• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

মতামত

ভোট একটি গণতান্ত্রিক অধিকার

  • নুরউদ্দিন আহসান
  • প্রকাশিত ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

নির্বাচন গণতন্ত্রের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যেখানে জনগণের রয়েছে সর্বোচ্চ প্রায়োগিক ক্ষমতা। নিজের ইচ্ছাশক্তিকে ইচ্ছামতো প্রকাশ করার উপায়, যা প্রকাশ ঘটে ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে। তবে ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। বিতর্কের মধ্যেও এবারের নির্বাচনে দু-রকম ব্যবস্থাই প্রয়োগ করা হচ্ছে। ইভিএম এবং ব্যালট পেপার। তবে গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে মানুষের কাছে আস্থার মাপকাঠিতে ব্যালট পেপারই এগিয়ে। তবু নির্বাচন কমিশন ইভিএম-কে কিছু কেন্দ্রে ভোট প্রয়োগের মাধ্যম হিসেবে রেখে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভোট প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হওয়া অতীব জরুরি। কিন্তু তা কতটুকু হবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। কেননা স্বচ্ছতার বিচারে একটা জায়গায় আপত্তি নিয়েই নির্বাচন হতে যাচ্ছে— তা হলো ইভিএম পদ্ধতি। বিরোধী দলের দাবি ভোট কারচুপির উত্তম যন্ত্রের নাম ইভিএম। এখন স্বচ্ছতার বিচারে এ যন্ত্রটি কতটুকু স্বচ্ছ, তা এখন দেখার অপেক্ষায়।

নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যার দ্বারা গণতান্ত্রিক উপায়ে কোনো দেশের রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা হস্তান্তর হয়। আর সেই নির্বাচন আমাদের সামনে কড়া নাড়ছে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। সেই দিনটি ঘিরে চলছে নানা রকম নির্বাচনী আয়োজন, প্রচার ও প্রচারণা। তবে এই প্রচার-প্রচারণা নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। অভিযোগগুলো সত্য-মিথ্যার বিচারে আমাদের কাছে তথ্য-প্রযুক্তির ফলে সুস্পষ্ট। ঘরে বসেই যার সচিত্র প্রতিবেদন আমারা মুহূর্তের মধ্যে পেয়ে যাচ্ছি। বিষয়গুলো লুকানোর কোনো সুযোগ নেই। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন সত্যের মাপকাঠিতে, তারা অবশ্যই একজন অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবে, সে যে দলেরই হোক না কেন। প্রার্থী তার নিজস্ব এলাকায় গণসংযোগ করবে। মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরবে। এটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু আমরা দেখতে পাই এ কাজেও এক পক্ষ অন্য পক্ষকে বাধা দিচ্ছে যা কাম্য নয়।

আমাদের মনে রাখা দরকার, গণতন্ত্র সরকারি ও বিরোধী দলের সমন্বয়নের ফসল। একদলীয় শাসনকে কখনো গণতন্ত্র বলে না। আর ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ারও কোনো মূল্য নেই। নির্বাচনী মাঠ উভয় দল দখলে রাখার চেষ্টা করবে এটাই স্বভাবিক। তবে কারো কাছে দাঙ্গা-হাঙ্গামা কাম্য হতে পারে না। তবু যদি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। এই সংস্থা যেন কারো পক্ষের হাতিয়ার না হয়ে দাঁড়ায়। এমনটাই প্রত্যাশা করে সাধারণ জনগণ। গত কয়েক দিনের কার্যকলাপ প্রত্যাশার আলোয় যেন অন্ধকার ঠেলে দিচ্ছে। তবু আশার আলো নিভে যাওয়ার নয়। জাতি এখনো আশা রাখে, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই নিরপেক্ষ আচরণ করবে।

মানুষ আজ একুশ শতকে বসবাস করছে। তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় জীবনমান অনেকটাই অগ্রগামী। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষ আজ খুবই সচেতন। কখন কী করতে হবে, কার কাছে কী চাইতে হবে, কাকে নির্বাচিত করতে হবে, কে দেশ ও দশের জন্য কাজ করবে— তা তারা ভালো করেই জানে। মানুষকে আজ ধোঁকা দেওয়া বড় দায়। সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিতে তারা মোটেও ভুল করবে না। ভোট একটা আমানতি জিনিস, তাই অপাত্রে তা দান করে মানুষ তাদের মূল্যবান ভোট নষ্ট করতে চায় না। যোগ্যতার বিচারে যিনি এগিয়ে, কেবল তাদেরকেই সামনের পথে চলতে সাহায্য করবে সাধারণ মানুষের এই ভোট। নির্বাচিত ব্যক্তির কাছে মানুষের চাওয়ার বেশি কিছু সাধারণত থাকে না। নির্বাচিত ব্যক্তি কয়টা বাড়িঘর করল, কত টাকা ব্যাংক ব্যালান্স করল তা জনগণের মাথাব্যথার কারণ নয়। তবে সুখে ও দুঃখে তাদের যেন পাশে পায় এটাই তাদের বড় চাওয়া। যা আমাদের নেতাদের মাঝে খুব কমই দেখা যায়। ক্ষমতার মসনদে বসে অতীতকে মানুষ ভুলে যায়। আর এই ভুলটা সবচেয়ে বেশি হয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। যেখানে এটা সব থেকে কম হওয়া দরকার ছিল। তাই নেতা নির্বাচনে জনগণ এমন অকৃতজ্ঞকে কখনোই নির্বাচিত করবে না। এসব নেতাদেরও মনে রাখা দরকার— অতীত বলে মানুষ তাদের ভুলে যায়নি। তাই সময় এসেছে যোগ্য নেতা নির্বাচনের। সাধারণ জনগণের সেই গণতান্ত্রিক অধিকার ‘ভোট’ যেন চুরি হয়ে না যায়, নির্বাচন কমিশনকে সেদিকেই দৃষ্টি দিতে হবে। তবেই জাতি পাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের অধিকার, আর বিশ্ববাসী দেখবে একটি গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।

 

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads