• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

মতামত

অশুভ ও দুর্দশার প্রতীক শনি অনুভব

  • প্রকাশিত ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮

ইংরেজি নতুন বছরের দ্বারপ্রান্তে আমরা। আবার নির্বাচনী বছরও। এ অবস্থায় আমাদের স্বাভাবিক জীবনব্যবস্থায় ‘শনির দশা’ কোনো প্রভাব আছে কি নেই, তা একটু খতিয়ে দেখতে চাই। অনেক সময় আমরা খারাপ সময় বোঝাতে ‘শনির দশা’ বা ‘শনিতে ধরেছে’ এ জাতীয় শব্দ ব্যবহার করি।

শনির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অশুভ সব ঘটনা, তাই শনি বিবেচিত হয়ে

আসছে অশুভ এবং মানুষের জন্য অশান্তি, দুর্দশার প্রতীক হিসেবে। আসলে এই ‘শনি’ কী? কোথা থেকে এসেছে এই শব্দ? এসব প্রশ্নের একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায় গ্রিক পুরাণে।

গ্রিক পুরাণ মতে দেবতারা বিশ্বকে নয়, বিশ্বই সৃষ্টি করেছে। আগে ছিল আদি জনক ও জননী। তাদের সন্তানরা হচ্ছেন টাইটান আর দেবতারা হলেন তাদের নাতি-নাতনি। টাইটানরা বড় দেবতাকূল। ক্রোনস প্রথম প্রজন্মের সর্বকনিষ্ঠ টাইটান, পিতা ইউরেনাসকে হত্যা করে দেবরাজ্য দখল করে ফেলে। তারপর তার পদ রক্ষার জন্য একে একে নিজের সব সন্তানকে খেয়ে ফেলে, শুধুমাত্র জিউসকে ছাড়া। রোমানরা যখন গ্রিস দখল করে ক্রোনসের নাম বদল করে স্যাটার্ন রাখে। স্যাটার্ন থেকে শনি গ্রহ এবং শনিবারের নামকরণ করা হয়। পিতাকে ও নিজ সন্তানদের হত্যা এবং আরো অনেক রক্তপাত করার কারণে হয়তো এই

দেবতার নামের সঙ্গে সঙ্গে খারাপ বা নেতিবাচক একটি ধারণা আমাদের সামনে চলে আসে।

আরেকটি ধারণা পাওয়া যায় হিন্দু পুরাণে। স্কন্দ পুরাণ মতে শিপ্রা ও ক্ষাতা নদীর সংযোগস্থলে জন্মগ্রহণ করেই শনি ত্রিলোক আক্রমণ করেন। আতঙ্কিত ইন্দ্র ছুটলেন ব্রহ্মার কাছে। নিরূপায় ব্রহ্মা যান সূর্যের কাছে। এর আগেই শনি দ্বারা আক্রান্ত সূর্য ব্রহ্মাকেই উল্টো শনিকে সংযত করার অনুরোধ করলেন। এবার ব্রহ্মা গেলেন বিষ্ণুর কাছে। অসহায় বিষ্ণু এবার শিবের দ্বারে উপস্থিত। শিব শনিকে ডেকে অত্যাচার করতে বারণ করলেন। তখন শনি শিবকে তার জন্য খাদ্য, পানীয় ও বাসস্থানের উপায় করতে বললেন। তখন শিবই শনিকে মেষ থেকে মীন রাশিচক্রে সরব করে দিলেন। নিয়মমতো অষ্টম, চতুর্থ, দ্বিতীয়, দ্বাদশ জন্মরাশিতে শনি সর্বদাই ক্রুদ্ধ হবেন। কিন্তু তৃতীয়, ষষ্ঠ বা একাদশ স্থানে এলে তিনি উদার। পঞ্চম বা নবম স্থানে এলে তিনি উদাসীন। আর তাই এই শনির আরেক নাম শনৈশ্চর। সন্তুষ্ট হলে তিনি লোককে দেবেন রাজ্য, অসন্তুষ্ট হলে নেবেন লোকের প্রাণ। শনির দৃষ্টি যার দিকেই পড়বে, তিনি দেবতাই হোন বা দৈত্য, মানব, উপদেবতাই হোন, তার খবর আছে!

আবার সবচেয়ে মজার কাহিনীটা বলে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ! শনির জন্ম আদৌ কুদৃষ্টি নিয়ে না, বরং স্ত্রীর অভিশাপই তার কাল! একদিন শনির ধ্যানের সময়, তার স্ত্রী সুন্দর বেশভূষা করে এসে তার কাছে কামতৃপ্ততা প্রার্থনা করলেন। এদিকে ধ্যানমগ্ন শনি কেয়ার না করাতে অতৃপ্তকাম শনিপত্নী তখন শনিকে অভিশাপ দিলেন, ‘আমার দিকে ফিরেও

চাইলে না তুমি! যাও, অভিশাপ দিলাম, এরপর থেকে যার দিকেই চাইবে, সেই ভস্ম হয়ে যাবে!’

সেই থেকে শনি উগ্র দেবতা বলে কুখ্যাত। জ্যোতিষীদের মতে, শনির কুদৃষ্টি অশুভ ফল নিয়ে আসে। দেবদেবী-পুরাণ যতই অবিশ্বাস করেন, অবচেতন মনে অথবা না জেনে ঠিকই আপনি স্যাটার্ন বা শনি দেবতার ভয়ে অস্থির! আমরা এই শনি থেকে উদ্ধার পেতে চাই। আগামীর নতুন বছর শুভ বার্তা বয়ে আনুক বাংলার ঘরে ঘরে। আসন্ন নির্বাচন হয়ে উঠুক মহোৎসবের, বাঙালির বিজয়গাথা।

 

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালক, ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম

ভধৎরফমড়হলঃরসবং—মসধরষ.পড়স

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads