• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

ইশতেহারে যে কয়টি বিষয় থাকা জরুরি

  • মু. মিজানুর রহমান
  • প্রকাশিত ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

আসছে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী প্রস্তুতি শেষের দিকে। বাকি আছে ইশতেহার ঘোষণা, যার মাধ্যমে দলগুলো জয়ী হলে কী কী কাজ করবে এবং জনগণ কী উপকার পাবে, সেসবের একটি প্রাথমিক ধারণা উপস্থাপন করে থাকে। একটি জাতীয় নির্বাচনে বিভিন্ন ইশতেহার ভিন্ন ভিন্ন হলেও অনেক ক্ষেত্রে মৌলিক দিকগুলো একই রকম দেখা যায়।

মৌলিক চাহিদার একটি হলো শিক্ষা। শিক্ষা ছাড়া কোনো দেশের পক্ষে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব নয়। আমরা মনে করি শিক্ষা মানে হলো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা এবং এই পড়াশোনার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হলো একটি ভালো চাকরি। কিন্তু ভালো চাকরির কোনো সুস্পষ্ট ধারণা আমাদের নেই। কেউ হতে চায় প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা, আবার কেউ একটি সরকারি চাকরি পেলেই বেজায় খুশি। আবার কেউ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রত্যাশা করে থাকে। চাকরি লাভের আশায় শিক্ষা অর্জন করা অনুচিত বা কর্মমুখী শিক্ষাই সর্বোত্তম শিক্ষা, সে ব্যাপারে লাখ লাখ বেকারের দেশে নির্বাচনী ইশতেহারে এমন একটি সমস্যা সমাধানে বিশেষ চ্যালেঞ্জ থাকা জরুরি। যদিও কর্মমুখী শিক্ষার ছোঁয়া আমাদের সোনার দেশে ইতোমধ্যেই লেগেছে। পাশাপাশি আমাদের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী/প্রশিক্ষণার্থী-শিক্ষক/প্রশিক্ষকের প্রত্যাশিত অনুপাত ১২:১ প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের নীতিগত তাগিদগুলোর মধ্যে একটি হলো- মুখস্থবিদ্যার পরিবর্তে বিকশিত চিন্তাশক্তি, কল্পনাশক্তি ও অনুসন্ধিৎসু মননের অধিকারী হয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি স্তরে মানসম্পন্ন প্রান্তিক যোগ্যতা নিশ্চিত করা, যা বাস্তবায়নের জন্য মাধ্যমিক পর্যায়ে চালু হয় সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি। ধারণা করা হয়েছিল শিক্ষার্থীরা মুখস্থবিদ্যার বালাই থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু সে আর হলো কোথায়? শিক্ষাক্ষেত্রে সত্যিকারের সৃজনশীলতা আনয়ন এখন সময়ের দাবি।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুসারে ২০১৮ সালের মধ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:৩০ অর্জন করার কথা, কিন্তু বিভিন্ন কারণে সরকার এখানে ব্যর্থ হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অতি দ্রুতই অর্জন করা দরকার। সময় এসেছে মাধ্যমিক শিক্ষাও প্রাথমিকের মতো সরকারিকরণ করা। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনেক সময় বিভিন্ন শিক্ষাবিদ বা শিক্ষাকর্মীরা ‘সনদ’ নির্মাণের কারখানা বলে থাকেন। এমনকি বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুব ভালো অবস্থানে নেই। এ অবস্থার পরিবর্তন আনাও কি পরবর্তী সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হওয়ার কথা নয়? পরিকল্পনায় রয়েছে দেশের প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের। আপাত দৃষ্টিতে একে ইতিবাচক বলা যায়। তবে এই মুহূর্তে আমাদের স্বতন্ত্র দুটি বিশেষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজন। একটি ‘কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়’, অপরটি ‘শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়’।

এ ছাড়া বিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ের বাইরে চলমান কোচিং ব্যবসা থেকে শিক্ষাব্যবস্থাকে মুক্ত করার সময় এসেছে। মাধ্যমিক শিক্ষাকে প্রাথমিকের মতোই জাতীয়করণের সময় এসেছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডারে পরিবর্তন আনার সময় এসেছে। শিক্ষাবর্ষ ও বার্ষিক বিদ্যালয় কর্মদিবস প্রণয়নে কোনো নির্দিষ্ট দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে আলোচনা অন্যতম প্রধান বিষয়। প্রত্যেকটি দেশের আবহাওয়া বিবেচনায় নিয়ে বছরের একেক সময় থেকে একেক সময় পর্যন্ত শিক্ষাবর্ষ গণনা করা হয়। ষড়ঋতুর বাংলাদেশের আবহাওয়া বিবেচনায় নিলে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ধরে রাখার মতো তুলনামূলক উপযুক্ত সময়ে শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত থাকে বিভিন্ন রকম কো-কারিকুলার কার্যক্রমে, না হয় পরীক্ষা নিয়ে। আর যে সময় প্রকৃতিতে থাকে বিরতিহীন দাবদাহ, বৃষ্টি, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো বৈরী আবহাওয়া তখন ক্যালেন্ডারে থাকে বিরতিহীন শ্রেণি-কার্যক্রম। তাই তো শিক্ষাবর্ষ পঞ্জির প্রত্যাশিত পরিবর্তন আনতে হবে। প্রযুক্তির যুগে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সবগুলোকেই প্রযুক্তির আওতায় আনতে হবে। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে শিক্ষাক্ষেত্রে যেমন উন্নতি আসবে, তেমনি ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা সরকারি দলেরও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে।

 

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads