• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

ইশতেহার যেন হয় অঙ্গীকারপত্র

  • মোহাম্মদ আবু নোমান
  • প্রকাশিত ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

নির্বাচনে জনগণ শুধু দল ও মার্কা নয়; প্রার্থীর যোগ্যতা, দক্ষতা, সততা, অতীত কর্মকাণ্ড ও সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই ভোট দিয়ে থাকে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন-পরবর্তী রাষ্ট্র পরিচালনা কীভাবে করা হবে তার রূপরেখাই হলো নির্বাচনী ইশতেহার। এককথায়, ইশতেহার রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকারপত্র। রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ও ক্ষমতায় গেলে করণীয় ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার খসড়া তুলে ধরা হয় নির্বাচনী ইশতেহারে। রাজনৈতিক দলগুলোর বাস্তবভিত্তিক ও যুগোপযোগী নির্বাচনী ইশতেহার এবং তার পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রতিফলন ও বাস্তবায়নের অঙ্গীকার থাকতে হবে। প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সাধারণ মানুষের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার কথা মাথায় রাখা প্রয়োজন। নির্বাচনী ইশতেহারে সব দলই ভালো ভালো প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। কিন্তু নির্বাচনে জিতলে কোনো দলই ইশতেহার দেখে না, এটাই আমাদের দেশের বাস্তবতা। নির্বাচনে জিতে দল বা জোট যদি ইশতেহার বাস্তবায়ন করত, তাহলে ঠিকই সোনার বাংলা গড়ে উঠত। নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণায় যা বলা হয়, বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটে খুবই কম। এজন্য রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহার গতানুগতিক না করে জনকেন্দ্রিক, জনকল্যাণমুখী, ভিন্নধর্মী এবং চমক দেখানোর মতো বিষয়গুলো থাকা অপরিহার্য। 

ইশতেহারকে সর্বসাধারণের যাবতীয় মৌলিক অধিকারের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে। জনগণের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক জীবন ও জীবিকার সুন্দর, প্রচ্ছন্ন ও প্রশংসনীয় দিকনির্দেশনা ইশতেহারে উল্লেখ থাকাই কাম্য। মানুষের চাওয়া-পাওয়ার দিকে লক্ষ রেখেই নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করা সমীচীন। কোনো মন্ত্রী, এমপি, নেতা, আমলা যদি জনগণের সম্পদ হরণ, চুরিচামারি করে বা করতে সাহায্য করে অথবা অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে তাহলে তাকে দল, সংসদ ও প্রশাসন থেকে বহিষ্কার করে সংসদের পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে। সর্বোপরি সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের আলোকে সংসদ সদস্যদের ও প্রশাসনের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

প্রতিটি দলের ইশতেহারে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ও দেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি যেন থাকে। ঋণজালিয়াত, ঋণখেলাপি ও সব সেক্টরের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনগণের টাকা উদ্ধার করার অঙ্গীকার থাকতে হবে। দেশের সম্পদ অতীতে যারা বিদেশে পাচার করেছে বা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার অঙ্গীকার ইশতেহারে থাকতে হবে।

সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি দূর করতে হবে। দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। এ বিষয়ে সুদূরপ্রসারী ভাবনা ও পরিকল্পনা দরকার। আলাদা লেন করাসহ সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আরো বেশি বরাদ্দ রাখা উচিত। প্রত্যন্ত অঞ্চলের উন্নয়নের ব্যাপারে যথেষ্ট বরাদ্দ রাখতে হবে। জনগণের শহরমুখী হওয়া বন্ধ করে গ্রামে পরিবেশবান্ধব প্রকল্প করা, যানজট নিরসন করা, আইনশৃঙ্খলায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিজ্ঞা ইশতেহারে থাকতে হবে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বন্ধ ও দেশি সংস্কৃতির বিকাশে ভূমিকাসহ সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়া, মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। গ্রামীণ অবকাঠামো ও সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে এবং কৃষকের জন্য কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করতে হবে। নিত্যপণ্যের দর সাধারণের অনুকূলে রাখা, দারিদ্র্য দূর করা, বিশেষত বয়স্কদের রাষ্ট্রীয় খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা। ইশতেহারে রাজনৈতিক ভ্রাতৃত্ব গঠনের কৌশল ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কর্মপরিকল্পনা থাকা বর্তমান সময়ে খুবই জরুরি। প্রতিহিংসার রাজনীতি দেশের সর্বসাধারণ দেখতে চায় না। বিরোধী দলকে অন্যায়ভাবে দমন না করার প্রতিশ্রুতি, বিচারবহির্ভূত হত্যা, রাজনৈতিক হয়রানি ও খুন-গুম যেন না হয়- সে বিষয়ে ইশতেহারে ঘোষণা দরকার।

 

লেখক : সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads