• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
উচ্চশিক্ষা এবং মেধাপাচার

বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে

সংগৃহীত ছবি

মতামত

মুক্তমত

উচ্চশিক্ষা এবং মেধাপাচার

  • অলোক আচার্য
  • প্রকাশিত ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর উচ্চশিক্ষা লাভের স্বপ্ন থাকে। ভবিষ্যতের সুন্দর কোনো স্বপ্ন তাদের চোখের সামনে দোল খায়। সেই সঙ্গে কোন পথে গেলে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে, তার পরিকল্পনা করে। উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ভালো কোনো চাকরি করার চেষ্টা তার ভেতর লালিত হয়। সেই উচ্চশিক্ষা নেওয়ার কাজটি যদি দেশের অভ্যন্তরেই অধিকাংশ শিক্ষার্থী করতে পারতো, তাহলে তা দেশের জন্য যেমন ভালো হতো একইরকমভাবে সেই সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীর জন্যও হতো মঙ্গলজনক। দেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বহুসংখ্যক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। যদিও তার অনেকগুলোরই মান নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। নিজস্ব ক্যাম্পাসসহ অনেক শর্তই পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ২০১৬ সালের হিসাবে উচ্চশিক্ষায় বছরে বিদেশে যাচ্ছে ৬০ হাজার শিক্ষার্থী। বর্তমানে এই সংখ্যা লক্ষাধিক। গত দুই বছরেই বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়ার হার বহুগুণে বেড়েছে। উচ্চশিক্ষার জন্য আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা বেছে নিচ্ছে মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। এছাড়া অন্যান্য পশ্চিমা দেশেও আমাদের শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে শুধু মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য গেছে ৩৪ হাজার ১৫৫ জন। এছাড়া কানাডায় ২ হাজার ২৮ জন, ভারতে ১ হাজার ৯৯ জন, জাপানে ৮১০ জন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪৫৫ জন উচ্চশিক্ষা শেষ করতে গেছেন। এই গবেষণা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী গেছেন মালয়েশিয়ায়। কারণ সেখানকার পরিবেশ বাংলাদেশের সঙ্গে কিছুটা সামঞ্জস্যপূর্ণ।

উক্ত তথ্যানুযায়ী, ৬০ হাজার শিক্ষার্থী বিদেশে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে গেছে ৬ হাজার কোটি টাকা। তথ্যটি যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তাহলে আাামদের দুশ্চিন্তার কারণ রয়েছে। বিদেশে ডিগ্রি নিতে যাওয়া কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হলো বিদেশে বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে এসে তার মেধা কাজে লাগাতে আগ্রহী কি-না সেটা নিয়ে। এমনিতেই মেধাপাচার বলে একটি বিষয় রয়েছে যা আমাদের চিন্তার কারণ। এমন নয় যে, সব মেধাই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে তবে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়ার হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মেধাপাচার হওয়ার পরিমাণটাও বেড়ে যায়। কোনো দেশের উন্নয়নে মূল সম্পদ হলো সেই দেশের মেধাবী সন্তানরা। তাদের ধরে রাখা তাই দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিদেশে পড়তে যাওয়ার আরো একটা কারণ হলো, যে পরিমাণ টাকা এখানে একটি ভালো মানের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খরচ করতে হয়, তার থেকে তুলনামূলকভাবে বিদেশে একই খরচ হয়। উপরন্তু সেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি পাওয়া হচ্ছে— শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচ্চতর গুণগত মান এবং পড়ালেখা সময়কালীন চাকরি করার সুযোগ লাভ। আগেই বলেছি, উচ্চশিক্ষা নেওয়া প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে। একটি সুন্দর জীবন গড়ার স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্ন পূরণের নিশ্চয়তায় একজন শিক্ষার্থী দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। সুতরাং একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের দেশের সম্পদ দেশে রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে। টিউশিন ফির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দিতে হবে। অন্য দেশ যদি তাদের মেধাবীদের ধরে রাখতে পারে তাহলে আমরা সেটা কেন পারব না। মেধা যদি দেশ থেকে চলে যায় তাহলে তা শুভ নয়। যত সম্পদই থাক না কেন, সেই সম্পদের সঠিক ব্যবহারের জন্য মেধাবী মানুষ প্রয়োজন। আর তাই উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেশেই পূরণ করে দেশেই তাদের মেধা, তাদের কাজ, দেশের জন্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সুযোগ সৃষ্টি করার এখনই উপযুক্ত সময়।

লেখক : সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads