• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
নাগরিকজীবনের বাধা অবরোধ-ধর্মঘট

বিআরটিসিসহ সরকারিভাবে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি

সংগৃহীত ছবি

মতামত

নাগরিকজীবনের বাধা অবরোধ-ধর্মঘট

  • প্রকাশিত ৩০ অক্টোবর ২০১৮

মোমিন মেহেদী

বর্তমানে আমরা এমন এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছি যে, ভালোর জন্য নামলেও দুর্ভোগে পড়বে দেশের মানুষ, আবার মন্দের জন্যও কষ্টে কাটবে তাদের জীবন। এমন একটা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নতুন প্রজন্মের রাজনীতিক-শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও অর্থনীতিকদের এগিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই। যেমন বিকল্প নেই নিঃশ্বাসের। আর তাই ৪৮ ঘণ্টা ধমর্ঘটের যে ডাক পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে, তাদের এমনভাবে বলা হোক- যাতে করে আর কোনোদিন কোনো আন্দোলনের কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি না হয়। বিশেষ করে বাহন যেন বন্ধ না হয়। এ বিষয়টি মাথায় রেখে সড়ক সমাবেশ বা অন্য কোনো আন্দোলনের রাস্তায় তারা হাঁটবে, হাঁটুক। দেশের মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করে আর কোনো আন্দোলন যেন না হয়, বিষয়টি মাথায় রেখেইে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

প্রায়ই দেখা যায়, যদি মালিকপক্ষ বা শ্রমিকপক্ষের মধ্যে কোনো বিষয়ে আন্দোলনের সূচনা হয়, তাহলেই নেমে আসে ভয়াবহ বিপর্যয়। সেই বিপর্যয়ের কারণে স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠানে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। কিন্তু তেমন হওয়ার জন্য তো বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ হয়নি? প্রশ্নবোধক সময়ের হাত ধরেই এগিয়ে যেতে হয় আমাদের। কখনো পৌঁছে যাওয়া যায় সমাধানে, কখনো বা রোষানলে। তবু বরাবরের মতো অবিরত এগিয়ে যাব বলেই ঐক্যবদ্ধ, আরো ঐক্যবদ্ধ হব আগামীতেও। এভাবেই সব অন্যায়ের রাস্তা বন্ধ করতে করতে, গড়তে গড়তে দেশ এগিয়ে যাবে। তা না হলে কথায় কথায় এখন যেমন হরতাল হয়, সমাবেশ হয় রাস্তা বন্ধ করে, আগামীতেও হবে, আর ভোগান্তি হবে দেশের সাধারণ মানুষের। যা কাম্য নয়, কাম্য হতেও পারে না।

এই তো সেদিনের কথা। সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা পরিবর্তনের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। ফেডারেশনের নেতা ও শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। পরে তারা মিছিলটি নিয়ে বিকাল ৩টায় সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করেন। সমাবেশে হুট করেই দেশজুড়ে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এরপরও দাবি মেনে না নেওয়া হলে লাগাতার কমর্সূচি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা। অবশ্য সমাবেশে বক্তারা বলেছিলেন, গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পাস হয়েছে। এ আইনে শ্রমিক স্বার্থরক্ষা ও পরিপন্থী উভয় ধারা রয়েছে। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য না করে, অপরাধ হিসেবে গণ্য করে আইন পাস করা হয়েছে। আইনে সড়ক দুর্ঘটনা মামলায় অপরাধী হয়ে ফাঁসির ঝুঁকি রয়েছে। এমনই অনিশ্চিত ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পেশায় দায়িত্ব পালন করা শ্রমিকদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কোনো পথ আমাদের সামনে খোলা নেই। আইনটি পাস হওয়ার পর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের মহাসড়কগুলোতে পুলিশি নির্যাতন শুরু হয়েছে। গাড়ির কাগজপত্র সঠিক থাকলেও রেকারিংয়ের নামে হাজার হাজার গাড়ি নগদ জরিমানা গুনছে। দাবি না মানলে লাগাতার কর্মবিরতি চলবে বলে জানান তারা। এ ছাড়া পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আট দফা দাবি তুলে ধরা হয়। সমাবেশে ‘ফাঁসির রশি গলায় নিয়ে আমরা গাড়ি চালাবো না’সহ বিভিন্ন স্লোগানসমৃদ্ধ পোস্টার-ব্যানার লক্ষ করা গেছে। তা ছাড়া অনেকে শরীরে রঙ দিয়ে দাবি লিখে সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছেন।

এই আন্দোলনের সূচনাদিনেই প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তার একপাশ অবরোধ করে সমাবেশ করায় ভোগান্তিতে পড়ে জনসাধারণ। পল্টন মোড় থেকে গাড়ি ঢুকতে না পারায় কাকরাইলের দিকে অধিক গাড়ির চাপে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। যে কারণে অনেকেরই অফিস থেকে বের হয়ে মতিঝিল থেকে এক ঘণ্টা লেগেছে পল্টন মোড়ে যেতে। কখন বাসায় পৌঁছাতে পারবেন তা সৃষ্টিকর্তা জানেন। এমন অনিশ্চয়তা তাদের জীবনে নেমে আসার পেছনে অবশ্য স্ব-স্ব দায়বদ্ধতা আছে। যখন এই লেখাটি লিখছি, তখন নিজেকে একজন সাধারণ মানুষ ভেবে, দেশের একজন সচেতন নাগরিক ভেবে লিখছি। পাশাপাশি সেভ দ্য রোড-এর মতো অবিরাম কাজ করে চলা এক নিরন্তর সক্রিয় সংগঠন নিয়ে এগিয়ে চলেছি। তখন অনেকেই আরামের কথা ভেবে, আয়েশের কথা ভেবে এড়িয়ে চলেছেন নাগরিকজীবনের সবচেয়ে বড় প্রয়োজনীয় এই আন্দোলনটি। সুতরাং এ ধরনের জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা আন্দোলনের বিরুদ্ধে এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে সবার সহযোগিতা-ঐক্যবদ্ধতা এখন খুব প্রয়োজন। তা না হলে একদিকে লাশের মিছিল, অন্যদিকে ভোগান্তি তৈরি করবে হতাশা।

পাশাপাশি সাধারণ জনগণের এসব ভোগান্তির প্রতি সরকারের নজরদারি বাড়ানো উচিত। বিআরটিসিসহ সরকারিভাবে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি, যাতে করে এভাবে দেশকে, দেশের মানুষকে খাদের কিনারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তা না করে, যদি ক্ষমতায় আসার আর থাকার চেষ্টা অনবরত তৈরি হতে থাকে, তাহলে কিন্তু সাধারণ মানুষের রোষানল থেকে মুক্তি পাবে না কেউ।

আমরা জানি, ৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ সাত দফা দাবিতে পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধমর্ঘট শুরু হয়েছিল। এরপর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছিলেন ট্রাক পরিবহন শ্রমিকরা। শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) কেরানীগঞ্জে ট্রাকচালক-শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক নিহত হন। আর রক্ত নয়, প্রাণ নয়। সরকারি পরিবহন বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রমিক-মালিক সমন্বয়ের জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ গ্রহণ আজ জাতির অন্যতম দাবিতে পরিণত হয়েছে। যে দাবির সূচনায় সেভ দ্য রোড-এর রয়েছে আন্দোলন-সংগ্রাম-মিটিং-মিছিলের গৌরবান্বিত পথচলা। আসুন, পথ চলি নিরাপদ সড়কে।

লেখক : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ-এনডিবি

mominmahadi@gmail.com

         

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads