• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সবুজায়ন প্রয়োজন

  • সাঈদ চৌধুরী
  • প্রকাশিত ০৫ নভেম্বর ২০১৮

কঠিন বর্জ্যের মধ্যে যে বর্জ্যগুলো হয়, তার সঙ্গে খাবারের বর্জ্য হয় অনেক বেশি। খাবারের যে পরিমাণ বর্জ্য হয় এগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরাসরি ফেলা হয় প্রকৃতিতে। অরগানিক হওয়ায় বেশিরভাগ খাবারের বর্জ্য পচনশীল হলেও খাবারের সঙ্গের বর্জ্যগুলো কিন্তু পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আপনার, আমার বাড়ির বর্জ্য দিয়েই একসময় ভরে ওঠে আমাদের পাশের খাল, বিল, নদী-নালাগুলো।

অথচ আমাদের চারপাশের পরিবেশ কতটুকু ময়লা গ্রহণ করতে পারবে- এ ব্যাপারে কি কোনো সমীক্ষা এখন পর্যন্ত আছে? এ ধরনের কোনো সমীক্ষা এখনো আমাদের দেশে নেই, আর নেই বলেই প্রচুর পরিমাণ ময়লা এখনো আমরা যেখানে-সেখানে ফেলে রেখেই নিশ্চিন্ত মনে ঘুরে বেড়াতে পারছি! একটু খেয়াল করলে আপনি নিজেই বর্জ্য তৈরির ফ্যাক্টরি। আর এই ফ্যাক্টরি হওয়ার পেছনে বড় কারণই হলো আইন না মানা ও নিজের কাজটাকে দোষ না ভাবা। বর্জ্য এক দিকে যেমন ক্ষতির কারণ, তেমনি এটা সম্পদও যদি আমরা তা ব্যবহার করতে জানি। সবুজায়নের যে বিশ্ব কল্পনা করা হয়, সে বিশ্বের মূল নিয়ামক হবে সবুজায়ন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।

বর্জ্য থেকে যত দ্রুত সম্ভব শক্তির উৎস বের করতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তারা সফলও। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশ বর্জ্য থেকে নব্বই শতাংশ পর্যন্ত শক্তির উৎস হিসেবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে আমরা এখনো প্রকল্প হাতে নেওয়ার প্রক্রিয়াধীন ব্যবস্থাপনার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছি।

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস, জৈবসার তৈরির ব্যাপারটি আমরা জানলেও কতটুকু সফলভাবে তা আমরা প্রয়োগ করতে পারছি? একটি বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বানাতে সময় প্রয়োজন প্রায় চার থেকে পাঁচ বছর। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, চট্টগ্রামের মতো ভারী শিল্প এলাকাগুলোতে যদি এখন থেকে আরো চার বছর এমনিভাবে ময়লাকে অব্যবস্থাপনার মধ্যে রাখা হয়, তাহলে আমরা এক ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ সম্বন্ধীয় অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়ব- এতে কোনো সন্দেহ নেই। গাজীপুরের গজারি বনের অনেক জায়গায় খাবারের বর্জ্য রাতের আঁধারে ফেলে রেখে চলে যায় গাজীপুরের বিভিন্ন হোটেল কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন কোমপানি ও আবাসিক এলাকার মানুষেরা। এতে করে মাটিতে থেকে পচে গ্যাসের সৃষ্টি হয়ে গাছ মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে! অনেক জায়গায় গজারি গাছ এমনিতেই মরে গেছে। গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় রাস্তার গা-ঘেঁষা অনেক জায়গায় দেখা যায়, গজারি গাছগুলো পাতাহীন হয়ে মরে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর অভিশাপ দিচ্ছে আমাদের!

যেহেতু বর্জ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের শক্তির রূপান্তর সম্ভব, সেহেতু এ বিষয়টি নিয়ে কালক্ষেপণ করার কোনো অবকাশ নেই। বড় বড় শিল্প এলাকাগুলোর মানুষের গ্যাসের চাহিদা, বিদ্যুতের চাহিদা এই বর্জ্য থেকেই মেটানো সম্ভব। এই প্ল্যান্টগুলো স্থাপনে বিশ্বের অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন। কারণ তাদের চাহিদা পূরণেই আমাদের শিল্পে বড় ধরনের পরিবর্তন এবং এ থেকে ঝুঁকি মোকাবেলার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

কিছু কিছু বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদেরও ভূমিকা থাকতে হবে। বাড়িতে কাগজের ব্যবহার সীমিত হচ্ছে কি না, প্লাস্টিক বোতল সরাসরি বাইরে কেউ ফেলছে কি না ইত্যাদি বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার। এর পাশাপাশি বাড়ির সুয়্যারেজের লাইন কোথা দিয়ে গেছে এটিও দেখা জরুরি।

যারা বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য কিনে নিয়ে যায়, তাদেরও একটি নিয়মের মধ্যে আসতে হবে। পুড়িয়ে ফেলা বর্জ্য পরিবেশের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলছে তা নির্ধারণ করে পোড়ানোর ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক ফিল্ট্রেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় কি না তা নিয়ে গবেষণারও প্রয়োজন রয়ে গেছে। প্রয়োজনে সরকার উদ্যোগী হয়ে এ ব্যাপারে অর্থায়নের মাধ্যমে একটি মডেল প্রকল্প তৈরি করার কাজও করে দিতে পারে। এতে অনেক মানুষ উৎসাহিত হবে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন ঘটবে।

সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে আবেদনের ভেতর দিয়ে এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যদিও বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে, তা আরো বিস্তৃতভাবে কীভাবে কোন পন্থায় করা যায় সে ব্যাপারে আশু পদক্ষেপ কামনা করি। বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন সম্ভব না হলে, বর্জ্যের দূষণের নিচেই চাপা পড়বে সভ্যতা। আর এর বিপরীত চিন্তা হলো সবুজাভ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হতে পারে অন্যান্য দেশের কাছে একটি মডেল।

 

লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads