• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

নির্বাচন, শিক্ষা ও শিক্ষার্থী

  • আজহার মাহমুদ
  • প্রকাশিত ০২ ডিসেম্বর ২০১৮

নির্বাচনের অতি সন্নিকটে দাঁড়িয়ে আমরা। আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের সঙ্গে আমাদের দেশের শিক্ষা খাতের একটা বিরাট সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন মানেই আমরা সবাই জানি মিছিল, মিটিং, সমাবেশ এসব। আর এসবের মাধ্যমেই শিক্ষা খাতের ওপর পড়ে বিরূপ প্রভাব। আপনি ভাবছেন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সবকিছুই তো খোলা। সবকিছুই তো চলছে আগের মতো। শিক্ষকরাও উপস্থিত থাকেন শ্রেণিকক্ষে। কিন্তু ছাত্ররা! তারা কোথায়? উত্তরটা সহজ। তারা এখন মিছিল, মিটিং এবং সমাবেশে। রাজনীতির মাঠে আজ ব্যবহার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষ, হামলা, মারামারি সবকিছুই যাচ্ছে তাদের ওপর দিয়ে। এভাবেই কিছু কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষা নামক বিষয়টির সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কেউ কেউ এসব মিছিল, মিটিং, সমাবেশে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণও করে। এটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুব একটা নতুন নয়। কিন্তু কেন? কেন এই শিক্ষার্থীরা রাজপথে থাকবে? তাদের তো ক্লাসে থাকার কথা!

শিক্ষাকে ধ্বংস করে আর শিক্ষার্থীদের নষ্ট করে কখনো দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রকৃত জ্ঞানার্জনের জন্য প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে থাকা। শ্রেণিতে শিক্ষার্থী না থাকলে শিক্ষার্থীদের ভেতরও শিক্ষা থাকবে না। প্রকৃতপক্ষে হারিয়ে যাবে শিক্ষা নামক বিষয়টি। আজকাল পাস করা খুব সহজ। যেখানে জিপিএ-৫ পেয়েও যারা ইংরেজিতে দুর্বল, সেখানে পাস করা ছেলেরা আর কতটুকু শিখবে। এই হলো শিক্ষার অবস্থা। এরাই মিটিং, মিছিল, সমাবেশে থাকে আবার জিপিএ-৫ পেয়েও যায়। এরাই পরীক্ষার আগে প্রশ্ন খোঁজে। সারা বছর নেতার পেছনে ঘুরে পরীক্ষার সময় এসে প্রশ্ন খোঁজে। এটাই এখনকার অধিকাংশ শিক্ষার্থীর চিত্র। এখন প্রতিটি কলেজ-স্কুলে রাজনীতির আস্তানা গড়ে উঠেছে। একেকটা প্রতিষ্ঠানে একেকটা ভাই। এসব ভাইয়ের লিড নিয়ে চলে একেকটা কলেজ।  তাদের কথা শিক্ষকদের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা যখন যেখানে যে সমাবেশে যেতে বলবে, সেখানেই হাজির হয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। আর শ্রেণিকক্ষ! সে তো ফাঁকা। বড়জোর গুটিকয়েক শিক্ষার্থী থাকে শ্রেণিতে। যে কোনো রাজনৈতিক ইস্যুতেই এমনটা হয়ে থাকে। আর নির্বাচনকালীন সময়টায় সবচেয়ে বেশি। এখন কলেজ ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক ময়দানে। কলেজের ক্যাম্পাসে চলে রাজনৈতিক স্লোগান আর শ্রেণিতে চলে পাঠদান। পাঠদানে বিঘ্ন ঘটলেও প্রতিবাদ করা যায় না অনেক ক্ষেত্রে। অনেক সময় রাজনৈতিক আলাপ থেকে সৃষ্টি হয় দাঙ্গা-হাঙ্গামা, এমনকি প্রতিপক্ষকে হুমকিও দেওয়া হয়। কখনো কখনো এটা হয়ে ওঠে মৃত্যুর একটি বার্তা।

স্মরণ করা যেতে পারে এদেশেরই একজন বুদ্ধিজীবীকে, যিনি বলেছিলেন— এদেশের শিক্ষাকে রাজনীতিমুক্ত করা না গেলেও রাজনীতিকে শিক্ষামুক্ত করা গেছে। নির্বাচনকালীন দেশে সহিংসতা এবং হামলা, বিক্ষোভসহ নানা ঘটনা ঘটে থাকে, যা বিগত দিন থেকে সবাই দেখে আসছেন। তাই পরিবারের অভিভাবকরাও অনেক সময় এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত থাকেন। পরীক্ষা ছাড়া এ সময়টায় বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এমনকি স্কুলেও যেতে দেন না বাবা-মায়েরা। কারণ তারা চান না সন্তানদের ঝুঁকির মধ্যে স্কুল-কলেজে পাঠাতে। রাস্তায় যখন গাড়িতে আগুন আর পুলিশের লাঠিচার্জ চলে, তখন স্বাভাবিকভাবে সবাই আতংকিত আর অস্বস্তিতে থাকে। সেরকম একটি নমুনা ১৪ নভেম্বর তো দেশের মানুষ দেখেছে। এতদিন যারা ভয়ে ছিল না, তারাও এখন নতুনভাবে ভয়ে রয়েছে। এই ভয়টাও বড় একটি বাধা আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে। যার কারণে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। এই ক্ষতি পরোক্ষভাবে দেশেরই হয়। একটা দেশে নির্বাচন হলে দেশের মানুষের হূদয়ে থাকে খুশির আমেজ। আর আমাদের দেশে হয় তার উল্টো। রাস্তায় আগুন, পুলিশের লাঠিচার্জ, গাড়ি ভাঙচুর দিয়ে আমাদের নির্বাচনের প্রচার শুরু হয়। কবে এই ন্যক্কারজনক পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পাবে, সেটাই আমাদের ভাবনার বিষয়। বাংলার মানুষ কবে ভোটের আর নির্বাচনের আমেজ নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারবে— এই প্রশ্ন বাংলার নেতাদের কাছে রইল। আর এই সমস্যাগুলোই বাধা হয়ে দাঁড়ায় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে আগে রক্ষা করুন। মনে রাখবেন, একদিন এই শিক্ষার্থীরাই আপনাদের অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। পরিশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই উক্তিটি বলতে চাই— আমলা নয়, মানুষ সৃষ্টি করুন।

 

লেখক : প্রাবন্ধিক

azharmahmud705@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads