• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

মতামত

মাটিকে ভালোবাসুন মায়ের মতো

  • আমিনুল ইসলাম হুসাইনী
  • প্রকাশিত ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮

পাঁচ ডিসেম্বর ‘বিশ্ব মাটি দিবস’। কিন্তু দিবসটির কথা কজনেই জানেন আর কজনেই বা উদযাপন করেন? অথচ ১৪ ফেব্রুয়ারি নিয়ে আমরা কী ব্যস্তই না হয়ে পড়ি। আফসোস! আমরা ভালোবাসা দিবসের কথা মনে রাখি, কিন্তু ভালো থাকার এবং ভালো রাখার মাধ্যমটি ভুলে যাই। ভুলে যাই যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, সেই জায়গার কথা। অর্থাৎ মাটির কথা। এই মাটিই যে আমাদের শেষ আশ্রয় তাও ভুলে যাই বেমালুম। এই ভুলে যাওয়াকে স্মরণ করতে আসুন জেনে নিই মাটি কী এবং মাটির প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা কী?

মাটি বা মৃত্তিকা হলো পৃথিবীর উপরিভাগের নরম ও দানাদার আবরণের নাম। যার ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে আকাশছোঁয়া পাহাড়, বিস্তৃত সবুজের বাগান। তারই বুক চিরে বয়ে যায় ছলাৎ ছলাৎ স্রোতধারা। হেঁটে যায় মানুষ। আরো কত শত প্রাণী। রেখে যায় তাদের পদছাপ। কারণ তারা এই মাটিরই সন্তান। মাটির ওপরই আমাদের জীবনযাপন। বেলাশেষে আবার এই মাটির কোলেই মিলবে অনন্তকালের আশ্রয়।

পৃথিবীর অতি পবিত্র একটি বস্তু এই মাটি। এই মাটি দিয়েই তৈরি করা হয়েছে শ্রেষ্ঠ জীব মানুষকে। ইসলাম ধর্মমতে, মানুষ জাতির প্রথম পুরুষ হজরত আদম (আ.)-কে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়। সেই সূত্রে সব মানুষই মাটির তৈরি। হজরত আদম (আ.) জান্নাত থেকে নেমে এই মাটিতেই স্বপ্নের চারা বুনেছিলেন। মাটিতে বেঁধেছিলেন সুখের ঘর। জীবন ধারণের জন্য তার প্রধান কাজ ছিল কৃষিকাজ। মানে মাটির সঙ্গে মাখামাখি। এই মাখামাখি তিনি একা নন, করেছেন পৃথিবীতে আগত প্রত্যেক নবী রসুল বা মহামানবগণও। এমনকি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব হজরত মোহাম্মাদ (সা.)ও ছিলেন এই মাটিরই সেবক। আবার এই মাটি দিয়েই প্রতিমা গড়ে পুজো করা হয় সনাতন ধর্মে। তাই বলা যায় মাটিই খাঁটি। মাটি আমাদের মায়ের মতো।

এই যে এত এত কোদালের কোপ, লাঙলের ঘা, শাবলের গুঁতোয় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে মাটির দেহাঙ্গ, মাটি কি কোনোদিন এর প্রতিবাদ করেছে? টু শব্দটিও তো করে না। বরং আমাদের সব আঘাত নীরবে সহ্য করে যায়। আর মায়ের মতো মুখে তুলে দেয় নানান খাবার। তাই তো কোনো এক কবি বলে গেছেন, ‘যার বুকে তুই জন্ম নিলি তারে চিনলি না। মাটির মঙ্গল করো রে ভাই মাটি যে তোর মা।’

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, পথ্য, শিক্ষা সরঞ্জাম, পানি, বিদ্যুৎ, যানবাহনসহ মানুষের প্রয়োজনীয় উপাদানের কী না দিচ্ছে মাটি? নিঃস্বার্থভাবে সবকিছুরই জোগান দিয়ে যাচ্ছে এই উদার ভূমি। আর আমরা সেই মাটিকে দূষিত করে চলছি বিভিন্নভাবে। আমাদের কল-কারখানার বর্জ্য, বালাইনাশক, আগাছানাশক, হাসপাতালের বর্জ্য, ইটভাটার ছাইসহ নানান বর্জ্য মাটির বুকে ঢালছি। একটুও কি ভেবেছি? এতে মাটির কতটা কষ্ট হতে পারে! মাটিবিজ্ঞানীরা বলেছেন, গত কয়েক দশকে মাটিক্ষয়ের পরিমাণ দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে দূষিতও হচ্ছে আমাদের এই বৃহৎ প্রাকৃতিক সম্পদ। তাই জাতিসংঘের ৬৮তম সাধারণ সভায় ২০১৫ সালকে ‘আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যবান মাটি ছাড়া এ পৃথিবীতে মানবজীবন টেকসই হবে না।’

তাই মাটির স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা প্রতিটি মানুষেরই আবশ্যিক কর্তব্য। কেননা দূষিত মাটি দ্বারা মানুষেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়ে থাকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলেন, ‘মানুষ নানাভাবে দূষিত মাটির সংস্পর্শে আসার কারণে বিভিন্ন রোগে রোগাক্রান্ত হয়। উল্লেখযোগ্য রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যানসার, কিডনি ও লিভারের সমস্যা, ম্যালেরিয়া, কলেরা, আমাশয়, চর্ম ও পাকস্থলীর সংক্রমণ।

আসুন, মাটিকে মায়ের মতো ভালোবাসি। মাটি দূষণের প্রতিবাদ করি। প্রতিরোধ করি। পাশাপাশি মাটির উৎপাদিকা শক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করি। মাটির পাশাপাশি আরো যত প্রাকৃতিক সম্পদ আছে সবকিছুর যথাযথ ব্যবহার, পরিচর্যা ও সংরক্ষণ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করি। নতুবা পরিবেশ ভারসাম্য হারিয়ে মানব সভ্যতায় নিয়ে আসবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়।

 

লেখক : সম্পাদক, ষাণ্মাসিক চন্দ্রবিন্দু

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads