• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
স্কুল ব্যাংকিংয়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ

স্কুল ব্যাংকিংয়ে ছাত্রছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে

সংগৃহীত ছবি

মতামত

স্কুল ব্যাংকিংয়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ

  • প্রকাশিত ০২ নভেম্বর ২০১৮

মাহবুবা আহসান

ছাত্রজীবন হলো জীবনের সঙ্গে জড়িত নানা অনুষঙ্গের শিক্ষালয়। একজন ছাত্র বিদ্যালয়ে এসে যেমন তার শিক্ষা ও চারিত্রিক গুণাবলি রপ্তের পাশাপাশি জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখে, পাশাপাশি তেমনি সে অর্জন করতে শেখে তার আশপাশের পরিবেশ থেকেও। মনে রাখতে হবে দেশ ও দশের সুন্দর সুস্থ ভবিষ্যৎ নির্ভর করে ছাত্রদের ওপরই। শৈশবে শিশুর হূদয় কোমল থাকে এবং তারা সাধারণত অনুকরণপ্রিয় হয়। সেই সময় তাদের কোমল হূদয়ে যে ছাপ পড়ে, তা আজীবন সাথী হয়।

‘ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালিকণা বিন্দু বিন্দু জল/ গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল’। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালিকণা দিয়ে যেমন মহাদেশ এবং বিন্দু বিন্দু জল দিয়ে যেমন সাগরের সৃষ্টি হয়, ঠিক তেমনি ‘ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় দিয়েও একটা বড় সঞ্চয়/মূলধন গড়ে তোলা সম্ভব। আর এই মূলধন দিয়েই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পক্ষে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। মানুষ আয় করে ভোগ করার জন্য। ভবিষ্যতের কথা ভেবে বর্তমানে অর্জিত আয়ের পুরোটাই মানুষ ভোগ করে না। আয়ের কিছু অংশ রেখে দেয় কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তথা ব্যাংকে। এই রেখে দেওয়া অংশের নাম সঞ্চয়। ব্যক্তির সঞ্চয় নির্ভর করে দূরদৃষ্টি, পারিবারিক দায়িত্ববোধ, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদির ওপর। স্কুল ছাত্রছাত্রীদের সঞ্চয়ে আগ্রহী করে তোলার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের তথা পরিবার ও দেশের অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনয়ন করাই স্কুল ব্যাংকিংয়ের মূল লক্ষ্য।

স্কুল ব্যাংকিংয়ে ছাত্রছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তারা যেন অপ্রয়োজনে অর্থাৎ অহেতুক টাকা-পয়সা নষ্ট না করে সঞ্চয়ে অগ্রহী হয়। তাদের গল্পের ছলে, কবিতার ছন্দে বোঝাতে হবে, তাদের ভেতরে চেতনা জাগ্রত করে তুলতে হবে, যেমনটি- ছোটবেলায় সেই নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের লেখা কবিতাটিতে আমরা পড়েছি ছোট মৌমাছি মধু সংগ্রহে, পিপীলিকা ভবিষ্যতের শীতের সঞ্চয়ে ব্যস্ত, ঠিক তেমনি স্কুলজীবন থেকেই তারাও যেন তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে বড় সঞ্চয় তৈরি করে ভবিষ্যতের নানা দুর্যোগের হাত থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করতে পারে। এ ছাড়া আরো বোঝাতে হবে, তাদের এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় ব্যাংকে জমা হলে সেগুলো একত্রে বড় সঞ্চয়/মূলধন সৃষ্টি হবে। সেই মূলধন নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানায় বিনিয়োগ করলে তাতে কর্মসংস্থান হবে। বিনিয়োগ মানে সঞ্চিত অর্থ যখন উৎপাদন বাড়ানোর কাজে ব্যবহূত হয়, তখন তাকে বিনিয়োগ বলে। সেখানে বহু লোকের চাকরি হবে। সেক্ষেত্রে আয় হবে। আবার আয় থেকে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ হবে। এভাবে চাকা ঘুরতে থাকবে। একে অর্থনৈতিক চাকা বলে। এ চাকাকে কখনো থামতে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ তথা এই জাতিকে শান্তিময় ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে এবং জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে সম্পদ তথা সঞ্চয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‘দারিদ্র্য হলো অপরাধ ও বিপ্লবের জননী’। তাই ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দেওয়া, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য সঞ্চয় অতি আবশ্যক। অর্থাৎ সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য দরকার সুন্দর ব্যাংকিং সঞ্চয়।

হিসাব খোলার জন্য প্রাথমিক করণীয় : প্রাথমিকভাবে ন্যূনতম ১০০ টাকা জমা দিয়ে হিসাব খোলা যাবে। তবে যে কোনো পরিমাণ অর্থ এই হিসাবে জমা দেওয়া যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ/ব্যাংক অফিসিয়াল/শাখার যে কোনো হিসাবধারী কর্তৃক সত্যায়িত ছবি (কমপক্ষে তিন কপি করে) প্রয়োজন হবে। ছাত্রছাত্রী সম্পর্কে স্কুল কর্তৃপক্ষের সনদ এবং অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা কমিশনার/চেয়ারম্যান কর্তৃক ইস্যুকৃত নাগরিকত্ব সনদ গ্রহণ সাপেক্ষে হিসাব খোলা যাবে। হিসাব খোলার সময় অবশ্যই নমিনি (নমিনির ছবি হিসাব পরিচালনাকারী কর্তৃক সত্যায়িত হতে হবে এবং নমিনির মৃত্যু অথবা প্রয়োজন অনুসারে নমিনি পরিবর্তনযোগ্য) নির্বাচন করতে হবে।

সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলো। অতীত কখনো ফিরে আসে না। অতীত গোপনে গোপনে আমাদের জীবনে কাজ করে যায়। মানুষ যখন অতীত স্মৃতির মাঝে ডুবে যায়, তখন বর্তমানকে মনে হয় অতি তুচ্ছ। আনন্দ-বেদনায় ঘেরা বাল্য ও  কৈশোরের দিনগুলো আজ কর্মক্লান্ত বিনোদনে সাড়া দিয়ে যায় মনের কোণে। প্রত্যেক জীবনেরই অতীত আছে এবং স্মৃতিও আছে। এমনই এক পুরনো দিনের প্রাথমিক স্কুলজীবনের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম গত ২৫ অক্টোবর কেন্দুয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন ও স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন।

সুনাগরিক জাতীয় সম্পদ। সুনাগরিকের সংখ্যা যে দেশে যত বেশি, সে দেশ তত বেশি উন্নত। আর সেই ব্যক্তিটিই সুনাগরিক যিনি বুদ্ধি, বিবেক আর আত্মসংযমের অধিকারী। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কার্যাদি সুন্দরভাবে, সুচারুভাবে সম্পাদন করার জন্য বুদ্ধি দরকার। বিবেক হলো সুনাগরিকের জাগ্রত শক্তি। আর আত্মসংযম, এটা হলো সুনাগরিকের শ্রেষ্ঠ গুণ। সুন্দর হূদয় যার, তাকে সুহূদ বলে। সুন্দর হূদয়ের সান্নিধ্যে মানবজীবন আনন্দমুখর ও সার্থক হয়ে ওঠে। 

সবার উপর মানুষ সত্য তার উপরে নাই- কথাটি কে না জানে? কিন্তু ক’জন ব্যক্তি এ সত্যটিকে বাস্তবে পরিণতি দান করতে পারেন? হ্যাঁ, যারা পারেন বা পেরেছেন, কেবল তারাই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মানুষের কাছে বড় মানুষ বলে চিহ্নিত হয়েছেন।

সবশেষে বলতে চাই, আমাদের সন্তানদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার পেছনে রয়েছে অনেক দায়িত্ব, অনেক কর্তব্য। এ ব্যাপারে কখনোই নির্লিপ্ত থাকা উচিত নয়। চলুন, ছাত্রজীবন থেকেই তাদের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলি। কেননা আজকের ছাত্র আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। অর্থনীতির মতে, অধিক সঞ্চয় থেকে অধিক বিনিয়োগ এবং অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, যা একটি সমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য একান্ত অপরিহার্য।

লেখক : ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads