• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
বাংলাদেশের রাজনীতিতে হেফাজতে ইসলাম

হেফাজতে ইসলাম

সংরক্ষিত ছবি

মতামত

বাংলাদেশের রাজনীতিতে হেফাজতে ইসলাম

  • মোঃ আলাউদ্দিন
  • প্রকাশিত ০৫ নভেম্বর ২০১৮

এইতো কিছুদিন আগেও হেফাজতে ইসলাম শব্দটা উচ্চারিত হলে চোখের সামনে ভেসে উঠতো ৫ মে ২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্বরকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষের নারকীয় তাণ্ডব!

বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি হেফাজতের আত্নপ্রকাশ হলেও ২০১৩ সালের ৫ মে ১৩ দফা দাবি নিয়ে ঢাকা অবরোধ করে মতিঝিলে সমাবেশ করে সংগঠনটি ব্যাপক আলোচনায় আসে। একটা বিশেষ মহলের সমর্থন পেলেও নারীদের তেঁতুলের সাথে তুলনা করে ব্যাপক সমালোচনার সন্মুখীন হন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

হেফাজতের ১৩ দফার অন্যতম দফাগুলো ছিলো -

প্রথম : আল্লাহ্, রাসুল ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস।

দ্বিতীয় : শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক এবং রাসুল এর নামে কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা।

তৃতীয় : ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।

চতুর্থ : ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা।

ঢাকা অবরোধের নামে ৫ মে হেফাজতে ইসলাম মতিঝিল-পল্টনের দুই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্যাপক ভাঙচুর, হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি রাস্তার আইল্যান্ডে থাকা গাছপালা! হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে একুশে টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার নাদিয়া শারমিনকে পল্টন মোড়ে লাঞ্ছিত করে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।

সংঘর্ষের সময় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন- হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, যারা বিশৃঙ্খলা করছে, তারা তাদের কর্মী নয়। হেফাজতে ইসলামের মোড়কে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরাই এটা করছে।

বিবিসি বাংলায় ৫ মে ২০১৪ সালে ফিরে দেখা : হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ শিরোনামে কাদির কল্লোল সে সংবাদ প্রকাশ করে তাতে বলা হয়- হেফাজতের নেতাদের অনেকেই মনে করেন, সে সময় যুদ্ধাপরাধের বিচারে সর্ব্বোচ্চ সাজার দাবিতে শাহবাগে বড় ধরণের যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল,তার পাল্টা হিসেবে হেফাজতের ১৩ দফার আন্দোলনকে দাঁড় করানোর একটা চেষ্টা ছিল কোন মহল থেকে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত আসামী আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। রায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে সাহবাগে গণজাগরণের সূচনা হয়। ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা শাহবাগে এই আন্দোলন শুরু করলেও খুব দ্রুতই এই আন্দোলন সর্বস্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকার শাহবাগে জড়ো হয়।

৫ মে ২০১৩ পক্ষে বিপক্ষে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে, রয়েছে অনেক কল্প কাহিনী, অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ।

৫ মে ২০১৩ সালের পর অতিবাহিত হয়েছে ৫ বছর ছয় মাসে। ৪ নভেম্বর ২০১৮ সালে ৫ মে ২০১৩ সালের ঠিক উল্টো পথে হেফাজত। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক পজ্ঞা দিয়ে জয় করেছেন হেফাজতে ইসলামেকে। ফলাফল কওমি মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তরের (ইসলামিক শিক্ষা ও আরবি) স্বীকৃতি দিয়ে আইন পাস করায় ৪ নভেম্বর সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুকরানা মাহফিলের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। এই মাহফিলে প্রধান অতিথি করা হয় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে। উল্লেখিত অনুষ্ঠানে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী কওমি শিক্ষার সনদের স্বীকৃতি দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয় বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই অবদান ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে।

লেখক: প্রভাষক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
দোল্লাই নোয়াবপুর সরকারি কলেজ
চান্দিনা, কুমিল্লা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads