• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

শিশুর বেড়ে ওঠা এবং অভিভাবকের ভূমিকা

  • গাজী শরিফুল হাসান
  • প্রকাশিত ১৩ নভেম্বর ২০১৮

পরিবার হচ্ছে শিশুর প্রথম পাঠশালা। পরিবার শিশুর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সুস্থ জাতি গঠনে সুদূরপ্রসারী অবদান রাখে। পরিবারে শিশু শুধু বাবা-মায়ের নিবিড় সান্নিধ্যই পায় না, আচার-আচরণ, নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ সম্পর্কে শিশু পরিবার থেকে শিখতে পারে। শিশুর পারিবারিক ভিত্তি তার জীবনব্যাপী দিকনির্দেশনার নিয়ামক শক্তি। আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত সমাজের এই অকৃত্রিম প্রতিষ্ঠানটি দেশ ও একটি সমৃদ্ধ জাতি বিনির্মাণে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখে আসছে।

দেশ-কালের রকমভেদে পরিবারের ধরনও ভিন্ন হয়। প্রাচীনকাল আর বর্তমান যুগের সমাজব্যবস্থা একরকম নয়। ফলে পরিবার একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান হলেও নিয়তই পরিবর্তনশীল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রজন্মের ব্যবধান। বর্তমানে সারা বিশ্ব তোলপাড় তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান অগ্রযাত্রার বিষয়টি নিয়ে। আধুনিক পরিবর্তনশীল বিশ্ব যেভাবে গতিশীলতায় এগিয়ে যাচ্ছে, এ সময়ের প্রজন্মকেও একইভাবে তার অনুগামী হতে হবে। না হলে পিছিয়ে পড়া কিংবা প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। ফলে এ প্রজন্মের শিশুদের সেভাবে সজাগ এবং তীক্ষদৃষ্টি রাখতে হয়, যাতে বর্তমান নতুন ধারা থেকে কোনোভাবে তারা বিচ্যুত না হয়। আর এখানেই পরিবার এবং অভিভাবকের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

আজ থেকে ত্রিশ বছর আগের শৈশব-কৈশোর আর বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের এই সময়টি এখন আকাশপাতাল তফাৎ। অভিভাবক আর সন্তানদের মধ্যে ব্যবধানও অনেক। একান্নবর্তী পরিবারে একজন শিশু বেড়ে ওঠে সর্বজনীন আদর্শিক বোধ নিয়ে। এটাই শিশুর পারিবারিক এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের থেকে প্রাপ্ত দীক্ষা। এখনকার অভিভাবকরাও সেভাবেই বড় হয়েছেন। পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের চাওয়া-পাওয়াকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রবৃত্তি কখনো জাগেনি। আর শিক্ষার ব্যাপারটিও ছিল একেবারে পরিবারের কর্তা-কর্ত্রী যেভাবেই নির্ধারণ করতেন ঠিক সে রকম। পারিবারিক মূল্যবোধ নিয়ে একসময় সন্তানদের প্রবেশ করতে হতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তারও আগে ধর্মীয় শিক্ষাও পরিবার থেকেই দেওয়া হতো। পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা আর অভিভাবকদের সজাগ দৃষ্টিভঙ্গির ঘাটতিতে বর্তমান প্রজন্ম অপরাধ জগৎ কিংবা মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

শিক্ষাজীবনে প্রবেশ শিশুদের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। এ সময় সব থেকে বেশি নজর রাখতে হয় শিশুদের। মানসম্মত শিক্ষা ছাত্রছাত্রীদের জীবন গড়ার সত্যিকারের নির্ণায়ক। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। এমন একটি বাক্যের ভাব সম্প্রসারণ করতে করতেই ছাত্রজীবনের প্রাথমিক স্তর পার করতে হয়েছে। কোচিং শব্দটি তখন প্রায় অজানা। পারিবারিক আবহে শিশুরা শিক্ষার প্রাথমিক ভিত্তি তৈরি করে নিত। পরিবারে যিনি ইংরেজি এবং অঙ্ক ভালো জানতেন তিনিই শিশু-কিশোরদের গণিত এবং ইংরেজি ভাষার ভিত্তি গড়ে দিতেন। বাকি দায়িত্ব পালন করতেন স্কুলশিক্ষকরা। শিক্ষক অতি সাধারণ গৃহে রাখা হতো। যারা দুর্বল এবং কিছুটা অমনোযোগী শিক্ষক সেসব শিশুর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নিতেন। তারা যথার্থভাবেই ছেলেমেয়ের সযত্ন পরিচর্যায় লেখাপড়ার পর্বটি সামলিয়ে নিতেন। আর বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনোভাবেই তাদের দায়বদ্ধতা এড়িয়ে যেতেন না। স্কুলে এবং প্রায় প্রতিটি ঘরে পাঠ্যবই ছাড়াও জ্ঞানচর্চার হরেকরকম গ্রন্থ ছেলেমেয়েদের হাতের নাগালে থাকত। এখন শিশু-কিশোররা পরিবার থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না, সময়ই বা কোথায়? কোচিং আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত চাপের মুখে তাদের নাভিশ্বাস অবস্থা হয়, সেখানে ঠান্ডামাথায় অন্য কোনো শিক্ষা তাদের আগ্রহী করে না। প্রতিযোগিতার যুগে অভিভাবকরা নিজেরাও চান না তার সন্তান শিক্ষার্জনের পেছনে ছুটে বেড়ানো ছাড়া অন্য কিছু করুক। পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত জিপিএ-৫ বা গোল্ডেন পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তারা দিগ্বিদিক ছুটে বেড়াচ্ছে।

বাবা-মাকে শিক্ষার অসুস্থ প্রতিযোগিতা, কোচিং এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অশুভ কার্যক্রমের আবর্ত থেকে বেরিয়ে আসাটা অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষা কার্যক্রম একটি বিকাশমান ধারা। যা কোনো সীমাবদ্ধ আলয়ে অর্জন করা সম্ভব নয়। বর্তমানে যারা অভিভাবক তারা পিতামাতার সজাগ সান্নিধ্যে শুধু অবাধ এবং মুক্তচিন্তায় নিজেদের মেধাবিকাশই করেননি, জীবনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে স্থির থেকে সফলতার শীর্ষেও অবস্থান করছেন। শিক্ষা অর্জনের যথার্থ নিয়ম অনুসরণ করে শিশু-কিশোরদের মেধা ও মনন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিবাহিত করাই একমাত্র ব্রত হওয়া উচিত।

 

পিআইডি-শিশু ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক যোগাযোগ কার্যক্রম নিবন্ধ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads