• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ইশতেহার হোক মাদক-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে

মাদক ও মাদকাসক্তি বর্তমানে এক জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে

সংগৃহীত ছবি

মতামত

ইশতেহার হোক মাদক-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে

  • প্রকাশিত ১২ ডিসেম্বর ২০১৮

মো. এমদাদ উল্যাহ

সারা বিশ্বে যে কোনো নির্বাচনের আগে ইশতেহার ঘোষণা একটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম হয় না। এদেশে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, জেলা পরিষদ, সিটি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা দলীয় বা ব্যক্তি পর্যায়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। এটি মূলত নির্বাচিত হওয়ার পর প্রার্থীরা কী করবেন, তার প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনের আগে ভোটারসহ সর্বমহল ইশতেহারকে অনুসরণ ও ক্ষমতায় থাকাকালীন কাজের মূল্যায়ন করেই ভোট দেন।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বহুল আলোচিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দলীয় সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনেক হিসাব-নিকাশ, আশা-নিরাশার জন্ম দিয়েছে। নির্বাচনে দুটি জোট প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে— ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও গণফোরাম নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ঐক্যফ্রন্টের মূল দল বিএনপি। শিক্ষিত ও সচেতন ভোটাররা নির্বাচনী ইশতেহারকে প্রাধান্য দিয়েই তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। এবারের ইশতেহার হোক মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। এমনই দাবি করেছেন সচেতন যুবসমাজ। কারণ মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সমাজের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে।

এর মধ্যে মাদক ও মাদকাসক্তি বর্তমানে এক জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। দেশের অধিকাংশ মাদকসেবী কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণী। অথচ তাদের ওপর দেশের শিক্ষা-দীক্ষা, উন্নতি, অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল। যুবকদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ মাদকাসক্তিতে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়েছে। তাই দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এ ভয়ঙ্কর অভিশাপ থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করা জরুরি। যুবকরা ছাড়াও কিছু আমলা ও রাজনৈতিক নেতা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ফেনসিডিল, মদ ও ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদকদ্রব্য নেশার সৃষ্টি করে। মাদক সুস্থ মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটায়, জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি লোপ করে, হজমশক্তি নষ্ট করে, খাদ্যস্পৃহা কমে যায়, চেহারা বিকৃত হয় এবং শারীরিক সক্ষমতা লোপ পায়।

এসব জানা সত্ত্বেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মাদক পাচার করে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করছে। যার প্রভাব আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর বর্তায়। মাদক ইসলামের দৃষ্টিতে যেমন হারাম, তেমনি রাষ্ট্রীয়ভাবেও তা নিষিদ্ধ। মাদকের কারণে দেশের ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর কেবল তামাকের কারণেই বিশ্বব্যাপী ১৬ হাজার ২০০ বিলিয়ন টাকা ক্ষতি হয়। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমান বিশ্বে সিগারেট কেনার পেছনে যে অর্থ ব্যয় করা হয়, এর দুই-তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করলে বিশ্বে প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যগত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা সম্ভব হবে।

দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে গত কয়েক মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ও নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে দুই শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো অনেকে। অনেক ব্যবসায়ী গা-ঢাকা দিয়েছে। কেউ কেউ মাদক ব্যবসা ছেড়ে বিদেশ চলে যায়। সীমান্ত এলাকায় কমেছে মাদক ব্যবসা। এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে সর্বমহল।

অপরদিকে রাজনৈতিক নেতাদের ইন্ধনে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকসেবী যুবসমাজ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে থাকে। বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের প্রধান উৎস হলো অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রাজনৈতিক গ্রুপ। তারা ক্ষুদ্র মাত্রায় ক্ষুদ্রঋণ পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে। যখনই অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে সন্ত্রাসীদের অর্থায়নের ঝুঁকির মুখে পড়েছে, তখনই শক্ত অবস্থান নিয়েছে দেশের আইনপ্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ইমাম ও ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে কাজ করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এজন্য যোগাযোগ রাখছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা নিচ্ছে তারা। আইনপ্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে দুর্বল হয়ে পড়েছে সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক।

এবারের নির্বাচনের আগে উভয় জোটের সহনশীল অবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আর সচেতন তরুণরা ইশতেহারে অন্যান্য বিষয়ের মতো মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কর্মসূচি চান। তারা বলছেন, মাদকের ছোবলের কারণে সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ে তরুণ-তরুণীরা। তাই এ দুটি বিষয়ে কঠোর হলেই দেশ উন্নতির সোপানে এগিয়ে যাবে। এখন দেখার পালা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কী করে?

লেখক : সাংবাদিক

emdad.online24@gmail.com

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads