• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ইশতেহারের পাতায় তরুণদের প্রাণের দাবি

প্রতিটি সংসদীয় আসনে তরুণ ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার

সংগৃহীত ছবি

মতামত

ইশতেহারের পাতায় তরুণদের প্রাণের দাবি

  • সাধন সরকার
  • প্রকাশিত ১২ ডিসেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রধান রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর ইশতেহার প্রণয়নের কাজ চলছে। আসন্ন নির্বাচনে তরুণ নতুন ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৩২ লাখ (যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে)। আর বয়স ৩৫ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করলে তরুণ ভোটারের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৪ কোটি। তথ্যমতে, দেশে এখন বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। পড়ালেখা করার সময় এবং পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পাওয়ার জন্য একজন বেকার তরুণকে চাকরিপ্রত্যাশী হিসেবে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। বছরের পর বছর ধরে তরুণরা এ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে, হচ্ছে। প্রতিটি সংসদীয় আসনে তরুণ ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ ভোটাররাই জয়-পরাজয়ের প্রধান নিয়ামক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে! তাই তরুণ প্রজন্মের ভোট পেতে হলে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোতে তরুণদের নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো বিবেচনায় নিতে হবে।

কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা : পড়ালেখা শেষ করা লাখ লাখ তরুণ চাকরি পাওয়ার প্রত্যাশায় থাকে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। প্রতিবছর পড়ালেখা শেষ করে প্রায় ২২ লাখ তরুণ চাকরির বাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এর অর্ধেক তরুণের চাকরি হয়। বাকিদের বেকারের খাতায় নাম লিখে বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকতে হয়। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। আবার ঢালাওভাবে গ্র্যাজুয়েট তৈরি না করে চাকরির বাজারে যে খাতের চাহিদা রয়েছে সে খাতের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সর্বোপরি তরুণরা পড়ালেখা শেষ করে যেন যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পায় সে নিশ্চয়তা দিতে হবে।

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি : দীর্ঘ ৬-৭ বছর ধরে তরুণ সমাজ চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করে আসছে। জাতীয় সংসদে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে বহুবার দাবিও উঠেছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার জনমত জরিপেও প্রায় ৯০ ভাগের বেশি তরুণ চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। বর্তমানে গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছর হয়েছে। আবার অবসরের বয়সসীমাও বেড়েছে। পৃথিবীর ১৬০টিরও অধিক দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০-এর অধিক। সময়ের যুক্তিসংগত ও যুগোপযোগী দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সবদিক বিবেচনা করে ইতোমধ্যে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ‘সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’। এ ব্যাপারে নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণ জনগোষ্ঠী রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর কাছে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার আশা করে।

ঘুষ-দুর্নীতিকে ‘না’ : গত কয়েকটি নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ইশতেহারেও ঘুষ-দুর্নীতিকে ‘না’ বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখছি এর বিপরীত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তরুণ সমাজের কাছে দেশের প্রধান শত্রু ঘুষ-দুর্নীতি। এ ধরনের অসৎ পন্থাকে তরুণ সমাজ মনেপ্রাণে ঘৃণা করে। দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। দেশে সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে দুর্নীতি কমবে। এ ব্যাপারে জাতীয় ঐক্য ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা জরুরি।

চাকরির আবেদন-ফি ও নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা : বেকার তরুণ চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদ হলো, চাকরির আবেদন-ফি। বিভিন্ন চাকরিতে আবেদন করতে একজন তরুণকে বেকার থাকা অবস্থায় অর্থের বিশাল একটা অঙ্ক গুনতে হয়। তরুণ জনগোষ্ঠী এ রাষ্ট্রেরই সম্পদ। তাই তরুণদের জন্য সব ধরনের চাকরিতে সামান্য আবেদন-ফি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। আবার চাকরির নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা তরুণ চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য অন্যতম একটি সমস্যা। বছরের পর বছর ধরে এ সমস্যা চলে আসছে। বিসিএস ক্যাডারের চাকরি থেকে শুরু করে  অন্যান্য শ্রেণির (দ্বিতীয়, তৃতীয়, চুতর্থ) চাকরির নিয়োগেও দীর্ঘসূত্রতা চলে আসছে। এটি চাকরিপ্রত্যাশী তরুণদের বিরক্তির কারণ হচ্ছে। তরুণরা নির্বাচনী ইশতেহারে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার চায়।

বিভাগীয় শহরে চাকরির পরীক্ষা : প্রায় সব চাকরির পরীক্ষা (বিসিএস ও প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা বাদে) ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ফলে সময় ও অর্থ খরচ করে ক্লান্তিকে সঙ্গী করে প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহে বেকার চাকরিপ্রত্যাশী লাখ লাখ তরুণকে রাজধানী ঢাকায় আসতে হয়। এ সমস্যার অবসান হওয়া জরুরি। চাকরিপ্রত্যাশীদের এ ধরনের ঝামেলা থেকে মুক্তি দিতে হবে।

বেকার ভাতা ও উদ্যোক্তা তৈরি : বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করেছে। তরুণরা নিজে নিজে বেকার বনে যায়নি। রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থা তরুণদের বেকার জনগোষ্ঠীতে পরিণত করতে বাধ্য করছে। পৃথিবীর উন্নত ও উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বেকার তরুণদের জন্য বেকার ভাতা চালু করতে হবে। বেকার তরুণদের প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে।

নিবন্ধিত শিক্ষকদের চাকরির নিশ্চয়তা : এনটিআরসিএ (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) কর্তৃপক্ষ থেকে সনদ নিয়ে লাখ লাখ চাকরিপ্রত্যাশী তরুণ বসে আছে। শিক্ষক নিয়োগে অযথা কালক্ষেপণ করে চলেছে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদ শূন্য থাকার কারণে পাঠদানসহ সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আবার যথাসময়ে নিয়োগ না হওয়ায় লাখ লাখ চাকরিপ্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষকরা হতাশায় দিন গুনছেন। নিয়োগ না দিয়ে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ শুধু নিবন্ধনধারীদের পরীক্ষা নিচ্ছে (এখন ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনে আবেদন চলছে)। এ বিষয়ে ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার থাকা জরুরি। 

তারুণ্যের শক্তি বা কর্মদক্ষতার ওপর ভর করে একটি দেশ উন্নতি লাভ করে। তাই তরুণদের কাজে লাগাতে হবে, স্বপ্ন দেখাতে হবে। এ দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। মোট ভোটারের প্রায় ২৫ শতাংশের বেশি তরুণ জনগোষ্ঠীই আসন্ন নির্বাচনে ভোটের ফল নির্ধারণে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হবে। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তরুণ জনগোষ্ঠীর চাওয়া-পাওয়াগুলোকে নির্বাচনী ইশতেহারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে এবং তা বাস্তবায়নেও উদ্যোগী হতে হবে।

লেখক : সাবেক ছাত্র, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

sadonsarker2005@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads