভাগ করে নিয়ে যায়। ঠিক আমাদের দেশে শুধু নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা মুনির জোট গঠন ও ভাঙা-গড়া একটি দেশের রাজনীতি ব্যবস্থার জন্য কোনো সুস্থ লক্ষণ নয়। এ ধরনের জোট দেশ ও জনস্বার্থের কথা ভাবে কি না সেটাই দেখার বিষয়।

নীতিহীনতার ঐক্য তথা কোটারি স্বার্থের ঐক্য দেশের জন্য শুভ লক্ষণ ও মঙ্গলজনক নয়। জোটের উদ্দেশ্য কি নীতি ও আদর্শ ছেড়ে, ব্যক্তি ইমেজ ও স্বার্থরক্ষার জন্য ক্ষমতায় যাওয়ার পথ কীভাবে সহজ হবে তার উপায় খোঁজা? এদল-ওদলের লেজুড়বৃত্তি ও ক্ষমতার সিঁড়ি বাগাতে গিয়ে পল্টি খাওয়া আর মানুষের হূদয়ে আসন গড়া এক জিনিস নয়। দেশে প্রায় ১৪০টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। অনেক দলের নিবন্ধন পর্যন্ত নেই। জোটের শরিকদের অনেক লিডারেরই এমপি হওয়ার যোগ্যতা নেই। তাদের কোনো কার্যক্রম নেই, কর্মসূচি নেই। জনগণও জানে না তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী? নির্বাচন এলে তারা দৃশ্যমান হয়। বড় দলের সঙ্গে ভেড়ার জন্য সক্রিয় হয়। এই নিয়েই আমাদের দেশের জোটের-ভোটের রাজনীতি! এ রকম জোটের রাজনীতিতে যেমন সুবিধা আছে, অসুবিধাও তেমনি রয়েছে।

জোটের শুরুতেই বি. চৌধুরীর বেরিয়ে যাওয়া ও পরবর্তী সময়ে নিজ প্রতিষ্ঠিত দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়া- এমন আরো ঘটনা ঘটবে, তাই মনে হচ্ছে। কেননা নানা মুনির নানা মত যেখানে, সেখানে কেউ কারো চেয়ে কম বোঝেন না। আসলে তাদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য কেউ জানে কি? বড় ডিগ্রি, পূর্বে বড় পদাধিকারধারী অথবা আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হলেও রাজনীতিতে অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে জনগণ ভোট দেবে না। জনগণ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। সারা বছর জনগণের আপদে-বিপদে, রোগ-শোকে যাদের দেখা মেলেনি, তারা নেতা সেজে এখন সেবকের ভূমিকায়! জনবিচ্ছিন্ন মানুষের ওপর জনগণের কল্যাণের দায়িত্ব অর্পণ অযৌক্তিক, অনুচিত ও বেমানান। জনবিচ্ছিন্ন মানুষ জনগণের সুখ-দুঃখ বোঝার ক্ষমতা রাখেন না। এজন্য কোনো প্রার্থী যদি জনদরদি, সদয়, ন্যায়বান, সততাপরায়ণ হন, সেই প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। জনগণ এখন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী খোঁজে না, খোঁজে তার ব্যক্তিত্ব, যোগ্যতা ও সততা।

গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে জনগণের জন্য কাজ করে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে হয়। গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় সব কিছুই জনগণের জন্য এমনটাই বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা নেই। ক্ষমতা পাওয়াই যেন মুখ্য বিবেচনা। ক্ষমতার জন্য চলে সব নীতি বিসর্জন। পাঁচ-দশ কোটি টাকা ইনভেস্ট করে জনপ্রতিনিধি হওয়ার প্রতিযোগিতার ধুম পড়ে যায়। কারণ, জনপ্রতিনিধি হওয়ার মতো লাভবান ব্যবসা আর দ্বিতীয়টি নেই!

দলীয় স্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে জোটবদ্ধ হলে তা টেকসই হয়। জোট বা ঐক্য যদি দেশ, মাটি ও মানুষের স্বার্থে স্থায়ী থাকে, সেই লক্ষ্যে জোটবদ্ধ রাজনৈতিক দলের সব নেতা ঐক্যবদ্ধ হন, তাহলে সে রকম জোট জনগণ গ্রহণ করবে।

নির্বাচন একক কিংবা জোট বা দলীয় সেটা সর্বসাধারণের দেখার বিষয় নয়। জনগণ জানতে চায়, আসন্ন নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে। তবে দেশে আগামী নির্বাচন যে সুষ্ঠু হবে, তেমন কোনো লক্ষণ এখনো খুঁজে পাওয়া যায় না। নির্বাচনের আগে কী ঘটবে, কী ধরনের নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনের পরে রাজনীতির পথরেখা কী হবে, তাও অন্ধকারাচ্ছন্ন। সরকার যেখানে কিছুতেই ছাড় দিতে চাচ্ছে না, সেখানে বিরোধী দলও অনড়। নির্বাচন কমিশন আজ্ঞাবাহী। প্রশাসন আজ্ঞাবাহী। এজন্য জোট হোক আর না হোক, সব মিলিয়ে সুষ্ঠু একটা ভোট যে হবে এর কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যাশা- আগামী নির্বাচন স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। জনগণ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। কোনো হঠকারিতা ও স্বার্থান্বেষী ভাবনার প্রতিফলন দেখতে চায় না।

লেখক : সাংবাদিক

abunoman1972@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads