• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

মেধাবী তরুণদের কর্মসংস্থান ও রাজনীতি

  • মোহাম্মদ অংকন
  • প্রকাশিত ১১ নভেম্বর ২০১৮

বর্তমানে দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা, সামাজিক জীবনাচরণ কিংবা রাজনীতি কোনোটাই তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে না। ফলে তরুণ প্রজন্মের একটি অংশ আজ বিপথগামী। পূর্ব হতেই তরুণরা মাদক, ইভটিজিং ও সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। এগুলোর পাশাপাশি বর্তমানে এখন তারা নতুন উপদ্রব জঙ্গিবাদে মগ্ন। তরুণদের জঙ্গিবাদে জড়ানোর সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও, ধীরে ধীরে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান রয়েছে ও দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী নানা অভিযান চলমান। আশা করি, দেশ জঙ্গিমুক্ত হবে। তবে শুরু থেকে সরকার এ ব্যাপারে সক্রিয় হলে দেশ হতে জঙ্গিবাদের বটবৃক্ষ উপড়ে ফেলা সহজ হতো। তবে আসল কাজ হলো আমাদের নির্ণয় করতে হবে, দেশের তরুণ প্রজন্ম বিপদগামী কেন? কেন তারা অসামাজিক কাজকর্মে লিপ্ত? কেন তারা জঙ্গিবাদের তালিকায় নাম লেখাচ্ছে? তারা কি স্বচ্ছ রাজনীতিতে নাম লেখাতে পারছে না? কিংবা যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান পাচ্ছে কি?

আজকাল আমাদের দেশের নেতা-নেত্রীদের মুখে যখন-তখন তারুণ্যের জয়গান উচ্চারণ করতে দেখা যায়। কিন্তু অনেকেই জানেন না বাংলাদেশের তরুণদের প্রকৃত অবস্থান কোথায়! বিশ্ব মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে বর্তমানে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণের সংখ্যা ১৮০ কোটি। অর্থাৎ প্রতি চারজনে একজন তরুণ। সে হিসেবে বাংলাদেশেও প্রায় পাঁচ কোটি তরুণ রয়েছে। এই যে বিপুলসংখ্যক তরুণ এবং তাদের অমিত শক্তি ও সম্ভাবনাকে আমরা কি কাজে লাগাতে পারছি? বলা হচ্ছে, তরুণ বা যুবকদের কর্মসংস্থানে বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে আছে। বিশ্বের ১৮৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭তম। যদি আমরা ধরেই নিই দেশে পাঁচ কোটি তরুণ রয়েছে। তবে প্রশ্ন- এই পাঁচ কোটি তরুণের মধ্যে কতজন উপযুক্ত শিক্ষা নিতে পেরেছে?  যদি এ সংখ্যা কম হয়, তাহলে তরুণ প্রজন্ম আলোর মুখ দেখবে কীভাবে? আমি মনে করি, সুষ্ঠু পরিবেশ পেলে শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও লাখ লাখ তরুণ নিজেদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে, দেশের ও সমাজের কল্যাণে নিজেদের মেধা ও শ্রম দিতে প্রস্তুত। কিন্তু নানাবিধ কারণে তরুণদের মেধা ও শক্তিকে কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। লেখাপড়া শেষ করেও তারা চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে না। তরুণরা বেকার হচ্ছে। যার যা করার কথা নয়, বেঁচে থাকার জন্য সেই ধরনের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। বিদেশে গিয়েও অনেকে চাকরি না পেয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।

উন্নত কিংবা উন্নয়নশীল সব দেশেই কর্মসংস্থান একটি বড় সমস্যা। বাংলাদেশে এই সঙ্কট এতই প্রকট যে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের বিরাট অংশ বেকারত্বের অভিশাপ বয়ে বেড়াতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশের তরুণরা অনেক সৃজনশীল। কিন্তু কর্মসংস্থান সমস্যাটা সে সৃজনশীলতাকে গ্রাস করছে। তাই প্রতিটি শিক্ষিত যুবক যেন কর্মসংস্থান পায়, সে বিষয়টি সর্বপ্রথম বাংলাদেশ সরকারের নিশ্চিত করা উচিত। এ দেশের তরুণদের সম্ভাবনাও অনেক। কিন্তু তাদের যথাযথ ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে না। দেশে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তরুণদের ভূমিকা নেই বললেই চলে। এই ভূমিকা না থাকার জন্য নিশ্চয়ই তরুণরা দায়ী নয়। দায়ী হলো সেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব, যারা তরুণদের কথা ভাবেন না। আর ভাবলেও যেভাবে ভাবেন, সেটি মোটেই তরুণদের বিকাশে ও প্রকাশের সহায়ক নয়। অতঃএব মেধাবী তরুণ প্রজন্মকে স্বচ্ছ রাজনীতি ও যোগ্য কর্মসংস্থানে প্রবেশের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নের চরম শেকড়ে নিয়ে যেতে আহ্বান করছি।

 

লেখক : কলামিস্ট

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads