• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
গৌরবময় বিজয় এবং আমাদের জাতিসত্তা

বাংলাদেশের গৌরবময় বিজয়ের ইতিহাস অনন্য

সংগৃহীত ছবি

মতামত

অভিমত

গৌরবময় বিজয় এবং আমাদের জাতিসত্তা

  • প্রকাশিত ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

আহমদ আবদুল্লাহ

বিশ্বের দেশে দেশে যত ইতিহাস আছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের গৌরবময় বিজয়ের ইতিহাস অনন্য। বিশ্বে আর দশটি দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন। শতাব্দীর পর শতাব্দীব্যাপী গৌরবোজ্জ্বল বাঙালি জাতি অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হিসেবে পরিচিহ্নিত হয়ে আছে। অন্যায়, অবিচার, শোষণ, নির্যাতন, কখনো মাথা পেতে নেয়নি এ জাতি। দুর্যোগ- দুর্বিপাকে হারায় না কখনো মনোবল। এক কথায় এদেশের বাঙালিরা অসীম সাহসী। তাই রণে ক্লান্ত না হয়ে রক্তাপ্লুত ইতিহাসের মাধ্যমে রচিত করেছে অনন্য ইতিহাস।

বাংলাদেশের গৌরবময় বিজয়ের ইতিহাস স্মরণকালের নৃশংস বর্বরতা ও হত্যাকাণ্ডে রঞ্জিত। এদেশের মানুষ প্রতিবাদী ও সংগ্রামী হয়ে ওঠে তখনই, যখন জাতীয় স্বার্থের মূলে আঘাত লাগে।

নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১’র ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ গৌরবোজ্জ্বল বিজয় লাভ করে। যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে আত্মসমর্পণ করে পাক হানাদার বাহিনী। এ যুদ্ধ ছিল পরস্পর মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে। পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের উভয় দেশের জনগণ মুসলিম। ধর্ম ও দর্শন ছিল এক ও অভিন্ন। কিন্তু ভাষা, বর্ণ ও সংস্কৃতি ছিল ভিন্ন। জাতিগত পরিচয়ও এক ছিল না। অনেকটা ব্রিটিশদের মতোই। ফলে সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য দেখা দেয়। এ বৈষম্যের ব্যবধান দিনে দিনে বেড়ে যায়। অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও এ দেশবাসী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তার প্রমাণ, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা লাভের এক মাসের মধ্যেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি ওঠে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানে সফরে এসে এক সমাবেশে বললেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।’ এরই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ও খাজা নাজিমুদ্দীন একই ভাষণ দেন। সব সমাবেশেই এ দেশবাসী না না বলে প্রতিবাদ জানায়।

প্রতিবাদ গড়ে তোলে সমগ্র জাতি। পরিণতিতে রাজপথ হয় রঞ্জিত। সরকার বাধ্য হয় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। মুসলিম লীগ নির্বাচনে পরাজিত হয়। এরপর বাংলাদেশে জনগণ সুসংগঠিত হয়। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। বিজয়ীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে শুরু হয় গভীর ষড়যন্ত্র। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মার্চ কালরাতে এ দেশের মানুষের ওপর শুরু হয় ইতিহাসের নৃশংস কর্মকাণ্ড। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধ। নয় মাস অবিরাম এ যুদ্ধ চলে। অবশেষে মুক্ত হয় বাংলার আকাশ।

জীবনে এক অনন্য স্মৃতিময় গৌরবময় দিন।

মাত্র নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে কোনো জাতির বিজয়ের ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।

দেশ ও জাতির প্রতি ভালোবাসা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি এবং জাতিসত্তার মৌল বৈশিষ্ট্য। দেশপ্রেমের আরেকটি দুর্বল দিক হলো, মাতৃভাষার প্রতি গভীর মমত্ববোধ। দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকার সুবাদেই আমরা বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। বিজয় এমনিতে আসে না। আন্দোলন ও সংগ্রাম করে তাকে ছিনিয়ে আনতে হয়। এতে রক্তঝরাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আজ আমরা গৌরবান্বিত। স্বাধীন দেশে স্বাধীন জাতিসত্তা ও স্বাতন্ত্র্যবোধ নিয়ে অস্তিত্ববান হিসেবে দাঁড়িয়ে আছি। স্বাধীন দেশের নিজস্ব জাতিসত্তার ভিত্তি যতদিন অক্ষুণ্ন থাকবে, ততদিন আমরা মেরুদণ্ডবান জনগোষ্ঠী। শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সবার গণনার ও শ্রদ্ধার পাত্র। সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এলে জাতিসত্তা নির্লিপ্ত থাকতে পারে না। এই স্বতন্ত্র জাতিসত্তা ও স্বাধীনতা লালন-পালন, বিকাশ ও নিরাপত্তাই সার্বভৌমের মর্মকথা। একে রক্ষার জন্য আমরা অতীতে রক্ত দিয়ে লড়েছি, ভবিষ্যতেও লড়ব। বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গীকার- রক্ত দিয়ে যে গৌরবোজ্জ্বল বিজয় ছিনিয়ে এনেছি, তা কখনো নস্যাৎ হতে দেব না।

লেখক : শিক্ষক

ahmadabdullah7860@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads