• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
প্রশ্ন ফাঁসের প্রতিরোধ দরকার

বর্তমানে প্রশ্নফাঁসের প্রধান এবং অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক

সংগৃহীত ছবি

মতামত

অভিমত

প্রশ্ন ফাঁসের প্রতিরোধ দরকার

  • প্রকাশিত ৩০ অক্টোবর ২০১৮

নুর আলম ইসলাম মানিক

প্রশ্নফাঁস— শব্দটি শুনলেই এখন একটা আতঙ্ক ও ভয় কাজ করে। প্রশ্নফাঁস এখন মাদকের চেয়েও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে যেন! যা বর্তমান সমাজে মহামারী ও সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। AIDS যেমনি একটি মরণব্যাধি রোগ, যার কোনো প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। ঠিক তেমনি প্রশ্নফাঁস একটি পরীক্ষাপূর্বক ব্যাধি। আমার মতে, AIDS-এর সঙ্গে মিল রেখে এর নামকরণ করা যেতে পারে ‘Student Immune Examency Cause Syndrome’— যার কোনো ওষুধ এখনো আবিষ্কার হয়নি।

শিক্ষা মানুষের নৈতিক ও আত্মিক শক্তি জোগায়। শিক্ষা মানুষকে মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক হওয়ার শিক্ষা দেয়। এই শিক্ষিত মানুষই আমাদের দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দেবে। অথচ শিক্ষার মতো একটি মৌলিক বিষয়ে বাংলাদেশ প্রশ্নফাঁস নামক মহামারীতে বিপর্যস্ত। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে চাকরির নিয়োগ, বিসিএস, এমবিবিএস, এইচএসসি, এসএসসি, জেএসসি, পিএসসি পর্যন্ত প্রশ্নফাঁস নামক মহামারীতে জর্জরিত আমাদের পরীক্ষাব্যবস্থা, যা আমাদের জীবনে গভীর অন্ধকার বয়ে আনছে এবং এটা বাংলাদেশের জন্য অশনিশংকেত। একটি সমৃদ্ধ নতুন প্রজন্ম গড়ার ক্ষেত্রে প্রশ্নফাঁস বড় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে।

বর্তমানে প্রশ্নফাঁসের প্রধান এবং অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে অতি দ্রুত সম্ভব হচ্ছে যোগাযোগ, যার ফলে কিছু অসাধু লোকের জন্য সহজলভ্য হচ্ছে প্রশ্ন পাওয়া। আমার মতে, দুটি কারণে প্রশ্ন ফাঁস হতে পারে। প্রথমত, রাজনৈতিকভাবে সরকারকে জনগণের সামনে বিব্রত করা এবং দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিকভাবে বিশাল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। আমাদের দেশে টাকায় নাকি বাঘের দুধও পাওয়া যায়। প্রশ্ন ফাঁস যারাই করুক, তারা নিশ্চয়ই একটি শক্তির ছত্রছায়ায় সম্পৃক্ত তাতে তো কোনো সন্দেহ নেই। তাহলে কি আমরা বলতে পারি, ‘টাকা যখন কথা বলে, সত্য তখন চুপ থাকে।’

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রশ্ন ফাঁসের প্রভাবের মতো সঙ্কটময় মুহূর্ত এর আগে মনে হয় না আর কিছু হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আগে আমরা দেখতাম তরুণ-তরুণীরা আইফোনের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তুটিও বিক্রি করে দিয়েছে। হাস্যকর হলেও এটাই সত্যি, অবস্থা এতটাই বেগতিক যে, কিছুদিন পর শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন পাওয়ার জন্য তেমন কিছু যে করবে না তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ভাবতেও অবাক লাগে, এখনকার শিক্ষার্থীরা ‘আমি এ প্লাস পেয়েছি’ তা ইংরেজিতে অনুবাদ করতে পারুক আর না-ই পারুক, তাতে কোনো অসুবিধা না থাকলেও A+ না পেলে সমস্যা আছে। কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। প্রশ্ন কেনার জন্য টাকা চুরি করে সন্তান কিংবা বাবা। চুরি করে ধরা পড়ার পর কে কাকে কী বলবে? দোষটা কার? সন্তানের, বাবার, নাকি আমাদের এই শিক্ষাব্যবস্থার?

এখন পঞ্চম শ্রেণির শিশুও বোঝে, ৫০০ টাকা হলে প্রশ্ন পাওয়া যায় ফেসবুকে। তাকে যদি বলা হয়- পড়ছ না কেন? যদি সে বলে, ‘কী লাভ পড়ে, এত রাত জেগে? ফেসবুকেই তো প্রশ্ন মিলবে...।’ এ অবস্থায় আমরা তাকে কী জবাব দেব? এভাবে চলতে থাকলে সত্যিই একদিন আমরা মেরুদণ্ডহীন একটা অকালকুষ্মাণ্ড জাতিতে পরিণত হব। আমরা কি কখনো এই ভয়ঙ্কর বিষবৃক্ষ থেকে মুক্তি পাব? সে আশাই জাগিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা সরব হয়ে উঠেছেন।

এ ছাড়া এবার বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এদের সম্মিলিত চার দফা— ‘ঘ’ ইউনিটের ফল বাতিল, পুনঃপরীক্ষা গ্রহণ, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এবং বিগত বছরে যারা জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা সময়ের যৌক্তিক দাবি বলেই মনে করছি। এক্ষেত্রে সরকারকেও সহযোগী মনোভাব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাশে এসে দাঁড়াতে অনুরোধ করব। কেননা দেশ ও জাতির স্বার্থে আগামীতে আমাদের আরো বড় বড় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। জাতিকে একটি মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা উপহার দিন।

লেখক : বিজ্ঞান বিভাগ, শ্রীনগর সরকারি কলেজ, মুন্সীগঞ্জ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads