• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

দেশের পরিবার পরিকল্পনা এবং কিছু কথা

  • রাজু দাস
  • প্রকাশিত ১৮ নভেম্বর ২০১৮

‘পরিকল্পিত পরিবার চাই’ আজ শুধু নথিপত্রে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য নয়; এ যেন আজ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশবিশেষ। আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের কথা চিন্তা করি, দেখা যায় গড়ে আমাদের দেশে প্রতিটি পরিবারে গড়ে লোকসংখ্যা ছিল ৮-৯ জন, যা বর্তমান সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ অর্থাৎ প্রতিটি পরিবারে বর্তমানে লোকসংখ্যা প্রায় ৪-৫ জন। এ পরিবর্তনকে বিবেচনা করে আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি, বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনায় অগ্রগতির পথে প্রবহমান এবং পরিকল্পিত পরিবার গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ সারা বিশ্বে মডেল হিসেবে স্বীকৃত। আমি বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় পরিবার পরিকল্পনা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাই অনেক সময়ই কাজের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার আমার সুযোগ হয়েছে। এরই সুবাদে একবার গিয়েছিলাম খাগড়াছড়িতে, যাকে বিশেষায়িত করা হয় পাহাড়ি এলাকা হিসেবে এবং ওই এলাকায় বেশিরভাগ বসতিই পাহাড়ের উপর। সাধারণত আমরা কাজ করার জন্য সকালে বের হই এবং কাজ শেষ করে ফিরতে ফিরতে বিকাল, অনেক ক্ষেত্রে সন্ধ্যা হয়।

তবু একদিন আমি বিকালে ফিরে অল্প সময় বিশ্রাম নেওয়ার পর সন্ধ্যা যখন ঘনিয়ে এলো, তখন ভাবলাম শহরটা ঘুরে আসি। যথারীতি বের হলাম এবং একটি রিকশা নিয়ে। যেতে যেতে কথা শুরু করলাম রিকশাচালকের সঙ্গে। একপর্যায়ে জিজ্ঞেস করলাম আপনার পরিবারে লোকসংখ্যা ক’জন? তখন তিনি খুব হাস্যোজ্জ্বল চেহারা করে বললেন, আল্লাহর রহমতে আমরা ৪ জন— আমার পরিবার, এক ছেলে ও এক মেয়ে। আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম- কেন, আপনার কি আর সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা নেই? তখন তিনি বললেন- স্যার, যত সন্তান বাড়বে পরিবারের খরচ তত বাড়বে। এর সঙ্গে সঙ্গে সংসারে অশান্তি ও ঝগড়া হবে। আমি দেখি, আমার আশপাশে যারা বসবাস করে, তাদের পরিবারে অশান্তি এবং ঝগড়া অনেক বেশি। তখন আমি বললাম, আপনার তো বয়স খুব বেশি হয়নি। বাকিটা শোনার আগেই তিনি বললেন— আমি আর সন্তান নেব না। আল্লাহর মাল যা পাইছি, তাকে যেন সুন্দরভাবে বড় করতে পারি এই দোয়া করবেন।

তখন মনে মনে নিজের কাজের জন্য নিজেকে খুব গর্বিত মনে হলো। কারণ এই পরিবর্তনের পেছনে আমারও অবদান আছে। বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনার অগ্রগতি অনেকটা আমাদের সবার সচেতনতা এবং কার্যক্রম প্রসারের ফল। বর্তমানে দেশে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহীতার হার গড়ে ৬২.৪ (বিডিএইচএস-২০১৪)। একে যদি ডিভিশন করে দেখি, তাহলে সর্বোচ্চ রংপুরে ৬৯.৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন সিলেটে ৪৭.৮ শতাংশ। এদের মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে প্রাইমারি শেষ করতে পারেনি গড়ে ৬৩.৯ শতাংশ। আমরা যদি পরিকল্পিত পরিবার গড়তে চাই, যা কি-না আমাদের জীবনকে সুখী ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারে তা হলো, সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। তখনই কেবল ডিসকন্টিনিউশন রেট কমে যাবে। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির সঠিক ব্যবহার জানা, দুটি সন্তানের মাঝখানে কতটুকু বিরতি প্রয়োজন— এসব বিষয়ে জানা ও সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের ক্ষেত্রে ডিসকন্টিনিউশন রেট কমে যাবে এবং তখন নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আমরা পৌঁছে যাব।

সচেতনভাবে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ, মানে স্বল্প আয়ের ভেতরেও আমরা আমাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে সক্ষম হব এবং তাদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগসহ যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতেও সক্ষম হব। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে এবং তথ্যের ওপর পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে— কোথায় কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। এতে আমাদের প্রতিটি পরিবার হবে ‘পরিকল্পিত পরিবার’ যা আমাদের জীবনকে সুখী ও সুন্দর করে তুলবে।

 

লেখক : প্রোগ্রাম অফিসার, এনজেন্ডারহেলথ বাংলাদেশ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads