• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

বেগম রোকেয়া নারী জাগরণের পথিকৃৎ

  • এ এইচ এম ফিরোজ আলী
  • প্রকাশিত ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮

আজ ৯ ডিসেম্বর ‘বেগম রোকেয়া দিবস’। নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়াকে স্মরণ ও বরণ করার দিন। তার জ্ঞানের অগ্নিশিখায় অজ্ঞতার অন্ধকার দূরীভূত হয়ে বাঙালি মুসলিম নারীসমাজের জাগরণ ঘটেছে। বাঙালি মুসলিম জীবনে নারীর সমানাধিকার আন্দোলনের অগ্রপথিক ছিলেন তিনি। তার লেখনী, কর্ম, প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর কুসংস্কারাচ্ছন্ন বাঙালি নারীর জীবনকে অন্ধকারের দেয়াল ভেঙে শিক্ষা, গতিশীলতা এবং স্বতন্ত্র জীবনধারা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। মহীয়সী এই নারী বেগম রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর  রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে। তিনি ১৯৩২ সালের একই তারিখ তথা ৯ ডিসেম্বর মাত্র ৫২ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।

মা, স্বামী ও দুই কন্যাশিশুকে অতি অল্প বয়সে হারানোর হূদয়ভরা বেদনা নিয়ে তার জীবন অতিবাহিত হয়। কিন্তু তিনি দমে যাননি। নারী উন্নয়নে বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন আজ বাস্তব রূপ লাভ করেছে। উনবিংশ ও বিশ শতকে নারীর অবহেলিত, অবমাননাকর অন্ধকার জীবন থেকে মুক্তি দিতে নারীশিক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বেগম রোকেয়া স্বামীর নামে ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। তার সমস্ত উদ্যম শক্তি শ্রম ছিল স্কুলকে ঘিরে এবং দীর্ঘ চল্লিশ বছর নিজে এ স্কুলটি পরিচালনা করেছেন। তার বাবা জহির উদ্দিন আবু আলী হায়দার ছিলেন বড়মাপের একজন জমিদার। তিনি অত্যন্ত কঠিনভাবে পরিবারে নারী পর্দানশীলতা পছন্দ করতেন। বেগম রোকেয়াকে পবিত্র কোরআন পড়ার জন্য গৃহে একমাত্র আরবি শিক্ষক রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন। তবু বড় বোন করিমুন্নেছা সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে বেগম রোকেয়ার বাংলা শিক্ষা অব্যাহত রাখেন। বেগম রোকেয়া অনেক ভাষায় দক্ষ ছিলেন। কিন্তু তিনি বাংলা লিখতে ও পড়তে পছন্দ করতেন। মা রাহাতুন্নেছা চৌধুরী তার নাম রেখেছিলেন রোকেয়া খাতুন। কিন্তু বৈবাহিক সূত্রে নাম হয় বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। ১৮৯৮ সালে ১৮ বছর বয়সে উর্দুভাষী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট স্বামীর উৎসাহ, অনুপ্রেরণায় তার জ্ঞানার্জনের পথ অধিকতর সুগম হয়। সমাজের কুসংস্কার ও জড়তা দূর করার জন্য তিনি অসাধারণ পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও হূদয়গ্রাহী গদ্য রচনা করেন। বেগম রোকেয়া ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে ভারতবর্ষের সভ্যতা অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে এ অঞ্চলের কৃষকদের শোচনীয় অবস্থাও তুলে ধরেছিলেন।

বিশ্বে নারী-পুরুষের বৈষম্যের ইতিহাস হাজার বছরের। তবে প্রাচীনকাল থেকেই শত শত নারীর এমন বৈষম্য বিলোপ করে নারী অধিকার রক্ষার ইতিহাস একেবারে কম নয়। এমন নারী আছেন, যারা একাধারে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় নিয়োজিত ছিলেন। তাদের অবদানের জন্য ইতিহাসেও তারা অমর হয়ে আছেন। বৈদিক যুগ থেকেই নারী-পুরুষ পার্থক্য সূচিত হয়। এ সময় মন্দিরের পৌরোহিত্য এবং শাসনকার্যে প্রধানত পুরুষরা অংশগ্রহণ করত বলে তারা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়ে এবং নারীদের স্থান ছিল অন্তঃপুরে। তার পরও শত বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে সেই মধ্যযুগ থেকেই সাহিত্য-কলা-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে চরম উৎকর্ষতায় নারীরা তাদের প্রতিভা ছড়িয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় বেগম রোকেয়া আজ একটি প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশের নারী আন্দোলন ও নারীর ক্ষমতায়ন এখন অনেক অগ্রসরমাণ। বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রায় তিন দশক ধরে নারী নেতৃত্ব বিদ্যমান। প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, জজ ও ম্যাজিস্ট্রেটসহ সব ক্ষেত্রে এখন নারীর পদচারণা। ২০১৫ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমি ফোরামের দ্য গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে রাষ্ট্রক্ষমতায় নারীর অবস্থান বিবেচনায় বিশ্বের এক নম্বরে উঠে আসে বাংলাদেশের নাম। আজ থেকে শত বছর আগে বেগম রোকেয়া নারীকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, বর্তমান প্রজন্মের নারীদের হাত ধরে আজ তা পূরণ হতে চলেছে। লন্ডন থেকে প্রকাশিত বিশ্বনন্দিত অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব ন্যাশনাল বায়োগ্রাফিজে’র সর্বশেষ সংস্করণে বাংলাদেশের মহীয়সী নারী ও নারীশিক্ষার পথপ্রদর্শক বেগম রোকেয়ার নাম সংযোজিত হয়েছে। ‘বেগম রোকেয়া দিবস’-এ এই বিদূষী নারীর প্রতি জানাই আমাদের ভক্তিপূর্ণ শ্রদ্ধা।

 

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads