• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

কলড্রপ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ কাম্য

  • শামীম শিকদার
  • প্রকাশিত ১৭ নভেম্বর ২০১৮

প্রযুক্তির সুদূরপ্রসারী বিস্তারের মাধ্যমে মানুষের দৈনন্দিন জীবন হয়ে উঠছে সহজ। সব ক্ষেত্রের পাশাপাশি নেটওয়ার্কিং ক্ষেত্রেও বেড়েছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। থ্রি জির পর ফোর জি-কে ছাড়িয়ে চলছে ‘ফাইভ জি’ বিস্তারের কাজ। ফোর জির কথা বলা হলেও জেলা শহরগুলোয় ডেটা সার্ভিস সেবা টু জি-তেই সীমাবদ্ধ। খোদ রাজধানীতেই ফোর জি সিমে আসছে টু জি সিগন্যাল। ইন্টারনেট সার্ভিসেও সন্তুষ্ট নন গ্রাহক। ফোর জির টাকা পরিশোধ করা হলেও দেওয়া হয় না কাঙ্ক্ষিত গতি। কারণে-অকারণে সার্ভিসের নামে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে সংযোগ। মাস শেষে খারাপ সেবায়ও ঠিকই টাকা গুনতে হচ্ছে গ্রাহকদের। গ্রাহক সেবাকেন্দ্রে অভিযোগ করেও মিলছে না কোনো প্রতিকার।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্যানুসারে, মোবাইল ফোনের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি। তাদের মধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৩১ লাখ। অন্যদিকে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মোবাইল ফোনের গ্রাহকরা। মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর বেপরোয়া মনোভাবে কলড্রপ যেমন বেড়েছে, পাশাপাশি মোবাইল ফোনের কিছু সার্ভিসে বিরক্ত হচ্ছেন গ্রাহক। বিটিআরসি থেকে পাঠানো এক নির্দেশনায় বলা আছে, ‘রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কোনো প্রচারণামূলক ফোন করা বা এসএমএস পাঠানো যাবে না।’ এই নির্দেশনার তোয়াক্কাই করছে না অপারেটরগুলো। সময়ে-অসময়ে গভীর রাতে পাঠানো মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রচারণামূলক এসএমএসের কারণে অতিষ্ঠ হচ্ছে মানুষ। বিটিআরসি মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কলড্রপের গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এর বেশি কলড্রপ হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ আছে। বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটরগুলো দাবি করেছে তাদের কলড্রপের হার ১ শতাংশের বেশি নয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার মতে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর হতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কলড্রপের মাত্রা ছিল ২২১ কোটি। যার মধ্যে গ্রামীণফোনের কলড্রপের সংখ্যা ১০৩ কোটি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রবির কলড্রপ ৭৬ কোটি, বাংলালিংকের কলড্রপ ৩৬ কোটি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের কলড্রপ ৬ কোটি।

২০১৬ সালের জুনে বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো মোবাইল সংযোগ হতে দিনে একাধিকবার কলড্রপ হলে এক মিনিট টকটাইম গ্রাহককে ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তা এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে হবে। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে এ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ছিল; কিন্তু তা আজো কার্যকর হয়নি। বিটিআরসির কাছে গ্রাহকের সর্বাধিক অভিযোগ কলড্রপ নিয়ে। এ ছাড়া ইন্টারনেটের গতি নিয়ে প্রতারণা, ইন্টারনেট ঠিকমতো কাজ না করলেও বিল কেটে রাখা, বিভিন্ন প্যাকেজ একবার চালু হওয়ার পর বন্ধ না হওয়া, এসএমএসের যন্ত্রণা, নেটওয়ার্ক না-থাকা, স্থানে স্থানে কাভারেজ না থাকা, বিভিন্ন প্যাকেজ বিল নিয়ে প্রতারণাসংক্রান্ত অনেক অভিযোগ রয়েছে- যা প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেই।

কলড্রপ প্রতিরোধে মোবাইল অপারেটরগুলোকে সচেতনতামূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। কলড্রপ নিয়ন্ত্রণে রাখার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা বজায় রাখতে হবে। এরপরও যদি কলড্রপ হয়, তবে গ্রাহকের ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক মিনিট টকটাইম ফিরিয়ে দিয়ে তা এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কলড্রপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করছি।

 

লেখক : সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads